নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মাসের পালাক্রমিক সভাপতিরাষ্ট্র জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো সম্মেলনে সভাপত্বিত করেন। সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরহিস বলেন, কোরীয় উপদ্বীপ সমস্যা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ও ভয়ঙ্কর নিরাপত্তাসমস্যা। যদিও বিভিন্ন পক্ষ সংঘর্ষ এড়াতে ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, তথাপি পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যার কারণে ঝুঁকি রয়েই গেছে। সেজন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু ও কার্যকর যোগাযোগব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা উচিত। এ ব্যবস্থায় উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক ও বেসামরিক মহলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
মহাসচিব নিরাপত্তা পরিষদের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করা ও সেখানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এর জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।
সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেন, উত্তর কোরিয়া অব্যাহতভাবে পারমাণবিক অস্ত্র উন্নত করে চলেছে, যা যুক্তরাষ্ট্র তথা গোটা বিশ্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। আন্তর্জাতিক সমাজ এ ব্যাপারে একমত যে, কোনো অবস্থাতেই উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে দেওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজের নিরাপত্তা রক্ষায় সম্ভাব্য সবকিছু করবে। তিনি সার্বিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদের সংশ্লিষ্ট ধারা বাস্তবায়নের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
সম্মেলনে জাতিসংঘে উত্তর কোরিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি জা সং-নাম বলেন, তার দেশ নিজের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা সুরক্ষার স্বার্থেই পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু হুমকি মোকাবিলা করাই এর মূল লক্ষ্য।
তিনি বলেন, "নিরাপত্তা পরিষদ আমাদের উদ্বেগকে কখনও আমলে নেয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়গুলো বরাবরই উস্কানিমূলক ও আগ্রাসী। এ সব মহড়া কোরীয় উপদ্বীপ তথা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ।"
জাতিসংঘে চীনা স্থায়ী প্রতিনিধি উ হাই থাও সম্মেলনে বলেন, উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক সমাজের বিরোধিতা সত্ত্বেও পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। এদিকে, সংশ্লিষ্ট অন্য পক্ষগুলোও অব্যাহতভাবে যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে উপদ্বীপ পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি ঘটছে। এটা সকল পক্ষের জন্যই অকল্যাণকর।
তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের ধারা লঙ্ঘন করে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি অব্যাহত রাখায় চীন বরাবরই উত্তর কোরিয়ার বিরোধিতা করে আসছে। চীন বরাবরই কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণূ অস্ত্রমুক্ত করার নীতিতে অবিচল থেকেছে। চীন মনে করে, কোরীয় উপদ্বীপের শান্তি ও স্থিতিশীলতা সুরক্ষার স্বার্থে আলাপ-আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। আর এক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদকে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে যেতে হবে বলেও বেইজিং বিশ্বাস করে। (ছাই/আলিম)