প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফলপ্রসু কম্বোডিয়া সফর
  2017-12-10 19:34:19  cri

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের আমন্ত্রণে ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর সেদেশে সরকারি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এ সফরে দুদেশের মধ্যে একটি চুক্তি ও বিভিন্ন বিষয়ে ৯টি সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী হুনসেনের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও সেদেশের রাজার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। প্রবাসী বাংলাদেশি ও কম্বোডিয়ার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর ফলপ্রসু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

৩ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা থেকে যাত্রা করে স্থানীয় সময় দুপুর পৌনে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নমপেন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছান। বিমান বন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্ত্থনা জানানো হয়। পরে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে তাকে হোটেল সোফিটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সফরকালে ওই হোটেলেই অবস্থান করেন প্রধানমন্ত্রী। সফরের প্রথম দিনেই গণহত্যা জাদুঘর পরিদর্শন করেন শেখ হাসিনা। প্রয়াত রাজা নরোদম সিহানুকের মূর্তিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি। দেশটির স্বাধীনতা স্তম্ভেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাকে তাকে স্ট্যাটিক গার্ড অব অনার দেয় কম্বোডিয়ার সশস্ত্র বাহিনী।

৪ ডিসেম্বর সফরের দ্বিতীয় দিনে রাজধানী নমপেনে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের কারণে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কম্বোডিয়ার সহযোগিতায় চান প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সাম্প্রতিক কিছু আঞ্চলিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের বিষয়ে দুদেশের মধ্যে আলোচনা হয়। দুদেশই সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে একমত হয়। শেখ হাসিনা জানান রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি বিনষ্টের হুমকি সৃষ্টি করেছে। এর আগে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের প্রতিনিধিরা ৯টি সমঝোতাস্মারক ও একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তিটি হয়েছে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশের এফবিসিসিআই ও কম্বোডিয়ার চেম্বার অব কমার্সের মধ্যে। অন্যদিকে পর্যটন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, জয়েন্ট ট্রেড কাউন্সিল এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়াতে সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়।

একই দিন হোটেল সোফিটেলে কম্বোডিয়ার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কম্বোডিয়া চেম্বার অব কমার্স এর আয়োজন করে। সভায় শেখ হাসিনা বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় শরিক হতে কম্বোডিয়ার ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কম্বোডিয়ার রাজা নরোদম সিহামনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

৫ ডিসেম্বর কম্বোডিয়া সফরের শেষ দিন হোটেল সোফিটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও রাজকীয় দল ফুনসিনপেকের প্রেসিডেন্ট নরোদম রণরিধ। এ সময় এশিয়ার দেশগুলোর জনগণের স্বার্থে এ অঞ্চলের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা।

দুই নেতার সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রী অতিরিক্ত প্রেসসচিব এম মনজুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ পূর্ব-পশ্চিমের দেশগুলের মধ্যে সেতুবন্ধ হতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণে ঢাকার অদূরে একটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মাণের উদ্যোগের কথাও জানান তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলেোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রূপান্তর করার কথাও জানান তিনি।

কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে একটি সড়কের নাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে করায় কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। আর কম্বোডিয়ার প্রয়াত রাজা নরোদম সিহানুকের নামে ঢাকায় একটি রাস্তার নামকরণ হওয়ায় শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান নরোদম রণরিধ।

৫ ডিসেম্বরই তিন দিনের সফর শেষে দেশে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭ ডিসেম্বর গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করে তার এ সফরে ফলপ্রসু হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। কম্বোডিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর এ সফর এবং চুক্তি ও সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষরকে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল। এর মধ্য দিয়ে দুদেশের সম্পর্কের পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার হবে বলে মনে করেন তারা।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040