সংবাদ পর্যালোচনা প্রসঙ্গ: চীনের সাইহানপা কৃত্রিম বন ও খামারের জাতিসংঘের সর্বোচ্চ পরিবেশ-বিষয়ক পুরস্কার লাভ
  2017-12-06 15:44:44  cri

'চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য আর্থ' হলো জাতিসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ-বিষয়ক পুরস্কার। চলতি বছর জাতিসংঘের পরিবেশ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয় এ পুরস্কার বিতরণী। চীনের হ্যপেই প্রদেশের 'সাইহানপা কৃত্রিম বন ও খামার'সহ ৬টি সংস্থা ও ব্যক্তি এ পুরস্কার অর্জন করেন।

গতকাল (মঙ্গলবার) জাতিসংঘ পরিবেশ পরিকল্পনা ব্যুরো কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে ২০১৭ সালের 'চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য আর্থ' পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যারা পরিবেশ রক্ষা ও পরিবেশের অবস্থা উন্নত করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছে, এমন সংস্থা ও ব্যক্তিকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। চিলির প্রেসিডেন্ট মিশেল বাঁশলেই, যুক্তরাষ্ট্রের নাসার জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক প্রধান বিজ্ঞানী পল নিউম্যান, মার্কিন চলচ্চিত্র প্রযোজক জেফ ওরলৌস্কি, শেয়ারিং বাইক মোবাইক-এর উদ্যোক্তা হু ওয়েই ওয়েই, ইলিয়ন সম্পদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ওয়াং ওয়েন পিয়াও এবং হ্যপেই সাইহানপা বন ও খামারের নির্মানকারী ৬ ব্যক্তি ও সংস্থা এ পুরস্কার জয় করে।

৭৩ বছর বয়স্ক ছেন ইয়েন শিয়ান, ৫৩ বছর বয়স্ক সাইহানপা বন-খামারের পরিচালক লিউ হাই ইং এবং ৩৮ বছর বয়স্ক ইয়ু মি থাও সাইহানপা'র পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। ছেন ইয়ান শিয়ান বলেন, ৫৫ বছর আগে আমরা ৩৬৯ জন মানুষ ধুলাবালি ও অনুর্বর সাইহানপা এসেছিলাম। তখন আমাদের গড় বয়স ছিলো ২৪ বছর। ৫৫ বছর ধরে তিন প্রজন্মের মানুষ শুধু একটা কাজই করেছি; সেটি হচ্ছে গাছ লাগানো। আমাদের স্বপ্ন ছিলো অনুর্বর পাহাড়কে সবুজ পাহাড় বানানো। আজ আমরা নিজের হাতে এ অলৌকিক ঘটনার জন্ম দিয়েছি। এতে আমরা সত্যিই খুব গর্বিত!

১৯৬২ সালে ছেন ইয়ান শিয়েনসহ ৩৬৯ জন মানুষ সাইহানপা আসেন। তখন ছেন ইয়ান শিয়েনের বয়স ছিলো মাত্র ১৮ বছর। ৫৫ বছর ধরে তিন প্রজন্মের মানুষের পরিশ্রমের পর সাইহানপা এখন বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম বন ও খামারে পরিণত হয়েছে। এর আয়তন সিঙ্গাপুরের চেয়েও বড়।

জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব ও পরিবেশ পরিকল্পনা ব্যুরোর নির্বাহী প্রধান এরিক সোলহেইম বলেন, সাইহানপা হচ্ছে একটি অপূর্ব সাফল্য। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক জায়গায় বনের পুনর্গঠন খুব দরকার। সাইহানপা থেকে আমরা শিখতে পেরেছি যে তিন প্রজন্মের মানুষের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় এ মহান কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব। এটা সত্যিই এক অপূর্ব সাফল্য। তাদের এ গল্প সারা বিশ্বকে অনুপ্রেরণা দিতে পারে।

ব্রাজিলের পরিবেশ-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মার্সেলো ফুর্টাডো মনে করেন, একটি বন নির্মাণ করা গাছ লাগানোর চেয়ে অনেক বেশি কঠিন কাজ। সাইহানপা'র সবুজ সেনারা ৫৫ বছর ধরে এ অঞ্চলে বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম বন তৈরি করেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। তিনি বলেন, এতো বড় এলাকাকে বন-খামার বানানো এবং এ প্রক্রিয়ায় মানুষকে বন বানানোর জ্ঞান শেখানো, এটা একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান অভিজ্ঞতা। অন্য দেশও এখান থেকে লাভবান হতে পারে। বন নির্মাণের ক্ষেত্রে গাছ লাগানোর চেয়ে তাদের জীবিত রাখা আরো বেশি কঠিন। এটা তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য।

পরিবেশ রক্ষা সংস্থা 'প্রিন পিসে' কর্মরত ছেং ছিয়ান সাইহানপা গিয়েছিলেন। তিনি মনে করেন এ অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন বিশ্বের অন্যান্য স্থানের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নে শুধু একটি পদ্ধতি থাকে তাই নয়, প্রতিটি দেশের বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী একটি পদ্ধতি বের করতে হয়। সাইহানপা থেকে যেটা শেখার বিষয় সেটা হলো, ৫৫ বছর ধরে তারা শুধু বন পালন করেছেন এবং তারা স্থানীয় বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রেখে টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছেন। এটি একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

জাতিসংঘের পরিবেশ পরিকল্পনা ব্যুরোর নির্বাহী পরিচালক এরিক সোলহেইম বলেন, আগামী বছর আমি নিজেই সাইহানপা যাবো, নিজের চোখে এ অলৌকিক স্থান দেখবো। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীনের পক্ষ থেকে পরিবেশগত সভ্যতা নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি মনে করি এ প্রস্তাব সারা বিশ্বে প্রচার করা উচিত।

(স্বর্ণা/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040