রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র: বিশ্বের পারমাণবিক ক্লাবে বাংলাদেশ
  2017-12-03 19:15:01  cri

গত সপ্তাহে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য দুটি ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে জোরালো প্রচার পেয়েছে। এর একটি পাবনার রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজের উদ্বোধন। আর একই দিন বাংলাদেশ সফরে আসেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা নজর দেব এ দুটি বিষয়ের দিকে।

১৯৬১ সালে স্বাধীনতার আগে পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পদ্মা তীরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা হলেও তা বাস্তব রূপ পেতে লেগে গেছে অর্ধ শতাব্দিরও বেশি সময়। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনর রাশিয়া সফরের সময় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে কারিগরি গবেষণার জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই বছরেরই অক্টোবরে রূপপুরে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় আনবিক শক্তি করপোরেশন- রসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এএসই গ্রুপ অব কোম্পানিজ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।

গত ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুরে নিজ হাতে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথম ও সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে বিশ্বের পারমাণবিক ক্লাবের সদস্য হওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে নির্মাণ সম্পন্ন হলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগান দেবে জাতীয় গ্রিডে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে একটি চুল্লি চালু হলে যোগ হবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। আর ২০২৪ সালে দ্বিতীয় চুল্লিটি চালু হলে যোগ হবে আরো ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে অল্প খরচে বিদ্যুতের চাহিদা মিটানো যাবে। এটি দেশের অর্থনীতিতে বড় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এ বিষয়ে কারো কোনো সংশয় নেই। তবে, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রক্ষাণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে বিভিন্ন মহলে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ৫ স্তরের নিরাপত্তাবিশিষ্ট ভিভিইআর প্রযুক্তি থাকবে। ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় দুটি চুল্লিতে থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মীদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তাই এর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। দেশের মানুষেরও চাওয়া- পরমাণু দুর্ঘটনার ঝুঁকিমুক্ত থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরমাণু শক্তির যথাযথ ব্যবহার।

এদিকে, শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে ৩০ নভেম্বর তিনি দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। বিমান বন্দরে পোপকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। ঢাকায় তিন দিন ব্যস্ত সময় কাটান পোপ। প্রথম দিনই বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দেয়া নৈশভোজে যোগ দেন তিনি। সেখানে বক্তৃতায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূঁয়সী প্রশংসা করেন পোপ। এ সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

১ ডিসেম্বর সফরের দ্বিতীয় দিনে সকাল সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে মুক্ত উপাসনা ও যাজকদের অভিষেক অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করেন পোপ। হাজার হাজার খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী উপাসনায় যোগ দেন। অনুষ্ঠানে ১৬ জন ডিকনকে যাজক হিসেবে অভিষিক্ত করেন। বিকালে পোপ ফ্রান্সিস রমনা ক্যাথিড্রাল পরিদর্শন করেন। সেখান আর্চবিশপ হাউসের মাঠে আন্তধর্মীয় ও আন্তমাঙ্গলিক সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় পোপ বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রশংসা করেন। পারস্পরিক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধের মধ্য দিয়ে সব ধর্মের মানুষকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরামর্শ দেন পোপ। পরে সেখানে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।

একই দিন দুপুরে ভ্যাটিকান দূতাবাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পোপের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তারা শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছাস্মারক হিসেবে পোপকে একটি নৌকা উপহার দেন।

২ ডিসেম্বর সফরের তৃতীয় ও শেষ দিনে তেজগাঁওয়ে মাদার টেরিজা হাউস পরিদর্শন করেন। বিকালে নটরডেম কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন। তিনি মোবাইলে ব্যস্ত না থেকে মা-বাবা ও পরিবারের সঙ্গে বন্ধন দৃঢ় করতে এবং গুরুজন ও শিক্ষকদের নির্দেশনা মেনে চলতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান। ওইদিনই পোপ তার সফর শেষ করে ঢাকা ত্যাগ করেন।

পোপের তিন দিনের এ সফর বাংলাদেশে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতিকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্ট সকল মহলের।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040