আজকের টপিক: চীনের হাংচৌ শহরের চা সংস্কৃতিবিষয়ক ফোরাম
  2018-09-24 19:14:09  cri

 


'চেচিয়াং ব্যবসায়ীদের চা ফোরাম-২০১৭' মঙ্গলবার বিকেলে চীনের হাংচৌ শহরে শুরু হয়। চীন আন্তর্জাতিক চা সংস্কৃতিবিষয়ক গবেষণা সমিতি, চীনের চেচিয়াং প্রদেশের বৈদেশিক যোগাযোগ সমিতি ও চেচিয়াং দৈনিক পত্রিকা গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ ফোরাম আয়োজন করে।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার চেচিয়াং প্রদেশের বৃহত্তম ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের সম্মেলন অর্থাত্ বিশ্বের চতুর্থ চেচিয়াং ব্যবসায়ী সম্মেলন হাংচৌতে শুরু হবে।

সম্মেলনে চীনের চা সংস্কৃতি ও চেচিয়াং প্রদেশের উত্পাদিত শ্রেষ্ঠ চা-এর ধারণা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বাসকরা চেচিয়াং প্রদেশের ১ কোটি ২০ লাখ ব্যবসায়ীর কাছে তুলে ধরা হবে বলে ধারণা করা হয় ।

বর্তমানে স্পেন প্রবাসী চেচিয়াং প্রদেশের লিশুই'র ব্যবসায়ী ওয়াং সিয়াও লু বলেন, প্রবাসী চীনা ব্যবসায়ীর প্রতিনিধি হিসেবে আমি চেচিয়াং প্রদেশের চায়ের বিশেষ প্রাধান্য ও সুউজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখেছি, চেচিয়াং প্রদেশের চা বিশ্বে জনপ্রিয় করে তুলতে আমি অবদান রাখতে চাই।

চায়ের জন্মস্থান চীন। চা সংস্কৃতি গভীরভাবে চীনাদের জীবনের সঙ্গে মিশে রয়েছে এবং তা চীনা সংস্কৃতি উত্তরাধিকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশও বটে। প্রাচীনকালের রেশমপথ, 'চা ঘোড়া রাস্তা' ও 'চা জাহাজ পথের' মধ্য দিয়ে ইতিহাস ও দেশের সীমান্ত অতিক্রম করে চা বিশ্বের বিভিন্ন জনগণের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে।

চীনের চা সম্পর্কে কিছু তথ্য:

আসলে চীনে নানান ধরনের চা রয়েছে। প্রত্যেক প্রকার চায়ের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে এবং এর স্বাদও ভিন্ন।

'সবুজ চা' বা 'গ্রিন টি' চা গাছ থেকে টাটকা পাতা তুলে শুকনোকরাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি হয়। এই চা ক্যানসার প্রতিরোধ এবং ওজন কমাতে সহায়ক। গরম পানিতে সবুজ চায়ের পাতার রঙ অতি সুন্দর ও উজ্জ্বল দেখায়।

চীনের হোনান, কুইচৌ, চিয়াংসি, আনহুই ও চেচিয়াংসহ অনেক প্রদেশে সবুজ চা উত্পাদন করা হয়।

'লাল চা' বা 'ব্ল্যাক টি' প্রাচীনকালে দক্ষিণ চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের উই পাহাড়ের কৃষকরা তৈরি করেন। এখানকার লাল চায়ের আরেকটি নাম চেংশানসিয়াওচোং। ১৫৬৮ সালে প্রথমবারের মতো এ চা উত্পাদিত হয়। এ চায়ের ৪০০ বছরেরও বেশি ইতিহাস রয়েছে। চায়ের পাতা শুকনো করাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এ চা তৈরি করা হয়। গরম পানিতে এ চায়ের রঙ লাল দেখায়, তাই একে লাল চা বলে ডাকা হয়।

'উলুং চা' প্রাচীনকালের ছিং রাজবংশে ১৭২৫ সালে উত্পাদিত হয়, তা অর্ধ শুকনো প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়। উলুং চা চর্বি ও ওজন কমাতে বেশ কার্যকর। জাপানে এই চা অনেক জনপ্রিয়। এই চা দক্ষিণ চীনের ফুচিয়ান ও কুয়াংতুং প্রদেশ এবং তাইওয়ান প্রদেশে চাষ করা হয়। উলুং চা প্রধানত জাপান ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় রপ্তানি করা হয়।

'ফুল চা' সাধারণত শুকনো ফুল চায়ের সাথে মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এ ধরনের চায়ের মধ্যে জেসমিন চা সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত।

উত্তর চীনে জেসমিন ফুল ও সবুজ চা একসাথে ভেজে এ ফুল চা তৈরি করা হয়। বেইজিংয়ের অধিবাসীরা জেসমিন চা খেতে অনেক পছন্দ করেন।

তাছাড়া, কালো, সাদা ও হলুদ চাও উত্পাদিত হয় চীনের নানান অঞ্চলে।

চীনের ইউয়ুননান প্রদেশের 'পুয়ার চা' কালো চায়ের অন্যতম। চীনের চেচিয়াং প্রদেশ চা উত্পাদনের গুরুত্বপূর্ণ এলাকার অন্যতম। চা চাষের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। চা সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ। এর ধরণও অনেক বেশি এবং গুণগতমানও অতি চমত্কার।

চেচিয়াং প্রদেশে ১০ ধরনেরও বেশি শ্রেষ্ঠ চা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল সিহু লুংচিং, তাফো লুংচিং ও আনচি সাদা চা ইত্যাদি। সিহু লুংচিং সবুজ চায়ের অন্যতম, এই চা চেচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ শহরের লুংচিং পাহাড়ে উত্পাদিত হয়।

প্রাচীনকালের সুং রাজবংশে লুংচিং চায়ের চাষ শুরু হয় এবং মিং ও ছিং রাজবংশে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সিহু হ্রদের আশেপাশে লুংচিং পাহাড়ে এ চায়ের জন্ম। লুংচিং চায়ের রং টাটকা সবুজ। সুগন্ধে ভরা এই চায়ের স্বাদ অতি চমত্কার যা চীনের বিখ্যাত চায়ের অন্যতম। এই চা হাজার বছর ধরে চীনা কবি ও লেখকদের সবচেয়ে প্রিয় চা হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে আসছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর চীন সরকারের নেতৃবৃন্দ বহুবার সিহু হ্রদের লুংচিং চা এলাকা পরিদর্শন করেন। ১৯৯৬ সালে সিহু চা এলাকাকে চীনের লুংচিং চায়ের জন্মস্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘকাল ধরে চীন সরকারের বৈশিষ্ট্যময় উপহার হিসেবে বিদেশি বন্ধুদেরকে এই চা প্রদান করা হয়।

চায়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে চীনাদের জন্মস্থানের গন্ধ, আবেগ ও অনুভূতি। এবারের চা ফোরামের মধ্য দিয়ে চেচিয়াং প্রদেশের চা চীন ও বিশ্ব বাজারে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা করা হয়। (সুবর্ণা/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040