1127topic
|
নভেম্বর ২৭: 'বিশ্ব শিক্ষা ও নব্যতাপ্রবর্তনবিষয়ক শীর্ষসম্মেলন-২০১৭' সম্প্রতি কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের শতাধিক দেশের দু'হাজার প্রতিনিধি চলমান শিক্ষার সম্মুখীন চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবিলার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। চীনের শিক্ষাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও শিল্পপতিরা শীর্ষসম্মেলনে চীনের শিক্ষা উন্নয়নের অবস্থা তুলে ধরেন, বিশেষ করে ইন্টারনেট ও এআই প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে অভিন্ন শিক্ষাদানের পরিচয় তুলে ধরেন।
বিশ্ব শিক্ষা ও নব্যতাপ্রবর্তনবিষয়ক শীর্ষসম্মেলন ২০০৯ সালে প্রথম শুরু হয়। প্রতি দু'বছরে একবার করে এ সম্মেলন আয়োজিত হয়। এতে শিক্ষা খাতে নব্যতাপ্রবর্তনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়। এবারের শীর্ষসম্মেলনের প্রতিপাদ্য হল 'যৌথ সহাবস্থান ও নব্যতাপ্রবর্তন: সহাবস্থান ও সহযোগিতা'।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ার নারী সাংবাদিক ইয়াল্দা হাকিম বলেন, শিক্ষা শান্তি ও উন্নয়ন বাস্তবায়ন এবং বিশ্বকে পরিবর্তন করতে সক্ষম।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও আফ্রিকার শতাধিক দেশের দু'হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সবাই ভিন্ন ধরনের শিক্ষার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। সম্মেলনে শিক্ষা কিভাবে শান্তি ও উন্নয়ন বাস্তবায়ন এবং বিশ্বকে পরিবর্তন করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এবারের সম্মেলনে 'বিশ্ব শিক্ষা ও নব্যতাপ্রবর্তন পুরস্কার-২০১৭' বিতরণ করা হয়। আফ্রিকার ঘানার প্যাট্রিক আওয়াহ্ এ পুরস্কার লাভ করেন। কারণ ঘানা ও আফ্রিকার শিক্ষার উন্নয়নে তিনি কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ঘানায় বেসরকারি ও অলাভজনক আশেসি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন তিনি এবং গত ১০ বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। উচ্চ শিক্ষায় তাঁর নব্যতাপ্রবর্তন শুধু ছাত্রছাত্রীদের জন্যই কল্যাণ বয়ে এনেছে তা নয়, বরং তা ঘানাসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি প্রশিক্ষণে সহায়ক হয়েছে।
নতুন প্রজন্মের নেতৃবৃন্দ ও শিল্পপতিদের নব্যতাপ্রবর্তনের প্রশিক্ষণ আফ্রিকার ভবিষ্যতে সুগভীর প্রভাব ফেলবে। এ সম্পর্কে আওয়াহ্ মনে করেন, শিক্ষা বিশেষ করে উচ্চপর্যায়ের শিক্ষার গুরুত্ব হল জ্ঞানের প্রতি উত্সাহিত করা। নব্যতাপ্রবর্তনের মধ্য দিয়ে সমাজের অব্যাহত উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও সত্য অনুসন্ধানে উত্সাহ দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
এবার শীর্ষসম্মেলনে চীনের শিক্ষা মহলের বিশেষজ্ঞ ও শিল্পপতিরা উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন সাব ফোরামের আলোচনায় চীনের শিক্ষার চর্চা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন তাঁরা।
সম্প্রতি চীনের ইন্টারনেট শিক্ষা ও অভিন্ন শিক্ষাদান পদ্ধতি দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে,তা বিশ্বকে আকর্ষণ করে। চীনের ইন্টারনেট অনলাইন শিক্ষাদান প্ল্যাটফর্ম হুচিয়াং ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফু ছাই সিয়া বলেন, বর্তমানে তাদের ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৬ কোটিরও বেশি, এ সংখ্যা বিশ্বের শীর্ষস্থানে দাঁড়িয়েছে। তাকে এবার এ সম্মেলনে শিক্ষা পুরস্কারের জুরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সম্মেলনে তিনি তাদের 'মিউচুয়াল প্লাস' পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
অনলাইন শিক্ষা ও অভিন্ন শিক্ষা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে দূরবর্তী এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের আরো বেশি জ্ঞান অর্জনের সুযোগ প্রদান করা হয়েছে। এ পরিকল্পনা চালু করার দুই বছরের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ছাত্রছাত্রী তা থেকে উপকৃত হয়েছে।
চীনের দূরবর্তী এলাকায় স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০০ জনের চেয়ে কম ইন্টারনেটে শিক্ষা গ্রহণের এমন স্কুলের পরিমাণ ২০০০টিরও বেশি।
স্কুলে শিক্ষকের অভাবের কারণে চীনা ভাষা ও গণিত ছাড়া অন্যান্য ক্লাস চালু করা সম্ভব হয় নি। তবে অনলাইন শিক্ষাদানের মাধ্যমে এসব বিষয়ে লেখাপড়া করতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। ভবিষ্যতে ইন্টারনেট প্রযুক্তি উন্নয়নের সাথে অনলাইন শিক্ষাদান পরিকল্পনা আরো বেশি জায়গায় ব্যবহার করা যাবে বলে ধারণা করা হয়।
হুগো পুরস্কার বিজয়ী চীনের লেখিকা হাও চিং ফাং এবার শীর্ষসম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। দীর্ঘকাল ধরে তিনি জনকল্যাণমূলক টেকসই উন্নয়নের পদ্ধতি অনুসন্ধান করছেন এবং পর্যটন আয়ের মধ্য দিয়ে জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে অর্থ সহায়তা করছেন। দূরবর্তী এলাকার ছাত্রছাত্রীদের আইপ্যাডসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি প্রদান করা হবে বলে আশা করেন তিনি। কারণ প্যাড থাকলে অনলাইন শিক্ষাদানের অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে ছাত্রছাত্রীরা।
(সুবর্ণা/টুটুল)