রোহিঙ্গা সমস্যাসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করতে শনিবার বাংলাদেশ সফরে আসেন ওয়াং ই। ওই দিন দুপুরেই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হলেও তারা কেউ সংবাদ মাধ্যমে কথা বলেননি। সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ওয়াং ই।
শেখ হাসিনা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম সম্মেলন সাফল্যের সঙ্গে শেষ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ওয়াং ই'র মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংকে অভিনন্দন জানান। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থনের জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান। আগামী দিনেও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
জবাবে ওয়াং ই চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান। চীন ও বাংলাদেশকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে ওয়াং ই বলেন, আগামীতে দুদেশের কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক আরো জোরদার হবে।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম জানান, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সংলাপে সহযোগিতা করতে আগ্রহী চীন। ওয়াং ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে আরো বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা- যা বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে চীনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। ওয়াং ই বলেন, চীন সংলাপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পক্ষপাতি। এ বিষয়ে বেইজিং সহযোগিতা করতে পারে। সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার যে সমঝোতায় পৌঁছেছে তাকেও স্বাগত জানান চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত দুদেশের সমস্যা সমাধানের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গা সংকটকে চীন যে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে তা প্রমাণিত হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই'র বাংলাদেশ সফরে আসা এবং সংকট সমাধানে সহযোগিতা করার ইচ্ছা প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এর আগে গতমাসে চীনের বিশেষ দূত সান কোসিয়াংও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করেন।
এদিকে, ওয়াং ই'র পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন জাপান, জার্মানী, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্ট্রম, জার্মানীর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল ও ইইউ পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি। রোববার তারা কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। এর আগে ঢাকা পৌঁছে কক্সবাজার শরণার্থ শিবির সরজমিন পরিদর্শন করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিষয়ে অবহিত হন। দুই মার্কিন সিনেটর জেফ মার্কলে ও রিচার্ড ডাবিনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধিদলটি শরণার্থী পরিস্থিতি তুলে ধরবেন মার্কিন কংগ্রেসে।
বাংলাদেশ সফর শেষে এরা সবাই মিয়ানমার যাবেন এবং সেখানে আসেম সম্মেলনে যোগ দেবেন। ওই সম্মেলনেও রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্ব পাবে। চীনসহ একসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ চারটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বাংলাদেশ সফরে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন আরো জোরালো হবে বলে আশা করছে সরকার।
কারণ মিয়ানমার চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং দেশটির ওপর বেইজিংয়ের প্রভাব রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বৃহৎশক্তিগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের উচিত বেইজিংকে এ ক্ষেত্রে আরো বেশি সংশ্লিষ্ট করা। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই'র সফরের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে উচ্চ পর্যায়ে যে যোগাযোগ শুরু হয়েছে তা অব্যাহত রাখারও পরামর্শ তাদের।
ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।