সংবাদ পর্যালোচনা প্রসঙ্গ: বেইজিংয়ে চীন ও পানামার প্রেসিডেন্টদ্বয়ের বৈঠক
  2017-11-18 17:46:19  cri
চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে পানামার সফররত প্রেসিডেন্ট হুয়ান কার্লোস ভারেলার সঙ্গে বেইজিংয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হন। গত জুন মাসে দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম পানামার প্রেসিডেন্ট চীন সফরে এলেন। পানামার প্রেসিডেন্টকে চীনে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানানো হয়।

চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বৈঠকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ভারেলার সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন সূচনা। চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে ইচ্ছুক। তিনি তার দেশের সাথে পানামার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে প্রেসিডেন্ট ভারেলার ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং চীন সফরে আসায় তাকে ধন্যবাদ জানান। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীন ও পানামার জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আদানপ্রদানের ইতিহাস ১৬০ বছরের। তবে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পর দু'দেশ 'এক চীন নীতি'র ভিত্তিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে। এতে দু'দেশের কয়েক প্রজন্মের মানুষের স্বপ্ন পুরণ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, 'এখন আমরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দু'দেশের জাতীয় সঙ্গীত শুনছি, যা দু'দেশের জনগণের কাছে কাঙ্ক্ষিত। এর মাধ্যমে পৃথিবীর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণী পৌঁছেছে যে, দু'দেশের সম্পর্কের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে।'

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, চীন-পানামা কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য রয়েছে। দু'দেশই আন্তর্জাতিক নিয়মের আওতায় সহযোগিতার মাধ্যমে অভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়ন ও জনগণের জীবনমান উন্নত করতে চায়। চীন-পানামা সম্পর্ক দেরিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু চীন এ সম্পর্ক দ্রুত উন্নত করতে চায়।

সি চিন পিং আরও বলেন, চীন ও পানামার উচিত পারস্পরিক সম্মান ও আস্থার ভিত্তিতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দু'পক্ষের উচিত দ্রুত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের কাঠামো নির্ধারণ করা এবং দু'দেশের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে যোগাযোগ বাড়িয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার করতে সচেষ্ট হওয়া।

বৈঠকে পানামার প্রেসিডেন্ট প্রায় দশ বছর আগে তার শাংহাই সফরের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, তখনই দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চিন্তা তার মাথায় জাগে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চীনের সাথে পানামার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা তাই তার কাছে স্বপ্ন পূরণের মতো। তিনি বলেন, "আমরা 'এক চীন নীতি' অনুসরণ করি এবং দু'দেশের জনগণও কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে সমর্থন করে। ভবিষ্যতে পানামার অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন ও পানামার জনগণের জীবনমান উন্নয়নে চীন সহায়তা দেবে বলেও আমাদের বিশ্বাস। দু'দেশের দুই ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে আদানপ্রদান ও সহযোগিতা নিয়েও আমরা আশাবাদী।"

উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আগেও দু'দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। গত বছর দু'দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬৪০ কোটি মার্কিন ডলার। তা ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পর চীন হচ্ছে পানামা খালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী। জুন মাসে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দু'দেশের মধ্যে দশটির বেশি সহযোগিতামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজও শুরু হয়েছে।

বৈঠকের পর দুই প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে দু'দেশের মধ্যে ১৯টি সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে অর্থ-বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, রেলপথ, বেসামরিক বিমান চালাচল ও পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে। তা ছাড়া, এর মধ্যে 'এক অঞ্চল, এক পথ' সহযোগিতা এবং অবাধ বাণিজ্যসংক্রান্ত খসড়া সমঝোতা স্মারকও রয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাতিন আমেরিকা ও ক্যারেবীয় বিভাগের পরিচালক চাও পেন থাং জানান, চীন-পানামা কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হচ্ছে দু'দেশের অভিন্ন রাজনৈতিক লক্ষ্য। এ সম্পর্কের কোনো অর্থনৈতিক পূর্বশর্ত নেই। এখন পানামার সাথে কল্যাণমূলক খাতে সহযোগিতা চালাতে চীন অধিক আগ্রহী। দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার ভিত্তিতে পানামা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করবে, চীন সেসব উদ্যোগে সহায়তা দেবে।

পানামার প্রেসিডেন্ট ৭ দিনব্যাপী সফরে শাংহাইয়ে শিল্পপতিদের ফোরাম এবং পানামা পর্যটন উত্সবসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। (স্বর্ণা/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040