তিব্বতে কঠিন পরিবেশে কাজ করে সাফল্য পাচ্ছে চীনা তরুণ-তরুণীরা
  2017-10-27 19:31:16  cri

বন্ধুরা, আজকাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর অনেকের জন্যই চাকরি পাওয়া কঠিন। ২০১৭ সালে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে বের হয়েছেন প্রায় ৮০ লাখ শিক্ষার্থী। চীনে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পূর্ব চীনে কাজের খোঁজে যান। তাদের অনেকেই জানেন না যে, পশ্চিম চীনে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি।

তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এ ধরনের একটি স্থান। সমস্যা হচ্ছে, তিব্বত একটি মালভূমি; এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত। ফলে এখানকার পরিবেশ বাইরের লোকজনের জন্য খানিকটা কঠিন। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে এমন কয়েকজন তরুণ-তরুণীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো, যারা তিব্বতে কাজ করছেন।

তিব্বতের কোনো কোনো এলাকায় স্থানীয় কর্মকর্তাদের বয়স খুবই কম। এরা এসেছেন চীনের বিভিন্ন স্থান থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর তারা তিব্বতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। বলা বাহুল্য, এ সিদ্ধান্ত সহজ ছিল না।

তেনজিন ফুন্টসোক ১৯৮৭ সালে লাসায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিছুয়ান প্রদেশের ছেংদু শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিব্বতে এসে একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। গত বছর তিনি শিগাটসে শহরের রেনবু জেলার খাংস্যিয়ং থানার গণকংগ্রেসের চেয়ারম্যান ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কমিটির উপ-সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন।

খাংস্যিয়ং থানার উত্তর দিকে ইয়ালুচাংবু নদী, সমুদ্রতল থেকে যার উচ্চতা ৪১০০ মিটার। তিব্বত-নেপাল সড়ক খাংস্যিয়ং জেলার মধ্য দিয়ে গেছে। থানাটির আয়তন বড়, কিন্তু লোকসংখ্যা খুবই কম। ২৮৬ বর্গকিলোমিটারের ভূমিতে মাত্র ৪ হাজার বাসিন্দা। থানাটির অর্থনীতিতে কৃষির আধিপত্য। প্রধান উত্পাদিত পণ্য হচ্ছে বার্লি, গম, ডাল ইত্যাদি। এখানে পশুপালনও একটি বড় পেশা।

তেনজিন ফুন্টসোক বলেন, খাংস্যিয়ংকে দারিদ্র্যমুক্ত করে উন্নত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। থানার ৬ শতাধিক পরিবার আছে। পরিবারপিছু বার্ষিক গড় আয় ৩৩১১ ইউয়ান আরএমবি। এর মধ্যে ২১৬টি পরিবার হল দরিদ্র। তাই দারিদ্র্যবিমোচন এখানকার সবচেয়ে বড় কাজ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য এখানে নয়টি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ২০১৮ সালের মধ্যে সকল জেলাকে দারিদ্র্যমুক্ত করা। আমাদের থানায় এখনও ২১৬টি দরিদ্র পরিবার রয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যেই এসব পরিবারকে দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি আমরা।"

তেনজিন ফুন্টসোক জানান, ২০১৩ সাল থেকে তাদের এলাকায় সমবায় আন্দোলন শুরু হয়। এর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় ব্যাপকভাবে।

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যেই এলাকার এক লক্ষ নাগরিকের জীবনমান উন্নত হয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে এলাকার অর্থনীতিও সার্বিকভাবে উন্নত হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমার কাজের মধ্যে আছে নাগরিকদের আদর্শিক শিক্ষা দেওয়া এবং তাদের মধ্যে সৃষ্ট মতভেদ দূর করা। কাজটা কঠিন। আমাদের বিশেষ সমন্বয় কমিটি রয়েছে। অভিজ্ঞ পুরোনো কমরেডদের কাছ থেকে আমরা অনেককিছু শিখছি।"

তিব্বতি নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা এলাকার কর্মকর্তাদের জন্য বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে তিব্বতি জাতির তেনজিন ফুন্টসোক সুবিধা ভোগ করেন। কিন্তু খাংস্যিয়ং থানার ডেপুটি প্রধান ফেং মেই'র জন্য এটি একটি কঠিন কাজ। ফেং মেই ১৯৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছংছিংয়ের মানুষ। তিনি ২০১১ সালে শানসি প্রদেশের তিব্বতি জাতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিব্বতের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাস করেন। তিনি বলেন, কার্যকর যোগাযোগ হল একটি বিজ্ঞান। এর মধ্য দিয়ে তিনি অনেককিছু শিখেছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমার বড় লাভ এই যে, এখানে এসে আমি মানবিক যোগাযোগ শিখেছি। শুরুর দিকে ভাষাগত কারণে তিব্বতি নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা আমার জন্য কঠিন ছিল। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে সে সমস্যা কাটিয়ে উঠেছি। আমি এখন স্থানীয়দের মতো করে চিন্তা করতে পারি, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করতে পারি। এখন আমি তাঁদের সঙ্গে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে পারি।"

ফেং মেই জানান, তিনি চার বছর স্থানীয় গ্রামাঞ্চলে কাজ করেছেন। এ চার বছরে তিনি স্থানীয় নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শিখেছেন। ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল আলাদা আলাদা গ্রুপে এক লক্ষাধিক ক্যাডারকে স্থানীয় বিভিন্ন গ্রামে পাঠায়। তাঁরা গ্রামবাসীদেরকে সাহায্য করেন। এ সম্পর্কে ফেং মেই বলেন, "শুরুতে তাঁরা আমাকে নেতা মনে করে দূরে দূরে থাকতো। কিন্তু আমি বরাবরই তাদেরকে সম্মান করতাম। ধীরে ধীরে তাঁরা আমাকে বিশ্বাস করা শুরু করে।"

ফেং মেই বলেন, এ পর্যায়ের কাজ অনেক জটিল ও কষ্টকর। কিন্তু এসব কাজের মাধ্যমে বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। তিনি বলেন, "আমি অন্য সহকর্মীর কাছ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগের কৌশল শিখেছি। গতরাতেই আমরা ত্রাণকাজে অংশ নেই। আমরা দুর্গত অঞ্চলে পৌঁছানোর পর কৃষিজমি রক্ষায় কিছু কাজ করি। স্থানীয় বাসিন্দারা এ কাজের অনেক প্রশংসা করেন।"

এলাকার মূল কাজ উন্নয়ন। আর ছোট কাজগুলোর মধ্যে আছে স্থানীয়দের মধ্যে মতভেদ দূর করা। এসব কাজ তরুণ কর্মকর্তাদের জন্য সহজ নয়। কিন্তু এই কঠিন কাজ তারা করে যাচ্ছেন। ফলে এলাকা প্রতিবছরই উন্নত হচ্ছে। তরুণ কর্মকর্তাদের কাছে এটি অহংকার করার মতো। খাংস্যিয়ং থানার প্রধান চাং ছাও খাই থানার সবচেয়ে বয়স্ক কর্মকর্তা। তিনি ১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শানতুং প্রদেশের তিব্বতি জাতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বলেন, খাংসিয়ং থানা প্রতিবছরই উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "খাংসিয়ং থানায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বিশেষ করে নতুন সেতু, সড়ক ইত্যাদি নির্মিত হয়েছে।"

চাং ছাও খাই জানান, নতুন সেতুর নাম 'সুখ সেতু'। আগে সেতু না-থাকায় পাহাড় অঞ্চল থেকে খাংসিয়ং থানা পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটারের দূরত্ব অতিক্রম করতে দুই ঘন্টারও বেশি সময় লাগতো। এখন লাগে মাত্র ২০ মিনিট।

২০১২ সালের পর থানাটির অবকাঠামোর মান অনেক উন্নত হয়েছে। স্থানীয় সরকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের ওপরও গুরুত্ব দেয়। এর ফলে বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমেছে।

চাং ছাও খাই আরও জানালেন, আগামীতে থানাটিতে পরিবেশ-অর্থনীতি উন্নত করার পরিকল্পনা আছে। তিনি বলেন, "আমারা পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই। আমরা পর্যটন খাতের উন্নয়নে ৪৯ লাখ ইউয়ান বরাদ্দ করেছি।"

লক্ষ্য আছে, পরিকল্পনা আছে, নির্দেশনা আছে। এখানকার দায়িত্বশীল তরুণ ক্যাডাররা কর্মক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতিও করছেন। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, অঞ্চলটির অর্থনীতিতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা ২৪ বছর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি বছর তিব্বতের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১১ শতাংশ। প্রথম তিন মাসে তিব্বতের পাঁচটি অর্থনীতির সূচক বৃদ্ধির হার গোটা চীনে প্রথম স্থানে রয়েছে। জিডিপি ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

চীনের কেন্দ্রীয় সরকার তরুণ-তরুণীদের পশ্চিমাঞ্চলে গিয়ে কাজ করতে উত্সাহ দিচ্ছে। তরুণ-তরুণীরাও সাড়া দিচ্ছেন। এতে, পশ্চিমাঞ্চল যেমন উপকৃত হচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থানও হচ্ছে।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040