সিপিসি'র ১৯তম জাতীয় কংগ্রেস: বাংলাদেশ ও বাদবাকি বিশ্বের নজরে
  2017-10-22 18:35:30  cri

চীনের কমিউনস্টি পার্টি-সিপিসি'র ১৯তম জাতীয় কংগ্রেস চলছে পেইচিংয়ে। ১৮ অক্টোবর শুরু হওয়া কংগ্রেসে ভাষণ দেন সিপিসির সাধারণ সম্পাদক ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি গত ৫ বছরে সিপিসির নেতৃত্বে চীনের বিভিন্ন অগ্রগতির চিত্র এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা তুলে ধরেন। সিপিসির জাতীয় কংগ্রেস চীনের পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতি, কূটনীতির ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে। উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের ওপরও রয়েছে এর প্রভাব। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা নজর দেব এ বিষয়টির প্রতি।

পেইচিংয়ের মহাগণভবনে সিপিসির ১৯তম কংগ্রেসে সারাদেশ থেকে ২ হাজার ৩৫৪ জন প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। প্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রায় তিন ঘন্টার ভাষণে সি চিন পিং বলেন, চীনের সমাজতন্ত্র নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। সিপিসির সব কর্মতৎপরতার কেন্দ্রে রয়েছে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, সবদিক থেকে ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা এবং চীনা জাতির পুনরুজ্জীবন। সি চিন পিং তার ভাষণে চীনের অর্থনীতি, সমাজনীতি ও কূটনীতির ওপর আলোকপাত করেন।

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, গত ৫ বছরে বিশ্ব অর্থনীতি দুর্বল ছিল। কিন্তু সিপিসি উন্নয়নের নতুন ধারণা প্রয়োগ করায় চীন অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। গত ৫ বছরে চীনের ৫৪ ট্রিলিয়ন থেকে ৮০ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে পৌঁছেছে। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে চীনে অবদান ৩০ শতাংশ। এ সময়ে ৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে। দারিদ্র্য ১০ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। ৮ কোটি মানুষ শহরবাসী হয়েছে।

সি চিন পিং তার ভাষণে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ২০২০ সালের মধ্যে চীনে সার্বিকভাবে স্বচ্ছল সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। আর ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনা সমাজতন্ত্রের আধুনিকায়ন সম্পন্ন হবে। জনগণের জীবনমান উন্নতর হবে; অর্থনীতি, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও পরিবেশ খাতে আরো উন্নতি হবে। দুর্নীতি কমবে এবং গণতন্ত্র ও অধিকতর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

সিপিসি সাধারণ সম্পাদক জানান, চীনের নিজস্ব ধারার সমাজতন্ত্রের মতোই তার নিজস্ব ধারার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বৃহৎরাষ্ট্রীয় কূটনীতি সার্বিকভাবে এগিয়েছে। এক অঞ্চল একপথ উদ্যোগ ও এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক চীনের অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য। ভবিষ্যৎ বিশ্বে চীনের মর্যাদা ও প্রভাব আরো বাড়বে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন সি চিন পিং।

সিপিসির জাতীয় কংগ্রেস ও সি চিন পিংয়ের ভাষণ চীনের পাশাপাশি গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও এ খবর ফলাও প্রচার পেয়েছে । ১৯ অক্টোবরের দেশের অন্যতম প্রধান জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর বিদেশ পাতার প্রধান সংবাদের শিরোনাম ছিল- 'কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে শি চিন পিংয়ের ভাষণ- নতুন যুগে চীনা সমাজতন্ত্র'। একই পাতায় ওয়াশিংটন পোস্টের সংবাদ বিশ্লেষণ ছাপা হয় যার শিরোনাম-'চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন- বিশ্ব কেন তাকিয়ে'। দেশের প্রাচীনতম দৈনিক ইত্তেফাক প্রথম পাতায় সি চিন পিংয়ে ছবিসহ খবর ছেপেছে- শিরোনাম: বিশ্বের অর্থনৈতিক সামরিক কেন্দ্রবিন্দু হবে চীন-কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে সি চিন পিং।

দেশের অন্যতম প্রধান ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার গুরুত্ব দিয়ে সিপিসির কংগ্রেসে সি চিন পিংয়ের ভাষণের খবর ছেপেছে- শিরোনাম: সি হেরাল্ডস নিউ এরা অফ চাইনিজ পাওয়ার। এ ছাড়া বেতার ও টেলিভিশন গুরুত্ব দিয়ে সিপিসি কংগ্রেসের খবর প্রচার করছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মনে করেন, চীনের জাতীয় কংগ্রেস ও সি চিন পিংয়ের ভাষণ সঙ্গত কারণেই চীনাদের পাশাপাশি বিশ্ববাসী ও বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষের নজর কেড়েছে। তিনি বলেন, প্রথমত এই কংগ্রেস চীনের বিশাল জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ জীবন, উন্নত সংস্কৃতি, সমাজিক পরিবেশ এবং সকল নাগরিকের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক বিকাশ নিশ্চিতের দিকনির্দেশনা দেবে।

দ্বিতীয়ত রাষ্ট্র হিসেবে গোটা বিশ্ব চীনের ভূমিকার দিকে তাকিয়ে থাকে কারণ অর্থনীতি, কূটনীতি, ভূ-রাজনীতি প্রতিটি বিষয়ে চীনের প্রভাব উত্তরোত্তর বাড়ছে। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয়ের বাইরে একমাত্র চীনই বিশ্বকে নিয়ে আসতে পারে বলে মনে করেন সিপিবি সভাপতি।

তৃতীয়ত বাংলাদেশের কাছেও চীনের জাতীয় কংগ্রেস ও সি চিন পিংয়ের ভাষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ মনে করে উন্নয়ন সহযোগী চীনের অভাবিত অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন এবং সামাজিক সাফল্যগুলো বাংলাদেশকেও এগিয়ে যাবার শক্তি যোগাবে।

মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040