আজকের টপিক: সিপিসি'র উনবিংশ জাতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধনীতে সি চিন পিংয়ের ভাষণ নিয়ে আলোচনা
  2017-10-18 15:59:28  cri

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসি'র উনবিংশ জাতীয় কংগ্রেস আজ (বুধবার) বেইজিংয়ের মহাগণভবনে শুরু হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সিপিসি'র অষ্টাদশ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সকলের কাছে কর্ম প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

সিপিসি'র ৮ কোটি ৯০ লাখ সদস্য আছে। সারা দেশ থেকে ২ হাজার ৩০৭ জন প্রতিনিধি এবারের উনবিংশ জাতীয় কংগ্রেসে অংশ নিচ্ছেন। বিশেষভাবে আমন্ত্রিতসহ এবারের কংগ্রেসে মোট প্রতিনিধির সংখ্যা ২৩৫৪ জন। তাঁরা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে প্রেসিডেন্ট সি'র ভাষণ শুনেছেন। প্রেসিডেন্ট সি তাঁর প্রায় ৩ ঘণ্টার টানা ভাষণে চমত্কারভাবে বিগত পাঁচ বছরে সিপিসি'র অর্জিত গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য তুলে ধরেছেন।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, বিগত পাঁচ বছর বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল ছিল। তারপরও সিপিসি'র নতুন উন্নয়ন ধারণা প্রয়োগ করায় চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এই সময়ে চীনের জিডিপি'র মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ৩০ শতাংশ অবদান রেখেছে। আর্থিক কাঠামো সুবিন্যাসের পাশাপাশি ডিজিটাল অর্থনীতিসহ নবোদিত শিল্প বিকশিত হয়েছে। কৃষির আধুনিকায়ন স্থিতিশীলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। থিয়ানকুং ধারাবাহিক মহাকাশযান, 'চিয়াও লুং' মানুষবাহী সামুদ্রিক উত্তপ্ত বরফ উত্তোলন অভিযান, বিশ্বের দীর্ঘতম রেডিও টেলিস্কোপ 'থিয়ান ইয়ান', 'উ খুং' অনুসন্ধান উপগ্রহ, বিশ্বের প্রথম কোয়ান্টাম স্যাটেলাইট উত্ক্ষেপন এবং যাত্রীবাহী বৃহত্ আকৃতির বিমানসহ ধারাবাহিক প্রযুক্তিগত পণ্য তৈরি করেছে চীন।

দক্ষিণ চীন সাগর দ্বীপপুঞ্জে নির্মাণকাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য, পুঁজি বিনিয়োগ ও বৈদেশিক মুদ্রা শক্তিশালী করাসহ অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে।

সিপিসি'র ঊনবিংশ জাতীয় কংগ্রেসে কর্ম প্রতিবেদন সংক্রান্ত ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বিগত পাঁচ বছরে চীনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বৃহৎ রাষ্ট্রীয় কূটনীতি সার্বিকভাবে এগিয়েছে। এতে সর্বমুখী, বহু পর্যায় এবং ত্রিমাত্রিক কূটনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ যৌথভাবে কার্যকর করা, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের কার্যক্রম এবং বিশ্বের সব মানুষের জন্য অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলা প্রভৃতি।

চীনের আন্তর্জাতিক প্রভাব বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নে নতুন গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথাও বলেছেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের এবারের ভাষণে ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনা সমাজতন্ত্রের আধুনিকায়নের কাজ সুসম্পন্ন করা সম্পর্কিত বিষয়ও বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। এ সম্পর্কে

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, ২০২০ সালের মধ্যে চীনে সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনা সমাজতন্ত্রের আধুনিকায়নের কাজ সুসম্পন্ন হবে।

কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পেশকৃত কর্ম-প্রতিবেদনে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, ভবিষ্যতে অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক খাতে চীনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হবে। রাষ্ট্র ও সমাজে আইনের শাসন আরও কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, জনসাধারণের জীবনমান উন্নততর হবে, মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়বে, শহর ও গ্রামের মধ্যে পার্থক্য কমবে, মৌলিক গণসেবা খাতে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে, এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নত করার মাধ্যমে 'সুন্দর চীন' গড়ার লক্ষ্য পূরণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে বিশ্বে চীনা জাতির মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং চীন আরও শক্তিশালী দেশে পরিণত হবে।

সংবিধান সমুন্নত রাখতে চীনা প্রেসিডেন্টের কথাও ভাষণে উল্লেখ করা হয়। এ সম্পর্কে তিনি দেশের সংবিধান সমুন্নত রাখতে সম্ভাব্য সবকিছু করতে সিপিসি'র সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সংবিধান লঙ্ঘন করতে দেওয়া হবে না এবং সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে ও আইন সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে সংবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য তত্ত্বাবধান-ব্যবস্থাও জোরদার করতে হবে। যে-কোনো মূল্যে সংবিধানের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভাষণে ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশে আমূল ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়। এ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশে আমূল ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হবে এবং 'সুন্দর চীন'-এর স্বপ্ন পূরণ হবে।

প্রেসিডেন্ট বলেন, বায়ু, পানি ও ভূমির দূষণ কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা জোরদার করা হবে এবং পরিবেশ সংরক্ষণে বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় চীনের অংশগ্রহণ বাড়বে। চীন সবুজ অর্থনীতির ওপর জোর দেবে এবং উত্পাদন ও ভোগের ক্ষেত্রে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেবে।

তিনি আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদগুলো রক্ষার ব্যবস্থা জোরদার করা হবে এবং ইতোমধ্যে যেসব প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি হয়েছে সেগুলো পুষিয়ে নেওয়ার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় প্রাকৃতিক সম্পদ ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ও তদারকি সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করা হবে। পাশাপাশি জাতীয় পার্কসহ প্রাকৃতিক ভূমি সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও জানান চীনের প্রেসিডেন্ট। (ওয়াং হাইমান/মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040