প্রসঙ্গ: বেইজিংয়ের গেল ৫ বছরের উন্নয়ন
  2017-10-18 15:00:35  cri

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র ঊনবিংশ জাতীয় কংগ্রেস শুরু হয়েছে আজ (বুধবার)। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দায়িত্ব নেওয়ার পর কেটে গেছে পাঁচটি বছর। তার নেতৃত্বে গেল ৫ বছরে চীন নানা ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। রাজধানী বেইজিং অনেক বদলেছে; আরও উন্নত হয়েছে; আরও আধুনিক হয়েছে।

থিয়ান আন মেন মহাচত্বরের ৩০ কিলোমিটার পুবে বিশ্বের দীর্ঘতম মনুষ্যনির্মিত খাল অবস্থিত। এর নাম বেইজিং-হাংচৌ মহাখাল। মহাখালের পাশে, বেইজিংয়ের উপকেন্দ্রে, একটি নতুন নগর নির্মিত হচ্ছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর, পার্টির সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিংয়ের নির্দেশে, বেইজিংয়ের বেশকিছু কর্মকাণ্ড শহরের বাইরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্মাণাধীন এই নতুন নগর সেই সিদ্ধান্তের ফল।

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিপিসি সাধারণ সম্পাদক ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিং শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘুরে দেখেন। তিনি প্রথমে যান বেইজিং পরিকল্পনা প্রদর্শনী হলে। হলে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বালির তৈরি বেইজিংয়ের ম্যাপ। সেখানে সি চিন পিং বলেন, "আমি বেইজিংয়ে জন্মগ্রহণ করেছি, লেখাপড়া করেছি, এবং বসবাসও করছি। আমি চোখের সামনেই বেইজিংকে একটি পুরাতন নগর থেকে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক শহরে পরিণত হতে দেখেছি। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটু একটু করে বদলেছে বেইজিং। বেইজিংয়ের এই ইতিবাচক রূপান্তরে আমি গর্বিত।"

গেল ৫ বছরে সিপিসি'র সাধারণ সম্পাদক ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং অন্তত দু'বার গোটা বেইজিং শহর ঘুরে দেখেছেন এবং শহরের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় দিক্-নির্দেশনা দিয়েছেন। বেইজিং হয়ে উঠেছে চীনের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, আন্তর্জাতিক বিনিময়, বিজ্ঞান ও নবায়নের কেন্দ্র। প্রেসিডেন্ট সি মনে করেন, বেইজিংকে হতে হবে একটি আন্তর্জাতিক মানের বাসযোগ্য শহর।

২০১৫ সালের এপ্রিলে সিপিসি'র কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোতে গৃহীত হয় 'বেইজিং-থিয়ান চিন-হ্যপেই সহযোগিতামূলক উন্নয়ন পরিকল্পনা'। এই পরিকল্পনার আওতায় আসে ২১৬ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি ও ১০ কোটি মানুষ। এটি একটি বিশাল জাতীয় কার্যক্রম।

বেইজিংয়ের সমস্যা কম নয়। এখানে অতিরিক্ত জনসংখ্যা আছে, ট্র্যাফিক জ্যাম আছে, বাসস্থানের দাম বেশি, পরিবেশ দূষণ আছে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বার বার জোর দিয়ে বলেছেন, রাজধানীতে না-করলেও চলে—এমন কর্মকাণ্ড বেইজিংয়ের বাইরে স্থানান্তর করে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।

এ ধারণার ভিত্তিতেই বেইজিংয়ের থংচৌ এলাকায় একটি 'উপ-রাজধানী' এবং হ্যপেই প্রদেশে 'সিং আন এলাকা' নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সি চিন পিং বলেন, এ দুটি এলাকা হবে বেইজিংয়ের দুটি ডানার মতো। এ দুটি এলাকা হবে শহর উন্নয়নের নতুন পদ্ধতির সূচনা। এ দুটি নতুন নগর সৃষ্টির সিদ্ধান্তকে গোটা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পরিদর্শনে আসেন নির্মাণাধীন 'থং চৌ উপ-রাজধানী'-তে। তিনি নির্মাণকাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এরই মধ্যে বেইজিংয় কোনো কোনো শিল্প-কারখানা নিষিদ্ধ করা হয় এবং যেসব কারখানা থাকতে পারবে—সেগুলোর একটা তালিকাও প্রস্তুত করা হয়। তার মানে, চাইলেই এখন আর বেইজিংয়ে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা যাবে না। এ সিদ্ধান্তের আওতায় গত ৫ বছরে বেইজিং থেকে ১৯৪০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে দেওয়া হয়। তা ছাড়া, এ সময়কালে ৪৮২টি বাজার ও ৮৩টি লজিস্টিক সেন্টারও পর্যায়ক্রমে বেইজিংয়ের বাইরে স্থানান্তর করা হয়।

এদিকে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে বেইজিংয়ে ৩৮৩৪০ হাজার বর্গমিটার অবৈধ অট্টালিকা ধ্বংস করা হয় এবং ৪৮৫৮টি শিল্প-প্রতিষ্ঠান থেকে সৃষ্ট দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। এর পেছনে কাজ করেছে বেইজিং উন্নয়নের নতুন ধারণা। এই ধারণা অনুসারে, সার্বিক উন্নয়নের খাতিরে কোনো কোনো খাতের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার গতি প্রয়োজনে কমিয়ে দিতে হবে। ফলে বেইজিংয়ের লোকসংখ্যা, শিল্পের ক্ষেত্র ও জ্বালানির খরচ কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সি চিন পিং পরিদর্শন করেন বেইজিং রেল ট্রানজিট কমান্ড সেন্টার। তার পর ৩ বছরে বেইজিংয়ের সাবওয়ে সিস্টেমে দুটি নতুন রুট যোগ করা হয় এবং সাবওয়ের দৈর্ঘ্য ৪৬৫ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ৫৭৪ কিলোমিটারে দাঁড়ায়। এখন প্রতিদিন কোটি মানুষ বেইজিং সাবওয়ে ব্যবহার করছেন।

গেল ৫ বছরে বেইজিংয়ের জিডিপি গড়ে প্রতিবছর বেড়েছে ৭.৩ শতাংশ করে। ২০১৬ সালে বেইজিংয়ের জিডিপির পরিমাণ ছিল ২.৪৯ ট্রিলিয়ান ইউয়ান এবং এর মধ্যে তৃতীয় শিল্পের অবদান ৮০ শতাংশের বেশি।

বেইজিং চীনের প্রযুক্তি ও নবায়নকেন্দ্র। জুং কুয়ান চুন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির মতো একটি প্রযুক্তিকেন্দ্র। এখানে উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করা হয়। ২০১৬ সালে জুং কুয়ান চুন উচ্চ প্রযুক্তি কোম্পানির মোট আয় ছিল ৪.৬ ট্রিলিয়ান ইউয়ান। বেইজিংয়ের জিডিপিতে প্রযুক্তির অবদান ৬০ শতাংশ।

অতিরিক্ত জনসংখ্যা, ট্র্যাফিক জ্যাম, বাসস্থানের উচ্চমূল্যসহ নানা সম্যসা সমাধানের জন্য বেইজিংয়ের স্থানীয় সরকার নানা নীতি প্রণয়ন করেছে। সাবওয়ের দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে বিশ্বের বড় নগরগুলোর মধ্যে বেইজিং এমনিতেই এগিয়ে আছে। এর ওপর আরও ৩০০ কিলোমিটার নতুন সাবওয়ে লাইন নির্মিত হচ্ছে নগরে। ফলে, ২০২০ সালে বেইজিংয়ের সাবওয়ের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে এক হাজার কিলোমিটারে। ২০১৭ সালে বেইজিংয়ে ১৫০০ হাজার বাসস্থানের ৫ বছরের পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়। বিগত পাঁচ বছরে বেইজিংয়ের বাতাসে 'পিএম ২.৫' ২০১২ সালের তুলনায় ২৩.৭ শতাংশ হ্রাস পায়।

উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২০ সালে বেইজিংয়ের স্থায়ী লোকসংখ্যা হবে দুই কোটি ৩০ লাখ। এরপর থেকে এ সংখ্যা আর বাড়বে না।

পরিকল্পনা অনুসারে, ২০২০ সালে বেইজিংয়ের বাতাসে পিএম-২.৫ এর ঘনত্ব দাঁড়াবে ৫৬ মাইক্রোগ্রাম/বর্গমিটার। ২০৩৫ সাল নাগাদ বেইজিংয়ের বায়ুর মান সার্বিকভাবে বাড়বে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ তা বিশ্বমানে পৌঁছাবে।

২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে বেইজিংয়ে চালু হবে নতুন একটি বিমানবন্দর। বছরে ১০ কোটি যাত্রী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করবেন। নতুন বিমানবন্দরের আকৃতি হবে ফিনিক্সের মতো। চীনের ঐতিহ্যিক কাহিনীতে ফিনিক্স একটি পবিত্র পাখি। আশা করা হচ্ছে, রাজধানী বেইজিং ফিনিক্সের মতো উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পানে উড়ে যাবে। (শিশির/আলিম/সুবর্ণা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040