প্রথমে শুনবেন 'কলকাতায় দুর্গাপূজার প্যারেডে চীনা কনসুল জেনারেল' শিরোনামে একটি সাংস্কৃতিক খবর।
৪ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিত দুর্গাপূজার প্যারেডে উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় চীনা কনসুল জেনারেল মা চান উ। এ সময় তাঁর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিরও সাক্ষাত হয়। প্যারেডে মোট ৬৮টি প্যান্ডেল অংশগ্রহণ করে।
প্যারেডস্থলে কনসুল জেনারেল মা বলেন, দুর্গাপূজার প্যারেডে পশ্চিমবঙ্গের বহুবর্ণ সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটেছে। এখানকার নৃত্য, গান ও ঐতিহ্যিক রীতিরীতি তাকে আকৃষ্ট করে।
দুর্গাপূজা প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শুরুতে পালিত হয়। এটি ভারতের সনাতন ধর্ম অনুসারীদের প্রধান ধর্মীয় উত্সবগুলোর অন্যতম এবং পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম উত্সব।
বন্ধুরা এবারে শুনুন স্পেনে অনুষ্ঠিত চতুর্থ 'চায়না রোড ইউরোপ ফোরাম'র খবর।
স্পেনে চীনের সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমি এবং স্পেনের গ্যালিসিয়ান গবেষণা ও আন্তর্জাতিক ডকুমেন্টেশন ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে 'চায়না রোড ইউরোপ ফোরাম' এবং 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের কাঠামোতে 'চীন-ইউরোপ সহযোগিতা ফোরাম' অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৭ অক্টোবর স্পেনের সান্তিয়াগোর দ্য কম্পোস্টেলায় এর আয়োজন করা হয়। চীন ও স্পেনের থিঙ্ক ট্যাংক ও বিশেষজ্ঞ, পণ্ডিত ও সরকারি কর্মকর্তাসহ একশ'রও বেশি মানুষ ফোরামে অংশ নেন।
২০১৪ সালে প্রথম 'চায়না রোড ইউরোপ ফোরাম' অনুষ্ঠিত হয়। ফোরামের লক্ষ্য চীন-ইউরোপ একাডেমিক বিনিময় জোরদার করা, চীন-ইউরোপ সমঝোতা বাড়ানো এবং দু'পক্ষের মৈত্রী ও সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়া।
স্পেনে নিযুক্ত চীনের মিনিস্টার কাউন্সিলর হুয়াং ইয়া চুং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, বিশ্ব শান্তির অভাব, উন্নয়ন ঘাটতি, সুশাসন ঘাটতি মোকাবিলায় চীন 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগ চীন ও আন্তর্জাতিক সমাজের সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ সেতুতে পরিণত হয়েছে।
বন্ধুরা এবার শুনুন 'পিকিং অপেরা বিশ্বে জনগণের কাছে এনে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব' শিরোনামে একটি সাংস্কৃতিক প্রবন্ধ।
সাংহাই পিকিং অপেরা থিয়েটারের প্রকাশিত পিকিং অপেরা গীতিনাট্য 'হেঁটে হেঁটে চাঁদের আলোয়' চীনের মধ্য-শরত উত্সবকালে বেলজিয়াম ও ফ্রান্সে এসে স্থানীয় দর্শকদের সামনে প্রদর্শিত হয়েছে। ইউরোপীয় দর্শকরা পার্ফমিং দলকে যথেষ্ট সমাদর করেছে।
গীতিনাট্য 'হেঁটে হেঁটে চাঁদের আলোয়'র প্রধান একজন অভিনেতা হিসেবে চীনা নাটক 'মেই হুয়া' পুরস্কার বিজয়ী সি ই হং সিআরআই'র সাথে সাক্ষাত্কারে বলেছেন, চীনা নাটক অভিনেতা-অভিনেত্রীদের উচিত বিশ্বের মঞ্চে আস্থাশীল হওয়া। পিকিং অপেরার একজন সদস্য হিসেবে, আরো বেশী বিদেশী বন্ধুদের কাছে পিকিং অপেরা পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। বিস্তারিত শুবেন সিআরআই'র সংবাদদাতার প্রতিবেদনে।
পিকিং অপেরার স্বর নিয়ে ক্লাসিক্যাল কবিতা গাওয়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠান 'হেঁটে হেঁটে চাঁদের আলোয়' গীতিনাট্যটি গঠিত। গীতিনাট্যটিতে প্রচীন থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত চীনা মানুষের স্বদেশে ফেরার আকুলতা, ভালবাসা ও জীবনের লক্ষ্যসহ মানুষের সুন্দর জীবনের প্রত্যাশা দেখানো হয়েছে। এ গীতিনাট্যে সি ই হং চীনের থাং রাজবংশের কবি লি সাং ইন'র সাহিত্যকর্ম 'ছিয়াং এ'র প্রধান অভিনেত্রী পারফর্ম করেন। তিনি মনে করেন, চাঁদ প্রতিপাদ্য হিসেবে 'হেঁটে হেঁটে চাঁদের আলোয়' গীতিনাট্য সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত পিকিং অপেরায় জিং হু, গংস এবং ড্রামস এই বাদ্যযন্ত্রগুলো বেশী ব্যবহৃত হয়। কিন্তু 'হেঁটে হেঁটে চাঁদের আলোয়'-এ এ বাদ্যযন্ত্রগুলো অল্প ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরণের নতুন নবায়ন ও উদ্ভাবন পিকিং অপেরার ফ্যানদের কাছে নতুন অনুভূতি এনে দেয়।
সি ই হং বলেন,
"ঐতিহ্য বজায় রাখার ভিত্তিতে দর্শকদের কাছে নতুন ধারণা দিতে চাই আমরা। আমার মতে অনেক তরুণ-তরুণীদের ঐতিহ্যগত পিকিং অপেরা গ্রহণ করার জন্য সময় লাগবে, কিন্তু কবিতাগুলো তাদের কাছে অন্তরংগ মনে হয়। সেজন্য আমরা পিকিং অপেরায় কবিতা যোগ করি। যাতে দু'টি সংস্কৃতি একই সঙ্গে উপভোগ করতে পারেন তরুণ দর্শকরা।"
অনেক বছর ধরে বিখ্যাত হলেও নবায়ন ও উদ্ভাবনের ইচ্ছা বজায় রাখছেন সি ই হং। সাংহাই কনজারভেটরি অফ মিউজিকের সঙ্গে সহযোগিতা করে পিকিং অপেরা গীতিনাট্য 'বাই নিয়াং জি- চার ঋতু প্রেম' সৃষ্টি করেছেন। এতে চীনা ঐতিহ্যবাহী অপেরা এবং পশ্চিমা সিম্ফনি সমন্বিত করে দর্শকদের কাছে একটি কিংবদন্তি প্রেমের গল্প উপস্থাপিত হয়েছে। 'বাই নিয়াং জি- চার ঋতু প্রেম' গীতিনাট্যটি চীনের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চতুর্থ 'ইনোভেশন পুরস্কার' পেয়েছে। তাছাড়া ফ্রান্সের লেখক হুগো'র উপন্যাস 'নটর ডেম ডি প্যারিস' অনুসারে অভিযোজন করা পিকিং অপেরা 'বেল টাওয়ারের দুঃখ ভালবাসা'-এ অভিনয় করেন তিনি। মূল উপন্যাসে চীনা বৈশিষ্ট্য যোগ করে 'বেল টাওয়ারের দুঃখ ভালবাসা' ইউরোপে পারফর্ম করা সি ই হং'র আশা। তিনি বলেন,
"যখন আমরা সাংহাইয়ে পারফর্ম করি, অনেক বিদেশী দর্শক এসে উপভোগ করেন। তাদের অনেকে মুগ্ধ হয়। অনেকেই আমাকে বলে তাদের খুবই ভাল লাগে, এমনকি দ্বিতীয় দিনে আবার দেখতে আসে।"
প্রায় নববই বছর আগে, পিকিং অপেরা মাস্টার জনাব মেই লান ফাং'র সাথে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছে পিকিং অপেরা। জনাব মেই'র কাছে অপেরা শেখার শিল্পীদের 'মেই গোষ্ঠী' বলা হয়। 'মেই গোষ্ঠী'র একজন উত্তরাধিকারী হিসেবে, বিশ্ব মঞ্চে পিকিং অপেরা প্রদর্শন করা সি ই হং'র আশা। তিনি বলেন,
"বেশী দর্শক পিকিং অপেরার সৌন্দর্য্য উপভোগ করলে খুশী হই আমি। বিশ্বের দর্শকদের কাছে পিকিং অপেরা উপস্থাপন করা আমাদের দায়িত্ব।"
বন্ধুরা, বিশ্বের সাংস্কৃতিক পর্ব এখানে শেষ। এখন শুনুন আমার সহকর্মী মহসীনের উপস্থাপনায় দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক পর্ব।
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com
চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান। (জিনিয়া/মহসীন)