রুশ বিজ্ঞান একাডেমির দূরপ্রাচ্য বিভাগ রাশিয়া, চীন ও পূর্ব এশিয়াবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এখানে চীনতত্ত্ববিদদের ব্যাপক, চীনের উন্নয়ন ও চীন-রুশ সম্পর্কের গভীর বিশ্লেষণ করে। এ বিভাগের পরিচালক সারগেই লুজইয়ানিন বলেন, বর্তমানে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে চীন এবং ২০২১ সালের আগে এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন হবে বলে তার বিশ্বাস। গত ৫ বছরে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাফল্য শিল্প, বাণিজ্য, পুঁজি বিনিয়োগসহ বিভিন্ন খাতে দেখা দিয়েছে এবং চীনা নাগরিকদের জীবনযাপনের মান, বার্ষিক আয় ও সামাজিক কল্যাণ ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে।
'আসন্ন সিপিসি'র ১৯তম জাতীয় কংগ্রেস চীনা নাগরিকদের উত্সাহ দেবে এবং জনগণকে চীনের বৈশিষ্ট্যময় উন্নয়নের পথে নেতৃত্ব দেবে, জাতীয় অর্থনীতি ও সামাজিক কল্যাণ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ সম্মেলনে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও নীতিমালা অনুসারে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সংস্কার গভীরতর করাসহ বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করবে চীন।'
রুশ চীনতত্ত্ববিদ ইউরি তাভরোভস্কি বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আসন্ন ১৯তম জাতীয় কংগ্রেস শুধু বিগত ৫ বছরে চীনের জাতীয় পুনরুত্থানের চীনা স্বপ্ন বাস্তবায়নে পর্যায়ের সারাংশই নয়, বরং দু'টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন। তিনি বলেছেন, ২০১২ সালে চীনের অর্থনীতির উন্নয়নে 'হার্ড অবতরণের' পূর্বাভাস দিয়েছেন কিছু কিছু বিশেষজ্ঞরা, তবে পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ৫ বছরে চীনের অর্থনীতি মাঝারি ও দ্রুত উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চীনের জিডিপির বার্ষিক গড়পড় বৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ, যা বিশ্বের ২.৬ শতাংশ ও উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক সত্তার ৪ শতাংশের চেয়েও অনেক চমত্কার বলা যায়। একদিকে অর্থনীতির বৃদ্ধি হয়েছে, অন্যদিকে চীনা জনগণের আয়ও বেড়েছে, যা বাস্তব কল্যাণ বলা যায়। এ দৃশ্য দেখে অনেক মোহিত হয়েছেন।
'জিডিপি'র বার্ষিক ৭.২ শতাংশ গড়পড়তা প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মুদ্রাস্ফীতি ২ শতাংশ ও বেকারত্ব ৫ শতাংশে বজায় রাখা হয়েছে, বিগত ৫ বছরে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে চীনের অর্থনীতিতে স্পষ্ট অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বিদায়ী বছরে বিশ্বের জিডিপিতে চীনের পরিমাণ ১৪.৮ শতাংশ এবং ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনীতির বৃদ্ধিতে চীনের গড়পড়তা অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ, যা বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে।'
দূরপ্রাচ্য বিভাগের রাজনৈতিক গবেষণা ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের পরিচালক আন্দ্রেই ভিনোগ্রাদোভ বলেছেন, বর্তমানে চীন সাফল্যের সঙ্গে অনেক অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করেছে, অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের সাথে সাথে চিকিত্সা ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুর সমাধানের ওপর উচ্চপর্যায়ের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সিপিসি'র ১৮তম জাতীয় কংগ্রেসের পর দুর্নীতিদমন ব্যাপক ও দৃঢ়ভাবে চালু হয়েছে। সিপিসিকে 'দুর্নীতিমুক্ত করা'র সিদ্ধান্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
'আমি মনে করি যে, সিপিসি পবিত্র বিপ্লবী আদর্শগুলি ভুলে যায়নি, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক সমৃদ্ধি আর সাম্যের সমাজে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলবে। দুর্নীতিদমন চীনা সমাজের অভ্যন্তরীণ প্রাণশক্তি ও আত্মপূরণের চাহিদা প্রতিফলিত করেছে।'
তা ছাড়া, বিশ্বের কূটনৈতিক মঞ্চে চীনের চমত্কার আচরণ, বৈশ্বিক প্রশাসন, অর্থনীতির বিশ্বায়ন এবং বিশ্বের বহুমুখীকরণ বাস্তবায়নে চীনের বিরাট অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন রুশ বিশেষজ্ঞরা।
(সুবর্ণা/তৌহিদ/শিশির)