প্রধান বিচারপতির ছুটি-বিদেশ যাত্রা ও দুর্নীতি বিতর্ক: সন্তোষজনক সুরাহা চায় দেশের মানুষ
  2017-10-15 19:11:08  cri
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাস ধরে বিচার বিভাগের একরকম মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায় আইন ও নির্বাহী বিভাগ। রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার কঠোর সমালোচনা করেন সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা। প্রধান বিচারপতি এর প্রতিক্রিয়ায় জানান, তার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্টদের সংযত হবার আহ্বান জানান। রায়কে কেন্দ্র করে নানা মতামত আসতে থাকে পক্ষেবিপক্ষে।

এক পর্যায়ে মন্ত্রিসভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয় এবং মন্ত্রিসভাও রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে জাতীয় সংসদে এ রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব পাশ হয়। রিভিউ আবেদন করার কথা জানান আইনমন্ত্রী। সবশেষ প্রধান বিচারপতির অসুস্থতার কথা বলে একমাসের ছুটির আবেদন করেন রাষ্ট্রপতি বরাবর। রাষ্ট্রপতি তা মঞ্জুর করেন। গত ১৩ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি অস্ট্রেলিয়া যাত্রার আগে বলেন, তিনি অসুস্থ নন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে দিয়ে সরকার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। আর সরকারের একটি মহল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার বিষয়ে ভুল বুঝিয়েছে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী তার ওপর অভিমান করেছেন।

প্রধান বিচারপতির এসব মন্তব্য নতুন করে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। পরদিন ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, নৈতিকস্খলন ও দুর্নীতিসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে অন্য বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একই বেঞ্চে বসতে রাজি হচ্ছিলেন বলেই ছুটি নিয়ে বিদেশ গেছেন তিনি। যাত্রার সময় প্রধান বিচারপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিভ্রান্তিকর বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিদের ডেকে নিয়ে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কথা জানান। তাদের এ সংক্রান্ত দালিলিক তথ্যাদিও দেওয়া হয় বলে জানানো হয় বিবৃতিতে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের পর বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, মির্জা হোসেন হায়দার, ইমান আলী প্রধান বিচারপতির হেয়ার রোডের বাসায় যান।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদের অর্থপাচার, দুর্নীতি, নৈতিকস্খলনসহ ১১টি অভিযোগের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। বিচারপতিরা জানান এ সব অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষে এক বেঞ্চে বসে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় প্রধান বিচারপতি জানান যে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে তা না করে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ছুটির আবেদন করেন ও রাষ্ট্রপতি তা মঞ্জুর করেন।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, প্রধান বিচারপতি পদ ও বিচারবিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেয়নি। কিন্তু বিদেশ যাত্রার সময় প্রধান বিচারপতি বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেওয়ায় ১৪ অক্টোবর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠক করে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে বিবৃতিটি প্রাকশের সিদ্ধান্ত নেন।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আবারো তীব্র বিতর্কের সূত্রপাত হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ আনেন, প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে সরকার বিচার বিভাগের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতেই তাকে জোর করে ছুটিতে পাঠাচ্ছে। তবে, সাবেক বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম মনে করেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে প্রধান বিচারপাতির মন্তব্য অসাংবিধানিক। বিদেশ যাওয়ার আগে তার বক্তব্য উত্থাপিত দুর্নীতিকে আড়াল করার চেষ্টা বলেও মনে করেন তিনি।

এরই মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে উত্থাপিত ১১টি অভিযোগ তদন্ত হবে। তবে প্রধান বিচারপতি একটি সাংবিধানিক পদ বিধায় আইন মেনে সব কিছু করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার তড়িঘড়ি করা হবে না।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুধু প্রধান বিচারপতি বা সরকারই বিব্রত নয়, এতে প্রকৃতপক্ষে বিব্রত ও উদ্বিগ্ন গোটা জাতি। তাই বিষয়টি সন্তোষজনক ও আশু সুরাহা চায় দেশের মানুষ।

মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040