১৩ অক্টোবর সকালে বেইজিংয়ে 'পরিশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার পাঁচ বছর' শিরোনামে বড় আকারের কৃতিত্ব প্রদর্শনী দেখতে হাজির হন বিশেষ দর্শকরা। তাঁরা হচ্ছেন চীনে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, চীনে কর্মরত বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ।
এ প্রদর্শনীতে দশটি প্রধান বিষয়বস্তু এলাকা ও একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অনুভূতি এলাকা অন্তর্ভুক্ত আছে। এ প্রদর্শনীতে সার্বিকভাবে চীনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন কৃতিত্ব, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র দেশ প্রশাসনের নতুন চিন্তাধারা, জনসাধারণের জীবনযাপন ও উত্পাদনের নতুন পরিবর্তন প্রদর্শিত হয়।
প্রদর্শনীর কী কী বিষয় বিদেশি কূটনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে? গেল পাঁচ বছরে চীনের উন্নয়ন নিয়ে তাদের মূল্যায়ন কী? তা জানার জন্য শুনুন সিআরআইয়ের সাংবাদিক ছাও শেং চি'র পাঠানো প্রতিবেদন।
১৩ অক্টোবর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিদেশি বিশেষজ্ঞ ব্যুরোর আমন্ত্রণে চীনে কর্মরত এক'শ জনের বেশি কূটনীতিবিদ, শিল্পপতি ও বিশেষজ্ঞ বেইজিং প্রদর্শনী কেন্দ্রে 'পরিশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার পাঁচ বছর' শিরোনামে বড় আকারের কৃতিত্ব প্রদর্শনী দেখেন।
ইসরাইলের ইনফিনিটি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট আমির গাল ওর বহু বছর চীনে ছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি চীন সরকারের 'মৈত্রী পুরস্কার' লাভ করেন। তিনি গেল পাঁচ বছর চীনের উত্সাহব্যঞ্জক বিকাশ দেখেছেন। তিনি বলেন, "গেল পাঁচ বছরে চীনের অর্থনীতি সুষ্ঠু ও দ্রুতগতিতে বিকশিত হয়ে আসছে। চীনের জিডিপি বহু বছর ধরে ৬ শতাংশ'র ওপর বজায় রয়েছে। জনগণের জীবনযাপনের মানে বিরাট উন্নতি হয়েছে। পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে অতিদ্রুত বিকাশের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক ক্ষতির ওপরও নজর দিয়েছে এবং উন্নয়ন হয়েছে। সুতরাং গেল পাঁচ বছর চীনের বিরাট কৃতিত্ব অর্জিত হয়েছে।'
জর্জিয়ার রাষ্ট্রদূত ডেভিড আপসিঔরি বলেন, 'আমরা দেখেছি, চীন সবসময় শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের রাষ্ট্রীয় শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি চীন বৈশ্বিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় বড় রাষ্ট্রের দায়িত্ব বহন করেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় চীন নিজের মেধা ও প্রস্তাব উত্থাপন করেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে হাতে হাত রেখে সংকট মোকাবিলার প্রস্তাব করেছে এবং অভিন্ন সাফল্য অর্জন করেছে।'
চীনের মেধা ও প্রস্তাব বলতে আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উত্থাপিত 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাব। স্বল্প চার বছরে বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা 'এক অঞ্চল, এক পথ' নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছে। চল্লিশটিরও বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা চীনের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চীন ও 'এক অঞ্চল, এক পথ' সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনের মোট পরিমাণ ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। 'এক অঞ্চল, এক পথ' বরাবর দেশগুলোতে মোট ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ প্রস্তাবের প্রতি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ব্যাপক মতৈক্যে রয়েছে।
গেল পাঁচ বছরে চীনের বুনিয়াদী ব্যবস্থা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ইন্টারনেট খাতও দ্রুত বিকশিত হয়েছে। দ্রুতগতির রেলপথ, অনলাইন কেনাকাটা, আলিপে ও শেয়ারিং বাইক হলো চীনের চারটি নতুন আবিষ্কার, যা জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনে বড় সুবিধা বয়ে এনেছে।
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের রুশ বিভাগের বিশেষজ্ঞ আন্দ্রে বলেন, '২০০৫ সালে আমি প্রথম বার চীনে আসি। এবার আমি সিআরআইতে চাকরি নিয়ে এসেছি। আমি চীনের বিরাট পরিবর্তন দেখেছি। আরো বেশি শহরে পাতাল রেল নির্মিত হয়েছে। বেইজিং থেকে শাংহাইয়ে বিকেলে রওনা হয়ে সন্ধ্যায় পৌঁছানো যায়। শেয়ারিং বাইকও অনেক সুবিধার, মোবাইল ফোন খুললে জানতে পারেন, কোথায় বাইক আছে। তা ছাড়া অনলাইন কেনাকাটা আর আলিপেও জনসাধারণের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এ সব পরিবর্তন থেকে গেল পাঁচ বছরে চীনের সফলতা প্রমাণিত হয়েছে। আমি তা দেখে সত্যি আনন্দিত।' (ইয়ু/টুটুল)