নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যু: সিদ্ধান্ত না এলেও হতাশ নয় বাংলাদেশ
  2017-10-01 19:04:42  cri

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ২৮ সেপ্টেম্বর বহু প্রতীক্ষিত বৈঠকে বসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। বাংলাদেশ আশা করেছিল ওই বৈঠক থেকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আসবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় বৈঠকটি। তবে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক আচরণের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়। মূলত চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারকে সমর্থন দেওয়ায় এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারেনি। তবে কাঙ্খিত ফলাফল না এলেও এতে হতাশ হবার কিছু নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ও রাশিয়ার অনেক ইতিবাচক অবস্থানও রয়েছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগে নিরাপত্তা পরিষদের ৯টি সদস্য দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের ডেকে ঢাকায় ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। রাষ্ট্রদূতদের জানানো হয় বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে জাতীয় নিরাপত্তা ও নানাবিধ সামাজিক সামাজিক সমস্যার মুখে পড়েছে। পুরনো নুতন মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার দায়িত্ব দীর্ঘদিন ধরে বহন করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা ইস্যুর একটি স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিষদের জোরালো ভূমিকা কামনা করে বাংলাদেশ।

২৮ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের শুরুতেই রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ব্রিফ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি এ সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। রাখাইনে সেনা অভিযান বন্ধের পাশাপাশি সেখানে মানবাধিকার ও গণমাধ্যমকর্মীদের যেতে দিতে আহ্বান জানান দেশটির প্রতি। রোহিঙ্গা সংকটের রাজনৈতিক সমাধান চেয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, এর মূলে রয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব না থাকা। তাই সমাধানের পূর্বশর্ত হিসেবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার কথা বলেন তিনি। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদে নিজ বসতিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

রাখাইনে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, শরণার্থী পরিস্থিতি সংকটের দিকে যাচ্ছে। এ মানবিক বিপর্যয় না ঠেকালে আরো আড়াই লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এ সহিংসতা মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগ দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। তিনি মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, চাপ সরে গেলে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা গতি হারিয়ে ফেলে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনে ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে তিনি পরিষদের সদস্যদের কক্সবাজার শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।

বৈঠকে, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন। রাখাইনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করারও আহ্বান জানানা তিনি।

তবে, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে চীন ও রাশিয়া। চীনা রাষ্ট্রদূত শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে সমর্থন জানান। আর রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আরসার কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হিসেবে অভিহিত করেন।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাঙ্খিত ফলাফল না এলেও বাংলাদেশের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান মনে করেন, নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র জোরালো অবস্থান নিয়েছে। আর চীন রাশিয়ার বক্তব্যেও কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। কারণ দেশ দুটি রোহিঙ্গাদের মানবিক বিপর্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।

এর আগে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিংছিয়াং চীনের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২৫ সেপ্টেম্বর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্পষ্ট করে বলেছেন, তার দেশ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জোরালো পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী। তিনি সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। বলেন, চীন থেকে এ সব শরণার্থীর জন্য ত্রাণ আসবে। তার এ বক্তব্যের পরপরই দু দফা ত্রাণ পৌঁছেছে বাংলাদেশে।

তাই বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে এ রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান। দুই বিশ্লেষক বলছেন, বাংলাদেশের সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে যে বিশ্বজনমত তৈরি হয়েছে তা কাজে লাগাতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ তাদের।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040