প্রসঙ্গ: গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকার সৃষ্টি
  2017-09-27 15:30:51  cri

 


১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেওয়ার আগেই ঠিক করা হয় নয়াচীনের জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি চীনের বেইজিং, শাংহাই ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জাতীয় সংগীত রচনায় অংশ নিতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানায়।

২০ অগাস্ট পর্যন্ত মোট ৬৩২টি গানের কথা ও ৬৯৪টি গানের সুর সংগৃহীত হয়। পরে সিপিসি'র স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতৃত্বাধীন বিশেষ কর্মদল বেইজিং হোটেলে গান বাছাইয়ের কাজ শরু করে। গান নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি ছিল খুবই কঠিন। চীনের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইন এবং কর্মদলের অধিকাংশ সদস্য 'স্বেচ্ছাসেবকদের কুচকাওয়াজ' গানটিকে চীনের 'জাতীয় সংগীত' হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তাব দেন। এ গানের কথাগুলো লিখেছেন চীনের বিখ্যাত লেখক থিয়ান হান। ১৯৩৫ সালে এ গানটি একটি চীনা চলচ্চিত্রের থিম সং হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। পরে জাপান-বিরোধী প্রতিরোধযুদ্ধে গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

২৫ সেপ্টেম্বর চীনের চুংনানহাই ভবনে চেয়ারম্যান মাও সে তুং ও প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের উদ্যোগে চীনের বিভিন্ন রাজনৈতিক পার্টি ও সাংস্কৃতিক মহলের ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সে অনুষ্ঠানে 'জাতীয় সংগীত, ও জাতীয় পতাকা বাছাই করা নিয়ে আলোচনা হয়। চীনের বিখ্যাত লেখক কুও মো রুও, শেন ইয়ান পিং, শিল্পী স্যু বেই হুং, স্থপতি লিয়াং সি ছেংসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় সংগীতের কথা নিয়ে প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন। গানের লেখক থিয়ান হান এ অনুষ্ঠানে 'স্বেচ্ছাসেবকদের কুচকাওয়াজ' গানটির কথাগুলো ব্যাখ্যা করেন। গানের কথা বাংলায় অনুবাদ করলে প্রায় এমন দাঁড়াবে: "যারা দাস হতে চান না, উঠুন! আসুন, আমাদের রক্ত-মাংস দিয়ে নতুন মহাপ্রাচীর সৃষ্টি করি! চীনা জাতি সবচেয়ে মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন; সবাই গর্জে উঠুন! উঠুন, উঠুন, উঠুন!! শত্রুর কামানের সামনে সাহসের সাথে এগিয়ে যান!"

এ গানটি যুদ্ধের সময় রচিত। কিন্তু চীনা জাতির স্বাধীনতা ও শান্তি রক্ষার প্রতীক হিসেবে সবাই এটিকেই জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচন করেন।

একই দিনে জাতীয় পতাকাও বাছাই করা হয়। ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে চীনা গণমুক্তি ফৌজের প্রয়াসে তত্কালীন কুওমিনতাং পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার পরাস্ত হয়। তখন গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের নতুন জাতীয় পতাকা নতুনভাবে ডিজাইন করার প্রয়োজন দেখা দেয়। শুরু হয় দেশ-বিদেশের ডিজাইনারদের কাছ থেকে জাতীয় পতাকার ডিজাইন সংগ্রহের কাজ। দেশ-বিদেশের চীনারা আন্তরিকভাবে ডিজাইন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এক মাসে চীন, আমেরিকা, ইন্দোনেশিয়া, মালিয়েশিয়া ও উত্তর কোরিয়া থেকে মোট ২৯৯২টি ডিজাইন পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে জেং লিয়ান সুংয়ের ডিজাইন সবার নজর কাড়ে।

জেং লিয়ান সুং চীনের চেচিয়াং প্রদেশের রুই'আন শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকে ক্যালিওগ্রাফির প্রতি তার দুর্বলতা ছিল; তার হাতের লেখাও ছিল খুবই সুন্দর। পত্রিকায় ঘোষণা দেখে তিনি জাতীয় পতাকার তাত্পর্য নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেন। তিনি ভাবলেন, সিপিসি চীনা জনগণের মুক্তিদাতা। তাই তার ডিজাইনকৃত পতাকায় একটি বড় পাঁচ-মাথা তারকা স্থান পায়। এই বড় তারকাটি সিপিসি'র প্রতিনিধিত্ব করে। বড় তারকাটিকে ঘিরে আছে আরও চারটি তুলনামূলকভাবে ছোট তারকা। ছোট তারকাগুলো চীনের শ্রমিক, কৃষক, শহুরে বুর্জোয়া, ও জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রতীক।

তার ডিজাইনকৃত পতাকার মূল রঙ লাল। লাল রঙ বিপ্লবের প্রতীক, আবেগের প্রতীক। অন্যদিকে পতাকায় তারকাগুলোর রঙ হলুদ। হলুদ ফসলের প্রতীক। চীনা জাতির মানুষের চামড়াও হলুদ।

১৯৫৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর চীনের কেন্দ্রীয় শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক তুং সি ওয়েন 'জাতীয় দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান' শীর্ষক একটি বড় ছবি আঁকেন ছবির উচ্চতা ২৩৩ সেন্টিমিটার ও দৈর্ঘ্য ৪০০ সেন্টিমিটার। চেয়ারম্যান মাও সে তুং এ ছবিতে 'বৈশিষ্ট্যময় জাতীয় স্টাইল রয়েছে' বলে প্রশংসা করেন। বর্তমানে এ ছবি চীনের বিপ্লব জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে।

১৯৫৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের সভাপতিত্বে বেইজিংয়ের চুংনানহাই ভবনে চীনের ১০ জন মার্শালের পদমর্যাদা বিতরণী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। চীনা গণমুক্তি ফৌজের সামরিক কর্মকর্তাদের জন্য ৪টি শ্রেণীর ১৪টি পদ রয়েছে। সবচেয়ে উঁচু মর্যাদা ফিল্ড মার্শাল। ১৯৫৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর চু তে, পেং তে হুয়াই, লিন বিয়াও, লিউ বো ছেং, হো লুং, ছেন ই, লুও রুং হুয়ান, স্যু সিয়াং ছিয়ান, নিয়ে রুং চেন ও ইয়ে চিয়ান ইংকে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মার্শাল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। (সুবর্ণা/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040