প্রসঙ্গ: জার্মান চ্যান্সেলর পদে চতুর্থ মেয়াদে অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের জয়
  2017-09-26 16:15:09  cri

 


গত রোববার জার্মান পার্লামেন্টের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিগত সাত দশকের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)। তবে ৩২.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে সিডিইউ জার্মান পার্লামেন্টে সবচেয়ে বড় দল হিসেবেই অবস্থান ধরে রেখেছে, আর চতুর্থ মেয়াদের জন্য চ্যান্সেলর হয়েছেন মার্কেল।

মার্কেলের জোটের বর্তমান অংশীদার সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এসপিডি ২০.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তবে এসপিডি ট্রেজারি বেঞ্চে না-বসে আপাতত বিরোধী দলের আসনে বসার ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া, কট্টর ডানপন্থি দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) ১৩.১ শতাংশ আসন পেয়ে তৃতীয়, এফডিপি ১০.৫ শতাংশ, গ্রিনস পার্টি ৮.৯ শতাংশ ও বাম দল ৮.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে।

নির্বাচিত হওয়ার পর জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে মার্কেল বলেন, তাঁর প্রত্যাশা ছিল দল আরও ভালো করবে। রক্ষণশীল শক্তির (এএফডি পার্টি) উত্থান ঘটায় জনগণের মাঝে যে ভয় ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, সেদিকে খেয়াল রাখার প্রতিশ্রুতিও দেন মার্কেল।

জার্মান পার্লামেন্টে ৫৯৮ আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে সরাসরি নির্বাচন হয়। বাকি ২৯৯ আসনে ভোটপ্রাপ্তির হারের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দলের মধ্যে কোটাভিত্তিক আসন বণ্টন হয়।

১৯৫৪ সালের ১৭ জুলাই জার্মানির হামবুর্গে জন্মগ্রহণ করেন অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি ক্রিস্টিয়ান ডেমক্র্যাটিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালের নভেম্বরে তিনি জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলার হিসেবে নির্বাচিত হন। পরে ২০০৯ ও ২০১৩ সালের জাতীয় নির্বাচনেও তার দল জয়ী হয় এবং তিনি চ্যান্সেলর পদে দ্বিতীয় ও তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের জুন মাসে তিনি ফোবর্স-এর তালিকায় বিশ্বের সবচে প্রভাবশালী নারী হিসেবে নির্বাচিত হন।

বিশ্লেষকদের ধারণা, চ্যান্সেলর হিসেবে চীনের প্রতি অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের আগের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন হবে না। জার্মানির হেসে-দারমস্ট্যাড রাজ্যের অর্থনীতি, জ্বালানি, যোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক উপমন্ত্রী নর্বাট নইসার সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে বলেন, জার্মানির সাধারণ নির্বাচনের পর চীনের প্রতি দেশটির নীতির কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ, চীন এশিয়ায় জার্মানির গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। তা ছাড়া, বিনিয়োগ, নব্যতাপ্রবর্তন, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু'দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।

তিনি বলেন, 'জার্মানির প্রতিটি জোট সরকার চীনের সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রেখে আসছে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করাকে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছে। এমন কোনো জোট সরকার নেই, যে-সরকার চীনের সাথে মৈত্রী ও পারস্পরিক সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করেনি।"

বস্তুত চীন ও জার্মানির মধ্যে সরকার পর্যায়ের সংলাপ, কূটনীতি ও নিরাপত্তাবিষয়ক কৌশলগত সংলাপ, এবং উচ্চ পর্যায়ের আর্থ-বাণিজ্যিক সভাসহ ৭০টিরও বেশি নানা পর্যায়ের সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া, দু'দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার আওতা প্রযুক্তি, রসায়ন ও ইন্টারনেটসহ নানান ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ছে। জার্মান-চীন মৈত্রী সমিতির চেয়ারম্যান দিয়েটার বোনিং বলেন, সংসদ নির্বাচন জার্মানির চীন-নীতির ওপর প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, "যা-ই ঘটুক, যে-পার্টিই নির্বাচনে জয়লাভ করুক না কেন, তা জার্মানির চীন-নীতির ওপর প্রভাব ফেলবে না। সকল রাজনৈতিক পার্টি একমত যে, চীন জার্মানির বৃহত্তম অর্থনৈতিক অংশীদার। এমন কি সাধারণ মানুষও এ ব্যাপারে সচেতন।"

জার্মানির চীনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আন উ হাং মনে করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও জার্মানির নানা ক্ষেত্রের আদান-প্রদান দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে অর্থনীতির ক্ষেত্রে স্থিতিশীল সহযোগিতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন,

"চীন ও জার্মানির পারস্পরিক সহযোগিতায় স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারা নির্বাচনের পরও অব্যাহত থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। দু'দেশের সম্পর্কের মধ্যে অনেক স্থিতিশীল উপাদান আছে। আমি মনে করি, জার্মানির উচিত শুধু অর্থনীতির ক্ষেত্রে নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চে চীনকে সমতাসম্পন্ন ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে গণ্য করা।"

(সুবর্ণা/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040