সেপ্টেম্বর ২৩: '২০১৭ কুয়াংতুং একুশ শতকের সামুদ্রিক রেশমপথ আন্তর্জাতিক মেলা' গতপরশু (বৃহস্পতিবার) চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের তুংকুয়ান শহরের আধুনিক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে শুরু হয়েছে। মেলায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলংকাসহ ৫৬টি দেশ ও অঞ্চলের ১৬৮২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলায় তৃতীয় বারের মতো অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো।
মেলা উপলক্ষ্যে চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই)-র বাংলা বিভাগ 'চীন-বাংলাদেশ শিল্পসংলাপ' আয়োজন করেছে। এ সংলাপের মধ্য দিয়ে আরো বিনিময় ও সহযোগিতার সুযোগ তৈরি হয়েছে দু'দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ।
সামুদ্রিক রেশমপথের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, চীন ও বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। প্রাচীনকালে চীনের মিং রাজবংশের পর্যটক জেং হো দু'বারের মতো বাংলাদেশ সফর করেন। দীর্ঘকাল সামুদ্রিক রেশমপথের মাধ্যমে কুয়াংতুং প্রদেশের চাওছিং শহর থেকে সুগন্ধি আমদানি করে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের তৃতীয় বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ। এসব সাফল্য দু'দেশের যৌথ প্রয়াসে বাস্তবায়িত হয়েছে।
এবারের রেশমপথ মেলার প্রশাসনিক কমিটির পরিচালক ছেন ইউয়ুন সিয়ান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন,
'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উত্থাপিত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রবণতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ প্রস্তাব। এ উদ্যোগ বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের সমর্থন পেয়েছে এবং তা তত্ত্ব থেকে কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে।'
২০১৪ সাল থেকে সামুদ্রিক রেশমপথ মেলা সাফল্যের সঙ্গে তিনবার আয়োজিত হয়। এতে মোট ৪০৩৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অংশ নেয়, দেশি-বিদেশি দর্শকের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি এবং বাণিজ্যিক পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮ হাজার ৩৩০ কোটি ইউয়ান।
এবার 'চীন-বাংলাদেশ শিল্পসংলাপ'-এ অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের গ্রিন বাংলাদেশ ট্যুরস্-এর দায়িত্বশীল ব্যক্তি মুরশিদ মুকুল বলেন,
'আমি জানি অনেক চীনা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তারা প্রধানত ব্যবসা করেন, তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশি জানেন না। আমি কয়েকজন চীনা বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছি, কিন্তু তারা বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে যান নি। যদি তারা বাংলাদেশ বেড়াতে আসেন, তাহলে বাংলাদেশিদের আতিথেয়তা উপভোগ করতে পারবেন। দু'দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটন খাতের সহযোগিতাও বাড়বে বলে আশা করি।'
চীনের ইউয়ুননান প্রদেশের ইউয়ুননান-বেঙ্গল বিজনেস ইনফরমেশন কনসালটেশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরিচালক লি মিয়াও জনাব মুকুলের প্রস্তাবে একমত পোষণ করেন এবং নিজেও কিছু প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন,
'বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সৈকতের অন্যতম। আর সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাস করে। বাংলাদেশের পর্যটন এলাকা প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভরপুর। এ অঞ্চলের অবকাঠামো নির্মাণ উন্নত করতে আমি প্রস্তাব দিচ্ছি, যাতে আরো বেশি পর্যটক আকর্ষণ করা যায়।'
ইউয়ুননানে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো: দাউদ আলি এবার মেলায় উপস্থিত ছিলেন। চীন ও বাংলাদেশের সহযোগিতা সম্পর্কে তিনি বলেন,
'গত বছর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের পর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরো জোরদার হয়েছে। দক্ষিণ চীনের অনেক ব্যবসায়ী বাংলাদেশে গিয়ে ব্যবসার সুযোগ তৈরি করেছেন। আগে খুনমিং কনসুলেট অফিস থেকে মাসে মাত্র ৫০টি ভিসা দেওয়া হতো, তবে বর্তমানে এ সংখ্যা ৬০০ থেকে ৭০০-তে দাঁড়িয়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর চীনের সিছুয়ান প্রদেশের একটি বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেন। সিছুয়ানের শিল্পপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে ১৫০০ হেক্টরের বিশেষ বাণিজ্য এলাকা স্থাপন করবে। তা থেকে বোঝা যায় চীন ও বাংলাদেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।'
বর্তমানে চীন ও বাংলাদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাস্তব সহযোগিতার মাধ্যমে সামুদ্রিক রেশমপথের সম্পর্ক উত্তরাধিকার করেছে। দু'দেশের সহযোগিতায় আরো বেশি সাফল্য অর্জিত হবে বলে আশা রাখি। (সুবর্ণা/টুটুল)