কুয়াংতুং সামুদ্রিক রেশমপথ আন্তর্জাতিক মেলা, ২০১৭
  2017-09-22 08:53:35  cri

তোংকুয়ান চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের একটি ছোট্ট শহর।এই শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে '২০১৭ কুয়াংতুং একুশ শতকের সামুদ্রিক রেশমপথ আন্তর্জাতিক মেলা'। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগের দু'টি মেলাও এখানেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর সকালে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় তোংকুয়ানে অবস্থিত কুয়াংতুং আধুনিক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনকেন্দ্রে।

৫৬টি দেশ ও অঞ্চলের ১৬৮২টি শিল্প-প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিচ্ছে। এবার প্রায় এক লাখ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে মেলা। আগেরবার মেলার আয়তন ছিল এর প্রায় অর্ধেক। এবার অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে; বেড়েছে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও।

মেলায় বাংলাদেশের ১৪টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। কয়েকটি নাম খুবই পরিচিত। এপেক্স, রঙ। এসেছে বাংলাদেশ পর্যটন উন্নয়ন ব্যুরোও। বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন চামড়ার পণ্য, হস্তজাত পণ্য, ইত্যাদি। গ্রিন বাংলাদেশ ট্যুরস্-এর মতো পর্যটন এজেন্সিও এসেছে মেলায়। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি টিমও মেলায় অংশ নিচ্ছে। এই টিমে আছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের ব্যক্তিগত সহকারী মুহাম্মাদ রাজিবুল ইসলাম। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি নৃত্যদল এসেছে। একটি ছেলে ও তিনটি মেয়ে নৃত্যশিল্পী আছে দলে। দেশাত্ববোধক গানের তালে তালে তাদের নাচ প্রথম দিন থেকেই মেলায় আগত দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখে।

এবার কুয়াংতুং মেলায় বাংলাদেশ থেকে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবারই প্রথম চীন সফর করছেন, যদিও তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তারা দীর্ঘকাল ধরেই চীনের সাথে ব্যবসা করে আসছেন। তেমন একজন হচ্ছেন তাস্নিম আলম শাহিন। তার কোম্পানির নাম 'থ্রি টেক'।তিনি প্রতিষ্ঠানটির সিইও। চামড়ার তৈরি পণ্য তৈরি ও বিদেশে রফতানি করে এই প্রতিষ্ঠান। তিনি এবারই প্রথম চীনে এসেছেন। চীনের কোনো মেলায়্ও এটা তার প্রথম অংশগ্রহণ। এর আগে ইতালিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চামড়া মেলায় দু'বার অংশ নিয়েছেন।

তাস্নিম আলম শাহিন জানালেন, তিনি সঙ্গে করে খুব ভালো চামড়ায় তৈরি পণ্য নিয়ে এসেছেন। তার বিশ্বাস, 'থ্রি টেক' কোম্পানির পণ্য মেলায় আগত বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে চীনা বায়ারদের পছন্দ হবে। মেলার প্রথম দিনে তিনি বেশ সাড়াও পেয়েছেন বলে জানালেন। বেশ কয়েকজন বিদেশি বায়ারের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। কেউ কেউ আগ্রহ দেখিয়েছেন। তার স্টলে প্রথম দিনের খুচরা বিক্রিও সন্তোষজনক। তিনি বললেন, 'ইতালির চামড়া মেলায় গিয়েছি দু'বার। ওই মেলায় গিয়েই বুঝেছি, মানের দিক দিয়ে আমাদের পণ্য পিছিয়ে আছে। তখনই ঠিক করি যে, মান বাড়াতে হবে। এখন দাবির সাথে বলতে পারি যে, আমাদের পণ্য আন্তর্জাতিক মানের।'

তাসনিম আলম শাহিনের মতো উদ্যোক্তারা মেলায় এসেছেন অভিজ্ঞতার জন্য। তারা মনে করেন, এই মেলা তাদের জন্য ব্যবসার নতুন দুয়ার উন্মোচিত করতে পারে। চীন বড় বাজার। তা ছাড়া, মেলায় বিশ্বের অনেকগুলো দেশ অংশগ্রহণ করছে। ফলে মেলার মাধ্যমে একদিকে যেমন বিদেশিদের কাছে নিজেদের তৈরি পণ্যকে তুলে ধরার সুযোগ হচ্ছে, তেমনি অন্যদেশের পণ্যের সাথেও পরিচিত হবার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তাসনিম আলম শাহিন জানালেন, তিনি চীন থেকে চামড়ার পণ্যের এক্সেসরিজ দেশে নিয়ে যেতে চান। চীনা যন্ত্রপাতির প্রতিও তিনি তার আগ্রহের কথা জানালেন।

কুয়াংতোং মেলায় যেসব বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে, সেগুলোর অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। আর বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে থাকে স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ ফাউন্ডেশান (এসএমই)। নয়া শিল্প গড়ে তুলতেও এসএমই ফাউন্ডেশান সম্ভাব্য উদ্যোক্তাদের উত্সাহ দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক ফাহিম-বিন-আসমাতও এসেছেন মেলায়। ফাহিম জানালেন, 'থ্রি টেক'-সহ চারটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান মেলায় এসেছে তার ফাউন্ডেশানের সুপারিশক্রমে। তিনি এসেছেন ফাউন্ডেশানের পক্ষ থেকে; অভিজ্ঞতা অর্জন করতে এবং চারটি প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা দিতে। তিনি আশা করেন, এই মেলা থেকে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হবে।

মেলায় অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে মেলা-কর্তৃপক্ষ। এই তথ্য জানালেন কুয়াংতুং প্রদেশের ব্যুরো অব কমার্স অব চাওছিং সিটি'র পরিচালক লিন ওয়েই ওয়েন। তার ব্যুরো বাংলাদেশি শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ করার এবং তাদেরকে সবধরনের সহযোগিতা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছে। প্রথম দু'টি মেলাতেও বাংলাদেশি অংশের দায়িত্ব এই ব্যুরোই পালন করেছে। লিন ওয়েই ওয়েন জানালেন, তিনি তার একটি টিম নিয়ে গত জুলাই মাসেই বাংলাদেশ সফর করেন এবং সেখানে মেলার প্রচারমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। মেলায় বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণসম্পর্কিত সকল দায়-দায়িত্ব তার ব্যুরোই পালন করেছে। মেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন ডিজাইন করার কাজটাও তারাই করেছেন। লিন ওয়েই ওয়েন বললেন, তারা সবসময় বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নের জন্য মেলার সবচেয়ে ভালো ও আকর্ষণীয় জায়গাটি বাছাই করার চেষ্টা করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি আরও জানালেন, বাংলাদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মেলায় অংশগ্রহণের জন্য কোনো ফি দিতে হয়নি, স্টলের ভাড়া দিতে হয়নি, বরং তাদের প্রতিনিধিদের থাকার ফ্রি ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু বাংলাদেশ থেকে আসা-যাওয়ার বিমান-টিকিটের ব্যয় বহন করেছে।

বর্তমান যুগ অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের যুগ। পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিশ্বায়নের এই ধারা অব্যাহত থাকবে, এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। অবশ্য সংখ্যালঘু একটা অংশ অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের বিপক্ষে কথা বলছেন না, তা নয়। তবে, বাস্তবতা হচ্ছে, অর্থনীতির বিশ্বায়নের মাধ্যমেই বৈশ্বিক অর্থনীতির ধারাবাহিক উন্নয়ন সম্ভব। বৈশ্বিক অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের জন্য বাণিজ্যে রক্ষণশীলতাও পরিত্যাজ্য। চীনসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এ কথা বিশ্বাস করে। এ কারণেই চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে, বহু দেশকে সাথে নিয়ে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। কোয়াংতুং আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক রেশমপথ মেলা এ প্রক্রিয়ারই একটা ক্ষুদ্র অংশ। আমরা আশা করি, মেলা সফল হবে, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে, এবং বিশ্বের সকল দেশ ও মানুষ এ থেকে উপকৃত হবার সুযোগ পাবে।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040