প্রথমে কয়েকটি সাংস্কৃতিক খবর শুনবো।
তিব্বত অপেরার স্থানীয় নাম 'আজিলামু'। এর অর্থ হচ্ছে 'পরী বোন'। তিব্বত অপেরার উত্পত্তি ৮ম শতাব্দির ধর্মীয় সংস্কৃতিতে। ১৭শ শতাব্দিতে মন্দিরভিত্তিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের একটি পর্ব থেকে এটি স্বাধীন এক শিল্পে পরিণত হয়। ২০০৬ সালের ২০ মে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের অনুমোদনে প্রথম সারির জাতীয় অন্তর্নিহিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয় তিব্বত অপেরা।
বিখ্যাত শো ডুন ফেস্টিভালে তিব্বত অপেরা এক অবিচ্ছেদ্য পর্ব। গত ২২ অগাস্ট একটি অভিজ্ঞ তিব্বত অপেরা দল জোংজাওলুখাং পার্কে 'চুও ওয়া সাং মু' শিরোনামের একটি অপেরা মঞ্চায়ন করে। হাজার হাজার দর্শক সেই অনুষ্ঠান উপভোগ করে। মনকাড়া অনুষ্ঠান দর্শকদের তুমুল করতালি কুড়ায়।
ফিলিস্তিনি সাংস্কৃতিক মন্ত্রী এহাব বিসিওসো অগাস্ট মাসের শেষের দিকে জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে রামাল্লা শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রামাল্লার উত্তরাঞ্চলে সে দেশের প্রথম জাতীয় লাইব্রেরী নির্মাণ করবে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ।
বিসিওসো বলেন, জাতীয় লাইব্রেরী একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। জাতীয় লাইব্রেরী নির্মাণ তাঁদের পূর্ণ সার্বভৌমত্ব অধিকার করার প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি বলেন, দেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ফিলিস্তিনীদের সাংস্কৃতিক-কর্ম সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে জাতীয় লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, রামাল্লা শহরের উত্তরাঞ্চলের সারদা এলাকায় অবস্থিত ফিলিস্তিন জাতীয় লাইব্রেরী। নির্মাণ সমাপ্ত হলে এর মোট আয়তন হবে ৪ হাজার ৭০০ বর্গ মিটার।
বিসিওসো জোর দিয়ে বলেন যে, আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জাতীয় লাইব্রেরী নির্মাণের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাইব্রেরীর সঙ্গে ফিলিস্তিনের বিনিময় ও সহযোগিতার দরজা খুলবে। এর মাধ্যমে নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করে আরো উজ্জ্বল এক ফিলিস্তিনি বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতি বিশ্বের সামনে তুলে ধরা সম্ভব হবে।
এবার শুনুন চীনা তিব্বতী সাংস্কৃতিক বিনিময় দলের সিডনি সফর সংক্রান্ত খবর।
অগাস্ট মাসের শেষে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় একটি চীনা তিব্বতী সাংস্কৃতিক বিনিময় দল অস্ট্রেলিয়ার সিডনি সফর করে। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য-দপ্তরের মানবাধিকার ব্যুরোর ডেপুটি ইন্সপেক্টর ওয়াং ইয়েন উয়েন বিনিময় দলের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বিনিময় দলে তিব্বত বিষয়ক বেইজিং ও তিব্বতের বিশেষজ্ঞ ও তিব্বতের আধিকারিকরা রয়েছে।
সিডনি সফরকালে সেখানকার চীনা দূতাবাসের কনস্যুলেট জেনারেলের কনসাল জেনারেল কু সিয়াও চিয়ে'র সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছে সাংস্কৃতিক দলটি। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়ার চীনা রেডিও তাঁদের বিশেষ সাক্ষাত্কার গ্রহণ করে এবং স্থানীয় ১১টি প্রভাবশালী চীনা গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা আয়োজন করে।
সাংস্কৃতিক দলটি চীনের জাতি বিষয়ক নীতির কার্যকর প্রচার করে। বিশেষ করে তিব্বতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার গৃহীত সুযোগ-সুবিধার নীতি জোর দিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয় তাঁরা। তাছাড়া তাঁরা এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক উদ্বেগেরও জবাব দেন যাতে মানুষের সন্দেহ দূর হয়। বিনিময় দল ব্যাপক তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে তিব্বতের দ্রুত উন্নয়ন স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করে। মিডিয়াগুলো তিব্বত সম্পর্কে জানানোর গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিনিময় দলের সরাসরি তথ্যে অংশগ্রহণকারী মিডিয়াগুলো ধন্যবাদ জানিয়েছে। তিব্বতের উন্নয়নে চীন সরকারের গুরুত্ব আরোপ করার মাধ্যমে বড় সাফল্য অর্জিত হওয়ায় তাঁর প্রশংসা করা হয়েছে। সিডনি সফর শেষে সাংস্কৃতিক বিনিময় দলটি ক্যানবেরা, নিউজিল্যান্ড ও অকল্যান্ড সফর করবে।
সুপ্রিয় বন্ধুরা, সাংস্কৃতিক খবর পর্ব শেষ হল। এখন শুনুন কুয়াং চৌ'র বাই ইয়ুন বিমান বন্দর এবং কুয়াং তুং প্রদেশের জাদুঘরের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত 'সাগর-আকাশ করিডোর' এ রেশম পথের সৌর্ন্দয্য প্রদর্শন শিরোনামে একটি সাংস্কৃতিক প্রবন্ধ।
কুয়াং চৌ'র বাই ইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বৃহত্তর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক করিডোর 'সাগর-আকাশ করিডোর' ১৬ অগাস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে যাত্রীরা বিমান বন্দরে কুয়াং চৌ'র ইতিহাস জানতে পারবে।
'সাগর-আকাশ করিডোর' বাই ইয়ুন বিমানবন্দরের বেইসম্যান্ট স্তরে অবস্থিত। করিডোরটি টার্মিনাল হল এবং এরাইভাল হলকে যুক্ত করেছে। করিডোরটি ২'শ মিটার লম্বা। এর আয়তন ৩ হাজার ৩'শ বর্গমিটার। এ করিডোর সারা চীনের সব বিমান বন্দরের প্রথম বড় 'রেশম পথ থিম' বিষয়ক মুক্ত সাংস্কৃতিক স্থান।
কুয়াং চৌ প্রাচীন সামুদ্রিক রেশম পথের শুরু বিন্দু। 'এক অঞ্চল, এক পথ' নির্মাণ কাজের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াং চৌ শহরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্ব দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অবশ্যই এখানকার বিমান বন্দরও বিশ্ব পর্যায়ের বিমান চলাচলের হাবে পরিণত হয়ে রেশম পথে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
'সাগর-আকাশ করিডোর' হলো সাংস্কৃতিক বিমানবন্দর নির্মাণ এবং শহরের সার্বিক সাংস্কৃতিক মূল্য উন্নয়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। এই করিডোর নির্মাণের ফলে যাত্রীদের পর্যটন গুণমাণ আরো উন্নত হবে। এর মাধ্যমে চীনা সংস্কৃতি আরো ব্যাপকভাবে প্রচার পাবে। তাছাড়া, এই উদ্যোগ বিশ্বমানের বিমানবন্দর নির্মাণ ও উন্নয়ন আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।
'সাগর-আকাশ করিডোর' উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুয়াং চৌ বাই ইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং কুয়াং তুং প্রদেশের জাদুঘর কর্তৃপক্ষের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তির প্রথম প্রকল্প হচ্ছে 'বাই ইয়ুন বিমান বন্দরের সংস্কৃতি যাদুঘর'। 'কুয়াং চৌ সামুদ্রিক বাণিজ্যের কিংবদন্তী' শিরোনামে এক প্রদর্শনী প্রথম প্রকল্পের একটি পর্ব। এতে প্রধানত 'সামুদ্রিক রেশম পথের অন্যতম সূচনা বিন্দু হিসেবে কুয়াং চৌ'র বাণিজ্যিক ইতিহাস দেখা যায়। প্রদর্শিত কর্মে রয়েছে চীনের থাং, সুং, মিং ও ছিং রাজবংশের বিশেষ চীনামাটির রূপালী গয়না ইত্যাদি। এ প্রদর্শনী ২০১৮ সালের ফেব্রয়ারি মাসে শেষ হবে।
কুয়াং চৌ বাই ইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের বার্ষিক যাত্রী ৬ কোটি পার্সন টাইমস। অন্যদিকে কুয়াং তুং প্রদেশের যাদুঘর হলো কুয়াং তুং অঞ্চলের একমাত্র প্রাদেশিক বিস্তৃত যাদুঘর। সেজন্য দু'পক্ষের সহযোগিতা উভয়ের জন্য কল্যাণকর একটি শক্তিশালী সহযোগিতা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। চুক্তি অনুসারে, দু'পক্ষ আরো বেশী নিজেদের রিসোর্স ভাগাভাগি করবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কুয়াং চৌ বাই ইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সাংস্কৃতিক নির্মাণ কাজের ওপর অনেক গুরুত্ব আরোপ করেছে। বিশেষ করে রেশম পথ প্রতিপাদ্য হিসেবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com
চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান। (জিনিয়া/মহসীন)