চীনের তাইওয়ানের ছাত্রী লিউ সিন ই'র 'আলিপে' অভিজ্ঞতা
  2017-09-23 16:24:55  cri
সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠান 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি'। আর এ অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু ওয়াং ছুই ইয়াং জিনিয়া।

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে আমরা আপনাদের কাছে চীনের তাইওয়ানের ছাত্রী লিউ সিন ই'র 'আলিপে' অভিজ্ঞতা নামে একটি প্রবন্ধ তুলে ধরবো।

বর্তমানে চীনারা সঙ্গে করে ক্যাশ বা ক্রেডিট কার্ড বহনের কথা প্রায় ভুলে গেছেন। কারণ চীনে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট খুবই সুবিধাজনক।

চীনের তাইওয়ানের লিউ সিন ই বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয় ও ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। এ সময় তিনি 'আলিপে' ব্যবহার নিয়ে চমত্কার অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এখন আমরা লিউ সিন ই'র গল্প শুনবো।

লিউ সিন ই বলেন, "২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমি বেইজিংয়ে 'শিক্ষার্থী বিনিময় প্রোগ্রাম'-এর শিক্ষার্থী হিসেবে লেখাপড়া করি। সেই অভিজ্ঞতা আমার মনের ওপর গভীর ছাপ ফেলেছে। আমি তখন প্রায় সময়ই শপিং এড়িয়ে চলতাম। কারণ তখন আমার 'আলিপে' ছিলো না। এমনকি তখন আমি 'থাওপাও অ্যাকাউন্ট'ও নিবন্ধন করিনি। আমি প্রথমবার বেইজিংয়ে ১৪৪দিন কাটিয়েছি। তখন শপিং ক্ষেত্রে এত সুবিধা ছিলো না। আমি থাওপাও থেকে কোনোকিছু কিন্তু না পারলেও আমি নগদ ক্যাশ দিয়ে অনেক কিছু কিনেছি। তখন দৈনন্দিন জীবনে নগদ ক্যাশ দিয়ে অনেক কিছু কিনতে পারতাম। তাই এটি তখন আমার জন্য কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করেনি।

কিন্তু, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমি দ্বিতীয় বার বেইজিং আসি। এবার স্বল্পমেয়াদী প্রোগ্রামে নয়, দু'বছরের জন্য আমি বেইজিং আসি। আমার মনে হয়, আমার সঙ্গে আসা তাইওয়ানের শিক্ষার্থীদের বিমান বন্দর ত্যাগ করার পর প্রথম ইস্যু ছিলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে 'আলিপে', 'থাওপাও'সহ বিভিন্ন শপিং অ্যাপ ডাউনলোড করা।

দু'বছরে চীনের মূলভূখণ্ডের পেমেন্ট পরিবেশ আমার মধ্যে এক ভিন্ন অবস্থা তৈরি করে। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ব্যাপারে আলিপেসহ এ ধরনের তৃতীয়-পক্ষ পেমেন্ট দরকার। যেমন, অনলাইন শপিং, ফোন রিচার্জ, ক্রেডিট কার্ড পেমেন্ট, রেস্টুরেন্ট, টিকিট কেনা এমনকি হাসপাতালে নিবন্ধন ইত্যাদি। সবকিছু আলিপেসহ এ ধরনের তৃতীয়-পক্ষ পেমেন্টের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। আমার সরাসরি এক অনুভূতি হলো, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত, চীনের ই-কমার্স ও তৃতীয়-পক্ষ পেমেন্ট ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে উন্নয়ন হয়েছে। এমনকি এটি একটি সামাজিক প্রবণতায় পরিণত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন অনুসারে, অনলাইনে কেনাকাটা, অনলাইন নেট ঋণ এবং অর্থ বাজারের তহবিলসহ বিভিন্ন ইন্টারনেটের আর্থিক সেবা বিপুল পরিমাণে উন্নয়ন হচ্ছে বলে মোবাইল পেমেন্ট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। চীনের 'আই রিসার্স কনসাল্টিং কোম্পানি'-র উপাত্তে দেখা যায়, ২০১৬ সালে চীনের তৃতীয়-পক্ষ পেমেন্টের মাত্রা আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় চল্লিশ ট্রিলিয়ন ইউয়ান।

অর্থনৈতিক সুবিধা ছাড়া মোবাইল পেমেন্ট লোকজনের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন শপিং মলে প্রায় প্রতিটি দোকানে 'আলিপে'-কে স্বাগতম এরকম প্রতীক দেখা যায়। একটি ব্যাপার উল্লেখ করতে চাই যে, বেইজিংয়ের রাস্তায় যেসব ফল বিক্রেতা আছেন তারাও জিজ্ঞাস করেন 'আলিপে' বা 'উইচ্যাট' আছে কিনা?

আলিপে কোম্পানির প্রকাশিত 'চীনা জাতীয় বিল-২০১৬' অনুসারে, গত বছর ৪৫ কোটি লোক আলিপে ব্যবহার করে। এর মধ্যে ৭১ শতাংশ তাদের শপিং বিল ফোনের মাধ্যমে পেমেন্ট করে। বিশেষ করে চীনের তরুণ-তরুণীরা আলিপে ব্যবহার অনেক পছন্দ করে। তৃতীয়-পক্ষ পেমেন্ট ব্যবহার করতে করতে একটি অনুভূতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তা হলো আমরা এখন তৃতীয় পক্ষ পেমেন্ট জনপ্রিয় হওয়ার এক সামাজিক সংস্কৃতিতে বাস করছি।

আমার ফোনে অনেক আ্যাপ আছে, কিন্তু উইচ্যাট ও আলিপে যেন আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আ্যাপ। এসব অ্যাপ অবশ্যই আমার ফোনের প্রথম পেইজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকে। এখন আমার বাইরে যাওয়ার সময় মানিব্যাগ সঙ্গে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, ফোন থাকলেই যথেষ্ট।

কিন্তু তাইওয়ান প্রণালীর দু'তীরের খরচের অভ্যাস ভিন্ন। তাইওয়ানে প্রধান পেমেন্ট পদ্ধতি হলো ক্যাশ ও ক্রেডিটকার্ড। সম্প্রতি তাইওয়ানের বাজারেও আলিপে প্রবেশ করার তথ্য শুনেছি, কিন্তু তার সেবা তাইওয়ানে ভ্রমণে আসা মাতৃভূমির মূলভূভাগের পর্যটকদের জন্য একটি প্রস্তুতি।

আমার অনেক বন্ধু 'আলিপে'-র সুবিধায় মুগ্ধ। কিন্তু গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিয়েও তাদের চিন্তা আছে। আমাদের ফোনে প্রায় প্রতিটি কার্ডের তথ্য থাকে, যদি একদিন ফোন হারিয়ে ফেলি, তাহলে আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হবে।

আমার মনে হয়, মূলভূখণ্ড বা তাইওয়ান প্রদেশ, যাইহোক আমাদের উচিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরস্পরের কাছ থেকে শেখা। বিভিন্ন মতভেদ সমাধান তাইওয়ান প্রণালীর দু'তীরের সহযোগিতা আরো গভীর করবে"।

বন্ধুরা, 'চীনের তাইওয়ানের ছাত্রীর আলিপে অভিজ্ঞতা' প্রবন্ধটি এখানে শেষ। আমার সহকর্মী টুটুলের উপস্থাপনায় দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক পর্ব শুরুর আগে কিছু সাংস্কৃতিক বিষয়ক তথ্য শুনবো।

চীনা ঔষধ সংস্কৃতি প্রচার এবং চীনা ঔষধ বিশ্বে প্রচারের জন্য বেইজিং চীনা মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে 'জাতীয় ঔষধের সৌন্দর্য-বিশ্বের চোখে প্রবেশ' প্রতিপাদ্যে চীনা ঔষধ সংস্কৃতি দিবস সম্প্রতি ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয়।

ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার এক'শরও বেশি বিখ্যাত চিকিত্সাবিজ্ঞানী, পণ্ডিত ও চীনা সংস্কৃতিপ্রেমী এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে শেখা ও বিনিময়ের প্রক্রিয়ায় চীনা ঐতিহ্যগত ঔষধের প্রশংসা করেন তারা।

এদিন, বেইজিং চীনা মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশি-বিদেশি অতিথি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য চীনা ঔষধের সম্মুখীন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের পরিচয় তুলে ধরেন। তাছাড়া চীনা ঔষধের ধারণার তাত্পর্যও ব্যাখ্যা করেন। একই সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় তারা চীনা আকুপাংচার এবং মাসাজেরও পরিচয় করিয়ে দেন।

বেইজিং চীনা মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান স্যু আন লুং অনুষ্ঠানে বলেন, চীনা ঔষধ সংস্কৃতি দেশের উন্নয়ন কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। চীনা ঔষধ সংস্কৃতি প্রচার চীন ও বিশ্বের মধ্যে যোগাযোগের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিশ্বের সংস্কৃতি জগতে চীনা ঔষধ সংস্কৃতির অবস্থান উন্নয়ন করা হলো তাদের মিশন।

ইউরোপের চীনা মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের ফেডারেশনের চেয়ারম্যান চু মিয়েন সেং বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীন ও ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক বিনিময় গভীর করার সঙ্গে সঙ্গে, ফরাসি চিকিৎসক, শিক্ষা মহলসহ বিভিন্ন পক্ষের কাছে চীনা ঐতিহ্যগত ঔষধের স্বীকৃতি উন্নত হয়ে উঠেছে। কিন্তু, ফ্রান্সে চীনা ঔষধের শিক্ষণ ও অনুশীলন কার্যক্রম চালাতে চাইলে, স্থানীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট আইন দরকার।

প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com

চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান। (জিনিয়া/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040