এ-মেই পাহাড়:প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা প্রতিদিন
  2017-09-13 09:18:03  cri
সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠান 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি'। আর এ অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু ওয়াং ছুই ইয়াং জিনিয়া।

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে আপনারা 'এ-মেই পাহাড়:প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা প্রতিদিন' শিরোনামে একটি প্রবন্ধ শুনবেন।

চীনের 'এ-মেই পাহাড়' সিছুয়ান প্রদেশের লে সান শহরে অবস্থিত। পাহাড়টি প্রচুর গাছপালায় পরিপূর্ণ, সেই সঙ্গে নানান প্রজাতির প্রাণীও এখানে বাস করে। এটি চীনের চারটি বড় বৌদ্ধ পাহাড়ের একটি। সারা পাহাড়ে ২০টিরও বেশি মন্দির আছে। মন্দির ও প্রাকৃতিক দৃশ্য মিলিয়ে এ-মেই পাহাড়ে বিশেষ সৌন্দর্য বিরাজ করে। এই স্থানকে বিখ্যাত চীনা পাহাড়ি মন্দির স্থাপত্য শিল্পের দৃষ্টান্ত বলা হয়ে থাকে।

বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে এ-মেই পাহাড় বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২০০৭ সালে 'এ-মেই পাহাড় ঘোষণা' প্রকাশিত হয়। ঘোষণাটি বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার মাইলফলকে পরিণত হয়।

কিন্তু এ-মেই পাহাড়ের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার কাজ পাহাড়টি প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগেই শুরু হয়। এর লম্বা ইতিহাস আছে।

এ-মেই পাহাড়ের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের অনেক চেষ্টা রয়েছে। কিন্তু কেবল সরকারের চেষ্টাই যথেষ্ট নয় বলে পাহাড়ের মন্দিরের সন্ন্যাসীরাও ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন।

এ-মেই পাহাড়ের বৌদ্ধ ইনস্টিটিউটের উপ-প্রধান লং চাং বলেন, "আমাদের মন্দির পাহাড়ের বিরল প্রজাতির পশুপ্রাণী রক্ষার দায়িত্বও পালন করে। যেমন এ-মেই পাহাড়ের বিখ্যাত বানর। যখন শীতকাল আসে, তখন বানর বাইরে গিয়ে খাদ্য খুঁজতে পারে না। সেজন্য মন্দিরের এক বিশেষ জায়গায় তাদের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করি আমরা। প্রতিদিন আমরা নিয়মিতভাবে তাদের খাদ্য দেই। এটা আগের সন্ন্যাসীদের অভ্যাস, এখন তা আমাদেরও নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।"

এ-মেই মন্দিরের প্রাচীন ভবনগুলো সুং, মিং রাজবংশের সময়ে নির্মিত হয়েছে। মন্দির ভবন ও এ-মেই পাহাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্যের নিখুঁত সমন্বয়ে সুন্দর সুন্দর দৃশ্য তৈরি হয়েছে। লং চাং বলেন, ইতিহাসে দেখা যায়, যেখানে বৌদ্ধ ইনস্টিটিউট আছে সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়ন অনেক সুষম।

তিনি বলেন, "মন্দিরের অধিকাংশ ভবন নির্মাণের আগে স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদ মূল্যায়ন করা হয়। প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি না ঘটিয়ে এ প্রেক্ষাপটে মন্দির ভবন নির্মাণ শুরু করা হয়। হ্যাঁ, আমাদের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৌদ্ধধর্মের অনুশাসনেও উদ্ভিদ ও প্রাণী রক্ষার বিধি রয়েছে। সেজন্য যেখানে বৌদ্ধ ইনস্টিটিউট আছে সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়ন অনেক সুষম। মন্দিরের ভেতরে বড় লম্বা গাছ আছে। এ ধরনের গাছ শুধু কয়েক বছরের সময়ে দেখা যায় না। কিন্তু কয়েক'শ এমনকি কয়েক হাজার বছরের সময়ে মন্দিরে এ ধরনের বড় লম্বা গাছ দেখতে পাওয়া যায়।"

উদ্ভিদ ও প্রাণী রক্ষা ছাড়াও এ-মেই পাহাড়ের বৌদ্ধভিক্ষুরা বৌদ্ধ ধ্বংসাবশেষ রক্ষায় গুরুত্বারোপ করে।

ওয়ান নিয়েন মন্দিরকে এ-মেই পাহাড়ের 'হৃৎপিণ্ড' বলা হয়। এটি এ পাহাড়ের সবচেয়ে প্রাচীন একটি মন্দির, যা তুং চিন যুগে নির্মিত হয়েছে। মন্দিরে চীনের মিং রাজবংশের অনেক বুদ্ধমূর্তি আছে। এতে রয়েছে 'এ-মেই পাহাড়ের বৌদ্ধধর্মের তিনটি কোষাগার'।

এগুলো হলো 'বুদ্ধের দাঁত, 'ইম্পেরিয়াল সিল', 'প্যাট্রো-লিফ স্ক্রিপচার্স। এর মধ্যে মোট ২৪৬টি 'প্যাট্রো-লিফ স্ক্রিপচার্স' আছে। এগুলো হলো পালি ভাষায় লিখিত 'লোটাস সূত্র'।

মন্দিরের শিক্ষক বেনপাও পরিচয় করিয়ে বলেন, "এটি হলো 'প্যাট্রো-লিফ স্ক্রিপচার্স'। এটি একটি সম্পূর্ণ 'লোটাস সূত্র'। এটি হলো গাছের পাতা। তা পেইলুওতুও গাছের পাতা। প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এক ধরনের গাছ। একটি পাতা কয়েক মিটার চওড়া। ঔষধ দিয়ে পানিতে পাতা সিদ্ধ করার পর তার ওপর লিখতে হয়। লেখার পর এক ধরনের বিশেষ তেল দিয়ে তা মুছে দেওয়া হয়। যাতে আরো ভালোভাবে তা বজায় রাখা যায়। সিছুয়ান প্রদেশের আবহাওয়া অনেক আর্দ্র, সেজন্য এ প্রাচীন পদ্ধতির মাধ্যমে পাতা বজায় রাখতে পারা খুবই আশ্চর্যজনক।"

এ ধরনের লিখিত পাতা কয়েক'শ বছর পরও ভালো থাকে, এতে হাজার হাজার সন্ন্যাসীর চেষ্টা রয়েছে।

এ-এমই পাহাড়ের বৌদ্ধ সমিতি প্রতি বছর পাহাড়ের প্রতিটি মন্দির ভবন ও পুরাকীর্তি রক্ষা ও মেরামত করে। সি ছুয়ান প্রদেশের এ-মেই বৌদ্ধ সমিতির পরিচালক ইয়ং সৌ সন্ন্যাসী পুরো এ-মেই পাহাড়কে তিনটি পর্বে ভাগ করেছেন।

'চিনডিং' এ-মেই পাহাড়ের বৌদ্ধ তীর্থযাত্রা কেন্দ্র; 'ওয়ান নিয়েন মন্দির' এ-মেই পাহাড়ের স্ব-চাষ কেন্দ্র আর 'বড় বুদ্ধ মন্দির' হলো এ-মেই পাহাড়ের বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও শিক্ষা কেন্দ্র। এ-মেই পাহাড়ের মন্দিরের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিয়ে শিক্ষক ফা ইয়ান বলেন, এ ব্যবস্থাপনা এ-মেই পাহাড়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনা। তিনি বলেন,

"এ-মেই পাহাড়ে মোট ২৮টি মন্দির আছে। সারা পাহাড়ে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা আছে। বর্তমানে পর্যটন অর্থনীতির উন্নয়ন আরো দ্রুত হয়ে উঠেছে। যেসব মন্দিরে হটলাইন বা সুবিধাজনক পরিবহন ব্যবস্থা আছে সেসব মন্দিরে অনেক বেশি মানুষ যায়। তার পর সেসব মন্দির অনেক টাকা অর্জন করতে পারে। অন্যদিকে, যেসব মন্দিরে পরিবহন ব্যবস্থা ভালো নয়, আমরা সেসব মন্দির নিয়ে পরিকল্পনা করি। বৌদ্ধভিক্ষুরা নিয়মিতভাবে এসব মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। এ-মেই পাহাড়ের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক দু'ধরনের ঐতিহ্য রয়েছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বৌদ্ধ সংস্কৃতি। প্রতিটি মন্দিরে বিশেষ বৌদ্ধভিক্ষু আছেন, যারা কার্যকরভাবে মন্দির তত্ত্বাবধান করে থাকেন।"

ফা ইয়ান পরিচয় করিয়ে বলেন, বৌদ্ধ স্থাপত্যের মেরামত কাজ অনেক কঠিন। সেজন্য তা মেরামতের জন্য বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, যাতে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীকের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

২০১৪ সালের মার্চ মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইউনেস্কোর সদরদপ্তরে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, জাদুঘরের পুরাকীর্তি, চীনের ভূখণ্ডের ঐতিহ্য, প্রাচীন বইয়ের শব্দ আবারো জীবিত হয়ে উঠবে। চীনা সংস্কৃতি বিশ্বের বিভিন্ন জনগণের সৃষ্টি করা নতুন সংস্কৃতির সাথে একসঙ্গে উজ্জ্বল হবে।

প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com

চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান। (জিনিয়া/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040