topic
|
সম্প্রতি ভারতের ধর্মীয় গুরু সম্পর্কিত খবরগুলো নানা ওয়েবসাইটে দেখা দিচ্ছে। মহসীন, এ খবর প্রসঙ্গে প্রথমে শ্রোতাদের সংক্ষেপে বলতে পারেন?
সোমবার দু'জন নারী শিষ্যকে ধর্ষণের দায়ে ভারতের বিতর্কিত ধর্মীয় গুরু গুরমিত রাম রহিম সিং-কে ২০ বছরের সাজা দিয়েছে দেশটির সিবিআই আদালত। রাম রহিম সিং-এর সাজা নিয়ে প্রথমে কিছুটা অস্পষ্টতা তৈরি হলেও আদালতের কর্মকর্তারা পরে পরিষ্কার করে বলেছেন, তাকে দুটো মামলার প্রত্যেকটিতে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
একটির সাজার মেয়াদ শেষ হলে আরেকটির সাজা শুরু হবে। সেজন্য রাম রহিম সিংকে ২০ বছর সাজা খাটতে হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
এর আগে হরিয়ানার পাঁচকুলাতে শুক্রবার সিবিআই আদালত রাম রহিমকে ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত করলে তাঁর হাজার হাজার ভক্ত হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তাঁরা বাস- ট্রেনেও আগুন দেয়।
ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের সাজা ঘোষণার আগে হরিয়ানার রোহটাক জুড়ে গ্রহণ করা হয়েছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। সাজা ঘোষণার জন্য সোমবার জেলের ভেতরেই বসে আদালত। হেলিকপ্টারে করে উড়িয়ে নেওয়া হয় বিচারককে।
শুক্রবারের সহিংসতায় অন্তত ৩৮জন নিহত ও আরও বহু লোক আহত হওয়ার পর অভিযোগ ওঠে যে হরিয়ানা প্রশাসন পরিস্থিতি সামলাতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
সোমবার যাতে সেদিনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না-হয়, সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা নেয়া হয়েছিল।
৫০ বছর বয়সী গুরমিত রাম রহিম সিংকে এখন বন্দি রাখা হয়েছে রোহটাকের সানোরিয়া জেলে, যেটি রোহটাক শহর থেকে দশ কিলোমিটার দূরে।
শহর অভিমুখী রাস্তা আর কারাগার চত্বর ঘিরে রেখেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এবং হরিয়ানা পুলিশের সদস্যরা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর টুইটার বার্তায় ভারতীয় জনগণের প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার এক রেডিও বক্তৃতায় মোদি বলেন, বিশ্বাসের অজুহাতে সৃষ্ট যে কোনো ধরনের দাঙ্গাহাঙ্গামা অগ্রহণযোগ্য। আইনের কাঠামোয় সংশ্লিষ্ট অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
একজন ধর্মীয় গুরুকে গ্রেফতারের পর কেন এত বড় সহিংসতা?
বিশ্লেষকরা মনে করেন, রায়ের পর দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টির মূল কারণ হলো সিং এবং তার সংগঠনের উস্কানো। হরিয়ানা এবং পাঞ্জাব প্রদেশে তার সংগঠনের প্রভাব বেশি এবং ভক্তদের অধিকাংশই নিম্ন বর্ণের মানুষ।
সিং তাদেরকে সামাজিক সেবা প্রদান করে এবং সংগঠনের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করেন। এরা দীর্ঘকাল ধরে সমাজ বা রাষ্ট্রের অবহেলার শিকার।
চীনা বিশেষজ্ঞদের মতামত এই যে, ভারতে সিংয়ের সংগঠনের তুলনামূলকভাবে বড় প্রভাব অর্জনের মূল কারণ হলো: প্রথমত ভারতের সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থায় ত্রুটি আছে। কোনো কোনো ধর্মীয় দল কিছু সংখ্যক সামাজিক ভূমিকা পালন করে থাকে। দ্বিতীয়ত: ভারতীয় সরকার এসব সংগঠনকে তত্পরতা চালানোর জায়গা যুগিয়েছে এবং তাদের ওপর নিয়ন্ত্রনও তেমন কঠোর নয়।
অর্থ সংগ্রহ করা ছাড়াও, সিং ব্যাপক সংখ্যক ভক্তের কারণে রাজনীতিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সম্পদ লাভ করেন। ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির চেষ্টায় এই ধরণের ডেরা প্রধানদের সমর্থন লাভের এক ধরণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকে। নির্বাচনে ভক্তদের পছন্দের দল বা প্রার্থীকে ভোটদান করাতে পারেন তাঁরা।
যেমন ধরুন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে সিং ভারতীয় জনতা পার্টিকে সমর্থন করেন। তাই বর্তমানে ক্ষমতাসীন এই দলের সম্মানজনক অতিথি হয়ে ওঠেন রাম রহিম সিং। ভারতের সামাজিক ব্যবস্থায় সিংয়ের মতো ধর্মীয় গুরুরা আসলেই শক্তিশালী রাজনৈতিক যন্ত্র।
ভারতের সমাজবিজ্ঞানী শিভ ভিসভানাথানের বলেন, সিংয়ের মতো ধর্মীয় গুরুর সমাদর পাওয়ায় প্রমাণিত হয় যে, ঐতিহ্যবাসী রাজনীতি ও ধর্ম নিয়ে ভারতীয় জনগণ হতাশা বোধ করেন। অন্য কোন উপায় না পেয়ে তাঁরা প্রথা বিরুদ্ধ এসব ধর্ম গুরুদের কাছে চলে যেতে বাধ্য হয়। এমন ধরনের রীতিবিরুদ্ধ সংগঠন বাস্তবে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আর হাজার হাজার মানুষ যারা বাস্তব জীবন নিয়ে অসন্তুষ্ট তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
(লিলি/মহসীন)