'আজকের টপিক' অনুষ্ঠান--এইআই,আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা'
  2017-08-28 16:12:46  cri
সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। এখন শুনুন 'আকজের টপিক' অনুষ্ঠান। পরিবেশন করছি আমি জিনিয়া এবং আমি মহসীন।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, আমি বিশ্বাস করি এইআই মানে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' আপনাদের কাছে একেবারে নতুন কোন বিষয় নয়। কিন্তু এ প্রযুক্তি উন্নয়নের বিস্তারিত অগ্রগতিসংশ্লিষ্ট তথ্য জানার ব্যাপারে আপনারা নিশ্চয়ই আগ্রহী, তাই নয় কি? তাহলে আমাদের 'আজকের টপিক' অনুষ্ঠানে আপনারা মহসীন এবং আমার সঙ্গে এক সাথে এইআই জগতে প্রবেশ করুন।

এইআই কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা। এর লক্ষ্য হলো মানব মস্তিষ্ক ব্যবস্থার মত কর্মসম্পাদনে সক্ষম বুদ্ধিমান একটি মেশিন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুব চ্যালেঞ্জিং একটি বিজ্ঞান। কম্পিউটার জ্ঞান ছাড়াও এ প্রযুক্তি উন্নয়নের সাথে যুক্ত গবেষকদের মনোবিজ্ঞান এবং দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করতে হয়।

আমরা প্রতিদিন অনেক অনেক সংবাদ ও তথ্য পড়ি, তাই আমরা জানি যে এইআই উন্নয়নে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় ধরণের অগ্রগতি হয়েছে, তাইনা? কিন্তু এইআই প্রযুক্তি এবং এক 'বুদ্ধিমান সমাজ'র মধ্যে ব্যবধান কত দূর?

এই বিষয়টি কিন্তু খুব জোরে সোরে আলোচনা হচ্ছে। বেইজিংএ এখন যে বিশ্ব রোবট সম্মেলন চলছে সেখানেও এই ধরণের প্রশ্নগুলোই দর্শকরা ঘুরে ফিরে করছেন। বিষয়টি নিয়ে কিন্তু এই শিল্পের একেবারে শীর্ষ ব্যক্তিদের মধ্যেই যথেষ্ট দ্বিধা আছে। শুধু দ্বিধা নয় তাঁদের মধ্যে রীতি মত পরস্পর বিরোধী অবস্থান বিরাজ করছে। আপনি নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন আমি কাদের দিকে ইঙ্গিত করছি। জিনিয়া আপনি ঠিকই ধরেছেন। আমি ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ আর স্পেস এক্স এবং তেসলার সিইও এলান মাস্কের মধ্যকার মতপার্থক্যের কথা বলছি।

সম্প্রতি, মাস্ক ম্যাসাচুসেট ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এক বক্তৃতায় কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার বিরুদ্ধে যথেষ্ট জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা মানব জাতির অস্তিত্বের জন্য সব চেয়ে বড় হুমকি। এ ব্যাপারে তিনি সকলকে সতর্ক হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এও বলেন, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইন তৈরিরও সময় এসেছে। এটি এইজন্যই দরকার যেন আমরা খামখেয়ালী বশে বড় কোন বোকামি না করে বসি।

অন্যদিকে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা জুকারবার্গ এইআই নিয়ে খুবই আশাবাদী। তাঁর মতে যোগাযোগ প্রযুক্তির চূড়ান্ত ধাপে আমরা বাচন ক্রিয়া ছাড়াই পারস্পরিক ভাবনা বিনিময় করতে পারব। জুকারবার্গ মনে করেন, ব্যপারটি এরকম ঘটবে যে, আপনি যা ভাবছেন, আপনার বন্ধু সাথে সাথেই তা ধরতে পারবে, অবশ্য আপনি যদি তাঁকে অনুমোদন দেন তবেই। সেরকমটা বাস্তবে না হওয়া পর্যন্ত তাঁর প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাবে। কারণ, তাঁরা মনে করেন এই ধরণের কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সেবা ভবিষ্যতে তাঁদের অনেক প্রয়োজন হবে।

আচ্ছা আমরা এবার চীনে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতি নিয়ে খানিকটা আলোকপাত করতে পারি।

চীনে এ সংক্রান্ত গবেষণার যথেষ্ট বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে। দক্ষ আর কারিগরী দিক থেকে নির্ভরযোগ্য অনেক রোবট ইতোমধ্যেই তৈরি করা গেছে। এখানকার উদ্ভাবিত কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার রোবট মানুষের সাথে কথা বলতে পারে, পিয়ানো বাজাতে পারে। আর এসবের প্রদর্শনী নিয়েই বেইজিং এ এখন চলছে বিশ্ব রোবট সম্মেলন। গত বুধবার এই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য "প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ একটি সমাজ বিনির্মাণে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক উদ্ভাবন যেখানে সকলেই উপকৃত হবে"।

প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৭ সালের শেষ দিকে চীনা শিল্পকৌশল রোবট বাজারের আয়তন ৪.২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে। আর চীন গত টানা ৫ বছরে বিশ্বের বৃহত্তম রোবট বাজারের অবস্থান ধরে রেখেছে।

অনুমান অনুযায়ী, এ বছর চীনে ১ লাখ ১০ হাজার শিল্প রোবট বিক্রি হওয়ার কথা রয়েছে। এর ফলে চীনের রোবট বাজারে এ বছরের বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন যা গত বছরের তুলনায় শতকরা ২৮ ভাগ বেশী।

চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন ব্যাপারে আলিবাবার কথা উল্লেখ করতে হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা বিখ্যাত শিল্পপ্রতিষ্ঠান আলিবাবা এইআই'র উন্নয়নের অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। সম্প্রতি চীনা ই-কমার্সের নেতা, আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান জ্যাক মা চীনের হাংচৌ শহরে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির চেয়ারম্যান থমাস বেচের সঙ্গে বৈঠক করে দু'পক্ষের দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। সহযোগিতার প্রধান ক্ষেত্রগুলো হবে আলিবাবা আইওসি'র ক্লাউড কম্পিউটিং এবং ই-কমার্সের অংশীদারে পরিণত হবে। এ অংশীদারী চুক্তি ২০২৮ সাল পর্যন্ত বজায় থাকবে। চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আলী বাবা আইওসির সাথে অংশীদারী যে চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছে তা ২০২৮ সাল পর্যন্ত বলবত থাকবে তা আপনি খানিক আগেই বললেন। জ্যাক মা আইওসির প্রধানকে আশ্বস্ত করেছেন যে, তাঁর প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ কমিয়ে আনবেন যাতে তরুণরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বিশ্ব ক্রীড়া উপভোগ করতে পারে। তিনি বলেন, খেলাধুলা এবং তরুণদের সাথে বন্ধনের কাজটি করতে পারে ইন্টারনেট প্রযুক্তি। তাঁর প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে আইওসিকে চুক্তির আওতায় সর্বোত্তম সেবা দিবে।

আমরা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জুকারবার্গ এবং এলান মাস্কের মধ্যকার মতপার্থক্যের দিকে আবার দৃষ্টি ফিরাতে চাই। এ বছর এ দু'জনের মধ্যে এইআই নিয়ে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। আপনি যদি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ভিত্তিক চলচ্চিত্র দেখার ব্যপারে আগ্রহী হন, তাহলে নিশ্চয়ই টারমিনেটর সিনেমা দেখে থাকবেন। মাস্ক সেই বিতর্কে বলেছেন, আমরা যদি যথেষ্ট সতর্ক না হই, তাহলে মানব জাতির অস্তিত্বের জন্য ভবিষ্যতে এইআইর সাথে আমাদেরকে এ রকম যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া লাগতে পারে। সরকার যদি এ ব্যপারে আইনী বিধি-নিষেধ না দেন, অদুর ভবিষ্যতে রোবট হয়ত আমাদের শাসন করবে।

অন্যদিকে, জুকারবার্গ তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, তিনি আশাবাদ যে, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার নেতিবাচক দিক গুলো যথেষ্টই কমিয়ে আনা সম্ভব। তিনি মাস্ককে এ ব্যপারে অযথা ভীতি না ছড়াতে পরামর্শ দেন।

কে সঠিক বা ভুল? এখন আমরা জানি না, বর্তমানে এইআইসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কল্যাণ এনেছে। আজকের টপিক নিয়ে বন্ধুরা, আপনাদের যদি কোন মন্তব্য থাকে, আমাদের ইমেইল করে জানাবেন। আশা করি আপনারা আমাদের 'আজকের টপিক' অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন। আজ এখনেই শেষ করব। আশা করি আগামীকাল একই সময়ে আপনাদের সাথে আবার কথা হবে। ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। চাই চিয়েন।

(জিনিয়া ওয়াং/ মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040