চীনা সংস্কৃতি জানুন—চীনের পশ্চিমাঞ্চলের সংস্কৃতির ব্রিটেন সফর
  2017-08-08 14:11:19  cri
সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠান 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি'। আর এ অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু ওয়াং ছুই ইয়াং জিনিয়া।

প্রথমে কয়েকটি সাংস্কৃতিক খবর শুনবো।

চীনের একটি সাংস্কৃতিক দল সম্প্রতি 'চীনা সংস্কৃতি জানুন—চীনের পশ্চিমাঞ্চলের সংস্কৃতির ব্রিটেন সফর' ব্যানারে উত্তর ব্রিটেনের ম্যানচেস্টার শহরে গিয়েছে। সেখানে তাঁরা ম্যানচেস্টারের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে চীনের পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গীত ও নৃত্য 'ছাই ইয়ুন চুই ইয়ুয়েই' পরিবেশন করে। এই পরিবেশনা স্থানীয় দর্শকদের জন্য চীনের পশ্চিমাঞ্চলের সংস্কৃতি জানার সুযোগ করে দিয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য দফতরের প্রতিনিধি দলের পরিচালক লু কুয়াং চিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে বলেন, ম্যানচেস্টার শহর চীনা জনগণের কাছে অনেক পরিচিত। সেখানে বিশ্ব বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব রয়েছে। সম্প্রতি ভাড়ায় চালিত চীনের বাইসাইকেল রাইড শেয়ার ম্যানচেস্টারে যাত্রা শুরু করেছে। একটি অ্যাপ ব্যবহার করে ম্যানচেস্টারের বাসিন্ধারা চীনা জনগণের মত কিউআর কোড স্ক্যান করে এই সাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন। এতে চীন ও ব্রিটেনের সম্পর্ক দিন দিন আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠবে। চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে ব্রিটেনের ইতিবাচক সমর্থন রয়েছে। দু'দেশের সম্পর্ক 'স্বর্ণযুগ'-এ প্রবেশ করেছে বলতে হবে। সংস্কৃতি হল রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের বিনিময়ের ভিত্তি ও সেতু। তিনি বলেন, 'চীনা সংস্কৃতি জানুন—চীনের পশ্চিমাঞ্চলের সংস্কৃতির ব্রিটেন সফর' অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দু'দেশের জনগণের সমঝোতা ও মৈত্রী আরো গভীর হবে। চীন-ব্রিটেন সম্পর্ক সঠিক ও স্থিতিশীলভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও কার্যক্রমটি ইতিবাচক অবদান রাখবে।

পরিচালক লু কুয়াং চিন পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, চীনের পশ্চিমাঞ্চল প্রাচীন রেশম পথের কেন্দ্রবিন্দু, চীনের ভূভাগীয় আয়তনের দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে আছে। প্রাচীনকাল থেকে পূর্ব ও পশ্চিমের সেতু ছিল এই অঞ্চল। চীনের পশ্চিমাঞ্চল বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর লোকদের বাস। সেজন্য এখানে বহুমুখী সংস্কৃতি দেখা যায়। বর্তমানে এ অঞ্চলটির নতুন গুরুত্ব তৈরি হয়েছে। অঞ্চলটি রেশম পথ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মূল এলাকা। সেজন্য চীনের পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের সুপ্ত সম্ভাবনা অনেক। তাই, যারা চীন ও চীনা জনগণ সম্পর্কে জানতে চান, তাদের জন্য চীনের পশ্চিমাঞ্চল একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ইংল্যান্ডের রানীর উপ-প্রতিনিধি পল গ্রিফিতস এ'দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, 'চীনা সংস্কৃতি জানুন' ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো দু'দেশের জনগণের বোঝা-পড়া ও মৈত্রী এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ম্যানচেস্টারে আসা চীনা শিল্পীদের তিনি স্বাগত জানান। তিনি বিশ্বাস করেন, সাংস্কৃতিক বিনিময় ব্রিটেনের জনগণের কাছে বর্ণিল চীনা সংস্কৃতি তুলে ধরার বড় সুযোগ।

২০ থেকে ২৫ জুলাই 'চীনা সংস্কৃতি জানুন—চীনের পশ্চিমাঞ্চলের সংস্কৃতির ব্রিটেন সফর' ব্রিটেনের তিনটি বড় শহর লন্ডন, এডিনবার্গ ও ম্যানচেস্টারে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা, বই ও ছবি মেলা এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ ধারাবাহিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

এবারে চীনে উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রদূত বাচ জায়র সাইদরফ'র প্রবন্ধ 'মহান রেশম পথের পরী কাহিনী রাজত্ব--উজবেকিস্তান' শুনবো।

উজবেকিস্তানের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও উজ্জ্বল সংস্কৃতি আছে। এটি মধ্য এশীয় দেশ এবং প্রাচীন বাণিজ্যিক রেশম পথের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। দেশটির বৈশিষ্ট্যময় ভবন ও কারুকার্য শিল্প বিশ্ববিখ্যাত। প্রাচীনকাল থেকে হাজার হাজার পর্যটক আকৃষ্ট করেছে উজবেকিস্তান।

উজবেকিস্তানে ৭ হাজারেরও বেশী ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ও পুরাকীর্তি এবং অতুলনীয় প্রাচীন স্থাপত্য আছে। এখানকার ৯০ শতাংশ স্থাপত্যে ধর্মীয় সংস্কৃতির ছাপ দেখা যায়।

দেশের উন্নয়নে পর্যটন শিল্প উন্নত করার ওপর উজবেকিস্তান উচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে 'উজবেকিস্তানের পর্যটন শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন নিশ্চিত' বিষয়ক রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা জারী করা হয়। 'উজবেকিস্তান পর্যটন আইন' সরকারের নীতিমালা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা বইয়ে পরিণত হয়েছে।

তাছাড়া 'উজবেকিস্তানের ৫টি অগ্রাধিকার উন্নয়ন ক্ষেত্রের 'বাস্তবায়ন কৌশল'-এ পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে করনীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর লক্ষ্য শিল্পটিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কৌশলগত উপাদানে পরিণত করা যাতে তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শীর্ষ শিল্প হিসেবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে।

২০১৩ সালে চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে। এ পরিকল্পনার রেশম পথে উজবেকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের কাঠামোতে নিজ দেশের প্রাধান্য কাজে লাগিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যটন শিল্পে ইতিবাচক অবদান রেখেছে উজবেকিস্তান।

গত মে মাসে চীন ও উজবেকিস্তানের মধ্যে '২০১৭ থেকে ২০২০ মেয়াদের পর্যটন বিষয়ক সহযোগিতা উন্নয়ন চুক্তি' স্বাক্ষরিত হয়। উজবেকিস্তান চীনা পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সুবিধা বিষয়ক প্রস্তাব প্রণয়ন করছে। প্রস্তাবটি দু'দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে আরো শক্তি যোগাবে।

প্রিয় বন্ধু, সাংস্কৃতিক খবর এখানেই শেষ হলো।

চীনে আমাজন চলতি বছরের প্রথমার্ধে বই বিক্রির লিডারবোর্ড প্রকাশ করেছে। এবার শুনুন এ সংক্রান্ত একটি পর্যালোচনা।

২৫ জুলাই চীনে আমাজন ২০১৭ সালের প্রথমার্ধের বই বিক্রির লিডারবোর্ড প্রকাশ করেছে। এ বোর্ডে চীনা পাঠকদের নতুন পঠন প্রবণতা প্রতিফলিত হয়েছে। লিডারবোর্ড অনুসারে, সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ক বই ও দেশি-বিদেশী ক্লাসিক বই পাঠকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে। অন্যদিকে টিভি নাটকসহ বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট বই বাজারে প্রাধান্য বজায় রাখছে।

চীনে আমাজন প্রকাশিত বইয়ের লিডারবোর্ডে কাগজ বই, কিন্ডল'র পেইড ই-বই, কাগজের নতুন বই ও কিন্ডল'র নতুন পেইড ই-বইসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। বইয়ের লিডার বোর্ড অনুসারে, ২০১৭ বছরের প্রথমার্ধে কাগজ বইয়ের সেরা-বিক্রিত বইয়ের প্রথম তিনটি হলো 'চিয়ে ইয়ো জা হুও ভু', 'উও মেন সা' ও হোমো দেওস : আ ব্রিফ হিস্টরি অফ টোমোরো ।

আর কিন্ডল'র পেইড ই-বই তালিকার প্রথম তিনটি বই হলো 'রেন মিন দ্যা মিং ই', 'চিয়ে ইয়ো জা হুও ভু'  ও 'ফল অব জায়ান্টস'।

চীনে আমাজন বইয়ের অপারেশনস পরিচালক মিস্টার কিম পরিচয় করিয়ে বলেন যে, কাগজ বইয়ের প্রথম দশ সেরা-বিক্রি তালিকায় ৩টা সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ক বই স্থান করে নিয়েছে। বইগুলো হলো হোমো দেওস : আ ব্রিফ হিস্টরি অফ টোমোরো, আ ব্রিফ হিস্টরি অফ মেন কাইন্ড এবং 'রেশম পথ—নতুন বিশ্বের ইতিহাস'।

"সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ক বই আবার পাঠকদের প্রিয় তালিকায় ফিরে এসেছে।"

তাছাড়া টিভি নাটকসহ বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট বই বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যেমন 'রেন মিন দ্যা মিং ই' টিভি নাটক প্রচার হওয়ার তিন মাসের মধ্যে একই শিরোনামের বইটির বিক্রি সংখ্যা নাটকটি প্রচারের আগের ৩ মাসের চেয়ে ১২গুণ বেড়েছে।

এদিকে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আমাজন-চীন 'জনগণের পাঠ প্রতিবেদন' প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৫৬ শতাংশ পাঠকের বার্ষিক বই-পড়ার গড় সংখ্যা ১০টি ছাড়িয়ে গেছে। ৮৫ শতাংশ পাঠক কাগজ বই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল বইও পড়েছে।

বন্ধুরা, 'আমাজন-চীনের চলতি বছরের প্রথমার্ধে বইয়ের লিডারবোর্ড প্রকাশের ওপর পর্যালোচনাটি শুনলেন।

প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ আমাদের অনুষ্ঠানের মান বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। আমার ইমেইল ঠিকানা- hawaiicoffee@163.com

চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। সঙ্গে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান।

(জিনিয়া/লিলি/মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040