আজকের টপিক ৭ আগষ্ট
  2017-08-07 16:21:57  cri


সম্প্রতি সিকিমের ডোকলাম সীমান্ত অঞ্চলে ভারতীয় সেনাদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ভারতে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস চীন সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছে।

গত ২ আগস্ট, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় 'ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী চীন-ভারত সীমান্তের সিকিম অংশ অবৈধভাবে অতিক্রম করা সংক্রান্ত প্রকৃত ঘটনা ও চীনের অবস্থান' প্রকাশ করে। গত ১৮ জুন ভারতীয় বাহিনী বেআইনিভাবে ডোকলামে চীনা ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। এরপর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমবার লিখিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সঠিক ঘটনা এবং এতে চীনের অবস্থান পরিষ্কার করে। সরকারী বক্তব্যে বলা হয়, ভারত কর্তৃক মীমাংসিত সীমানা অতিক্রম এবং ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ চীনের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা, আন্তর্জাতিক আইন এবং যেসকল মৌলিক রীতিনীতিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালিত হয় তার লঙ্ঘন।

এই বেআইনি কাজকে সঠিক বলে প্রচার করতে ভারত নানা অজুহাত আবিস্কার করেছে। প্রকৃত সত্য হল- গত ১৬ জুন তিব্বত স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের ইয়াদং জেলার ডোংলাম অঞ্চলে চীন একটা রাস্তা নির্মাণ করছিল। ১৮ জুন ২৭০ জন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী অস্র ও দুটি বুলডোজার নিয়ে সিকিম সেক্টরে সীমানা অতিক্রম করে চীনের ১০০ মিটার ভিতরে প্রবেশ করে রাস্তা নির্মাণ কাজে বাঁধা দেয়। সেখান থেকেই এই উত্তেজনার সৃষ্টি।

এক পর্যায়ে তাঁরা সেখানে ৪০০ সৈন্যের সমাবেশ ঘটায় চীনা সীমান্তের ১৮০ মিটার ভিতরে তিনটি তাবু স্থাপন করে। জুলাই মাসের শেষ অব্দি সেখানে তাঁদের ৪০ জন সৈন্য ও একটি বুল ডোজার সেখানে বেআইনি ভাবে অবস্থান করছিল।

লেনিন, প্রশ্ন হচ্ছে, ডোংলাম বা ডোকালাম কি সত্যই চীনের ভূখণ্ড ? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ । ১৮৯০ সালে সিকিম ও তিব্বত নিয়ে চীন ও গ্রেট ব্রিটেন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির প্রথম অনুচ্ছেদে বলা আছে সিকিম এবং তিব্বতের সীমানা হবে সিকিমের তিস্তা নদ ও তিব্বতের ভিতর দিয়ে উত্তর দিকে প্রবাহিত নদীর অববাহিকা আলাদাকারী পর্বতমালা। এই লাইনটি ভুটান সীমান্তে গিপমোচি পর্বতে যা জি মু মা জেন নামে পরিচিত।

চুক্তি অনুযায়ী, ডোংলাং অঞ্চল চীন-ভারত সীমান্তের চীন অংশে অবস্থিত এবং অবিসংবাদিতভাবে চীনের ভূখণ্ড। সীমান্তের স্থিতিশীলতা অনতিক্রম্যতা আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতি। ১৮৯০ সালের চুক্তি অনুযায়ী সিকিমে চীন-ভারত সীমান্ত অব্যহতভাবে বৈধ এবং পুনঃপুনঃ ভাবে চীন এবং ভারত কর্তৃক স্বীকৃত। উভয় পক্ষ কঠোরভাবে এই সীমানা মেনে চলতে বাধ্য।

আরেকটি প্রশ্ন – ভুটান এই ঘটনায় জড়িত কিনা ?

উত্তর হচ্ছে না।

১৮৯০ সালের চুক্তিতে পরিস্কার বলা আছে সিকিম সেক্টরে চীন- ভারত সীমান্ত ভুটান অংশে গিপমোচি পর্বত পর্যন্ত বিস্তৃত। জি মু মা জেন পর্বত সিকিম সেক্টরে চীন-ভারত সীমান্তের পূর্ব দিকের সুচনা প্রান্ত এটি চীন-ভারত- ভুটানের তিন সীমান্তের সংযোগ স্থল।

সিকিম সেক্টরে চীন-ভারত সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর অনুপ্রবেশ এমন একটি জায়গায় ঘটিয়েছে যা জি মু মা জেন থেকে ২০০০ মিটার দূরে। ভুটানের তিন দেশের সীমান্ত সংযোগ স্থল এই ঘটনায় কোন ভাবেই প্রাসঙ্গিক নয়।

এদিকে, ৩ আগস্ট, চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য ডোকলাম ঘটনায় চীন সরকার সংযম বজায় রেখেছে। কিন্তু সংযমেরও একটি সীমা আছে। ধীরে ধীরে চীন সরকারের অবস্থান পরিবর্তিত হবে, ভারতকে এমন অবাস্তব প্রত্যাশা না করার আহ্বান জানান চীনের মুখপাত্র।

একই দিন, ভারতে চীনা দূতাবাসের মিনিস্টার লিউ চিন সুং দেশটির গণমাধ্যমে চীনের অবস্থান বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। তিনি ভারতকে বিনাশর্তে সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান। সঙ্গে সঙ্গে চীন সরকার ও জনগণের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ড রক্ষার সদিচ্ছাকে অবমূল্যায়ন না করার তাগিদ দেন।

ডোকলাম ঘটনার পর চীন কূটনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু এখনো ৪০ জনের বেশি ভারতীয় সেনা সীমান্তে রয়েছে। এ ঘটনা কিভাবে সমাধান করা যায়, তা চীনের অবস্থান থেকে কিছুটা বোঝা যায়।

প্রথমত, ডোকলাম ঘটনার প্রকৃত কারণ, ভারতীয় সেনাদের অবৈধভাবে চীনের ভূখণ্ডে প্রবেশ করা। এ ঘটনার জন্য দায়ী ভারত।

এ ঘটনার পর থেকে ভারত ভিত্তিহীনভাবে 'ডোকলাম ভুটানের অংশ' বা 'বিতর্কিত ডোকলাম অঞ্চলে চীনের রাস্তা নির্মাণের' অজুহাতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। চীন ঐতিহাসিক চুক্তি ও কূটনৈতিক দলিলের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, চীন-ভারত সীমান্তের সিকিম অংশ পূর্ব নির্ধারিত। চীন-ভারত-ভুটানের সীমান্ত পয়েন্ট গিপমোচি পাহাড়ে অবস্থিত। ডোকলাম নিঃসন্দেহে চীনের অংশ।

ভারতীয় সেনাদের সীমান্ত পার হওয়ার ঘটনা খুব গুরুতর, তা অমিমাংসিত সীমান্ত অঞ্চল অতিক্রমের চেয়ে আলাদা।

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে।

ভারত যে অজুহাতে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছে তা আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নীতি লঙ্ঘন করেছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, ভুটান একটি স্বাধীন দেশ, তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। চীন ও ভুটানের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে আলোচনা সুষ্ঠুভাবে চলছিলো এবং ব্যাপক মতৈক্য হয়েছে। ভারতের হস্তক্ষেপের কারণে এ আলোচনার আনুষ্ঠানিক দলিল এখনো স্বাক্ষর হয়নি এবং দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক এখনো প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি।

তৃতীয়ত, এবারের সংকট সমাধান হবে কি-না, তা ভারতের ওপর নির্ভর করছে।

এ সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় হলো ভারতীয় সেনাদের বিনাশর্তে সরে যাওয়া। চীন দু'দেশের সম্পর্ক ও জনগণের কল্যাণ বিবেচনায় দু'দেশের সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, চীন নিজের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ড রক্ষা করতে পারে না! চীন আশা করে, সীমান্ত অঞ্চলের সমস্যা না বাড়ানোর সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে ভারত।

আজকের টপিক এ পর্যন্তই। সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040