অরণ্যের সমুদ্রে জীবনের মূল্য সৃষ্টি করুন
  2017-08-04 19:24:57  cri

সাইহানবা রাষ্ট্রীয় বন প্রকল্প চীনের হোপেই প্রদেশ আর অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। এ বন বেইজিং থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে। ৫৫ বছর আগে এ বন সৃজন শুরুর সময় এখানে ছিল ধূধূ মরুভূমি। এখন তা পরিণত হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম বনে। কারা এমন বিস্ময়কর কাজ করেছেন? আজের 'সংবাদ পর্যালোচনা' অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত তথ্য জানাবো।

ইয়ু শি থাও আর ফু লি হুয়া সাইহানবা বন প্রকল্পে কর্মরত এক দম্পতি। ইয়ু শি থাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর এ বন প্রকল্পে চাকরি পেয়েছেন। এখন তিনি এখানে এক শাখা কারখানার প্রধান। তাঁর স্ত্রী ফু লি হুয়া চীনের বন একাডেমি থেকে বন বিষয়ক মাস্টার ডিগ্রি লাভ করার পর বেইজিংয়ে তিন বছর কাজ করেন। এর পর স্বামীর সঙ্গে পুনর্মিলনের জন্য নিজের চাকরি ছেড়ে সাইহানবা বন প্রকল্পে যান। এখানে আসার পর প্রথম দিকে ফু লি হুয়ার ভালো লাগতনা। তিনি বলেন, 'বেইজিংয়ের রাত্রের জীবন অনেক সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। কিন্তু এখানে তেমন সাংস্কৃতিক বিনোদন নেই। রাতের বেলা মনে হয় অনেক লম্বা, সত্যি একাকী বোধ করি।'

সাইহানবা চীনের অধিকাংশ বন প্রকল্পের মতো দূরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে লোকজন কম, অবকাঠামো অনুন্নত। ফু লি হুয়া মানসিকভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু যারা আরো আগে এখানে কাজ করতে এসেছিলেন, তাঁদের আরো কঠোর বাস্তবিক জীবনের শর্ত সহ্য করতে হতো।

প্রকল্পের সুরক্ষা স্টেশনের প্রধান কুও ছি ফাং স্মৃতি থেকে বলছেন, 'এখনো স্পষ্ট মনে আছে, ২০০০ সালের ৯ জুলাই আমি এখানে আসি। ১০ জুলাই আমি পাহাড়ে উঠি। জুলাই মাস হচ্ছে বর্ষাকাল। বনে গাড়ি যেতে পারে না। খাদ্যশস্য ও শাকশব্জি পাঠাতে পারে না। পাহাড়ে থাকা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। হাতের কাছে যা পাই, তাই খেতে হয়। মাঝে মাঝে টানা ছয় সাত দিন ধরে বৃষ্টি ঝরে। কোন সবজি নেই, তখন কেবল সাদা ভাত খেতে হয়। তাছাড়া বিদ্যুতও নেই। একাকী বোধ করি। তখন ভাবতাম, ২০০০ সাল এসেছে, বনের বাইরে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা এতো উন্নত হয়েছে, আমাদের এখানে এমন অবস্থা কেন?'

এমন কঠিন অবস্থা আর একাকী জীবনের সম্মুখীন হয়ে কেউ কেউ চলে গেছে। কেউ কেউ নানা বিবেচনা করার পর থেকে গেছে।

বিজ্ঞান গবেষণালয়ের প্রধান চেং সুন এখানে থেকে গেছেন। তিনি বলেন, 'প্রথমে আমিও ভেবেছিলাম, এতো কষ্টকর জায়গা, আমিও চলে যাই। কিন্তু কিছু দিন থাকতে থাকতে, বনের প্রতি আমার আবেগ তৈরি হয়েছে। এখানে আমার বন বিষয়ক জ্ঞান আর সামর্থ্য কাজে লাগাতে পারে। এখন আমার করনীয় অনেক কাজ আছে। আমার জ্ঞান দিয়ে অন্য কর্মীদের অনেক সাহায্য করতে পারি। ফলে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি এখানে কাজ করবো। বাস্তব ফলাফলে প্রমাণিত হয়েছে, আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে আমি সত্যি সত্যি অনেক কাজ করেছি।'

কুও চি ফাং বনের পোকা প্রতিরোধ কাজে মনোযোগ দিয়েছেন। কারণ সাইহানবা একটি কৃত্রিম বন। কীটপতঙ্গের আক্রমণ এ বনের অন্যতম মারাত্মক বিপদ। কুও চি ফাং আর তাঁর সহকর্মীরা একসাথে কীটপতঙ্গ প্রতিরোধে পূর্বাভাস দেওয়ার বৈজ্ঞানিক উপায় আবিষ্কার করেছেন। তাদের পূর্বাভাস নিঁখুত হওয়ার হার ৯০ শতাংশের ওপর। কীটপতঙ্গ প্রতিরোধের জন্য তাঁরা পরিবেশ–বান্ধব ব্যবস্থা নেন। রাসায়নিক ওষুধ কম ব্যবহারের চেষ্টা করেন, যা পরিবেশ সুরক্ষার জন্য ভালো। এখন সাইহানবায় প্রতিবছর মাত্র ১০ শতাংশ বনাঞ্চলে কীটপতঙ্গ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া দরকার হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। বছরের পর বছর সাধারণ কাজের মধ্য দিয়ে সাইহানবার অধিবাসীদের নিজেদের জীবনের মূল্য প্রতিফলিত হয়েছে। চেং শুন বলেন, 'মানুষ বেঁচে থাকলে স্বাধীন মূল্য থাকতেই হবে। কেউ জানেন, ১ যোগ ১ সমান দুই। তুমিও এটা জানো, এটি অতি সাধারণ। যদি তুমি আরো জটিল গণনা দিয়ে বাস্তব চাহিদা মেটাতে পার, সেটাই তোমার অসাধারণ গুণ, সেটাই তোমার মূল্য।'

ইয়ু শি থাও ২০০৫ সালে সাইহানবায় এসেছেন। প্রথমদিকে তিনিও একাকী বোধ করে অস্থির হতেন। পরে তিনি বিশাল এ বন সমুদ্রকে ভালোবেসেছেন। তাকে দেখে তাঁর স্ত্রী ফু লি হুয়াও সাইহানবাকে নিজের আবাস হিসেবে মেনে নিয়েছেন। এ বন হলো তাদের বাড়ি। ইয়ু শি থাও বলেন,'আমার স্ত্রী জানে, নগরের বাড়ি আমাদের কাছে হোটেলের মতো। কেবল বনের বাড়িতে ফিরে গেলে সত্যি নিজের আবাসে ফিরার মতো সাচ্ছন্দ লাগে। কেবল আমরা কেন, এখানে অনেকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে বন প্রকল্পকে নিজের বাড়ি মনে করেন। বেশী করে বৃক্ষরোপণ করলে অতুলনীয় আনন্দ বোধ করি।'

সাইহানবা বন প্রকল্পে ইয়ু শি থাও আর ফু লি হুয়ার মতো আরো অনেক কর্মী আছেন। তাদের পরিশ্রমে সাইহানবা বিশ্বে বৃহত্তম কৃত্রিম বনে পরিণত হয়েছে। তার নামের মতো সত্যিকার 'সুন্দর উচ্চ পর্বতমালায়' পরিণত হয়েছে।

(ইয়ু/ মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040