বৃক্ষরোপণ থেকে সবুজ উন্নয়ন
  2017-08-03 18:27:46  cri

বেইজিং শহরের উত্তর প্রান্ত থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে ৭৪ হাজার ৭০০ হেক্টর কৃত্রিম বন আছে। এর নাম হোপেই সাইহানবা রাষ্ট্রীয় বন। এটি বিশ্বের বৃহত্তম কৃত্রিম বন। বিগত অর্ধ শতাব্দীতে সাইহানবা অঞ্চলের অধিবাসীরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম পরিশ্রম করে বেলেমাটিতে অরণ্যের এই সমুদ্র সৃষ্টি করেছেন এবং এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক সবুজ উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছেন।

'সাইহানবা' মঙ্গোলীয় শব্দ, এর অর্থ 'সুন্দর ও উচ্চ পর্বতমালা'। গ্রীষ্মকাল হচ্ছে সাইহানবা বনে সবচেয়ে সুন্দর সময়। এসময় বহু পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। চীনের বন একাডেমির সূত্রে জানা গেছে, সাইহানবা বনের আয়তন ৭৪ হাজার ৭০০ হেক্টর। এই বনের মাধ্যমে প্রতি বছর ১৩ কোটি ৭০ লাখ ঘনমিটার পানি বিশুদ্ধ হয় আর শোষিত হয় বায়ুমণ্ডলের ৭ লাখ ৪৭ হাজার টন কার্বন ডাই-অক্সাইড। এ বন প্রায় ২০ লাখ মানুষের এক বছরের অক্সিজেন যোগান দেয়।

সাইহানবার বর্তমান সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে বসে এ বন সৃজনের প্রথম দিকের দৃশ্য কল্পনা করা যায়না। অবসরে যাওয়া এ বন খামারের কর্মী চাং পাও স্মৃতি হাতরে বলেন, 'আগে এখানে প্রবল বালিঝড় হত। বসন্তকালের বালিঝড় ছিল সাদা রঙের। কারণ তখন ঝড়ের সঙ্গে বরফও পরত। শরত্কালের বালিঝড় ছিল হলুদ রঙের। কারণ তখন প্রচুর বালি থাকত। এমন কী, দিনের বেলায় ঘরে বাতি জ্বালাতে হতো, নইলে কিছু দেখা যেতো না।'

১৯৬২ সালে চীন সরকার সাইহানবায় রাষ্ট্রীয় বন খামার প্রতিষ্ঠা শুরু করে। সাইহানবায় বছরে প্রায় সাত মাস তুষার জমে থাকে। শীতকালে সেখানকার তাপমাত্রা শূন্যের নিচে ৪৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে নেমে যায়। এমন কঠিন বিরূপ অবস্থায় ৩৬৯ জন যুবক নিয়ে গঠিত বন খামার প্রতিষ্ঠার প্রথম কর্মী দল সাইহানবায় পৌঁছে। তাদের গড়পড়তা বয়স ছিল মাত্র ২৪ বছর। তাঁরা বৈজ্ঞানিক ও উদ্ভাবনী চিন্তা দিয়ে চরম শীতল অঞ্চলে বৃক্ষরোপণের প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান করেন এবং বিশ্বের বন গবেষণা ক্ষেত্রে কিছু প্রযুক্তিগত শূন্যতা দূর করেন।

সাইহানবা বনের গড় উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার। এর উত্তরে হুনশানদাক মরুভূমি। এটা চীনের দশটি বড় মরুভূমির অন্যতম। সাইহানবার দক্ষিণ প্রান্তের বেইজিংয়ের সঙ্গে সরাসরি দূরত্ব ২০০ কিলোমিটারের কম। অতীতে এটি বেইজিংয়ে বালিঝড় প্রবেশের প্রধান দিক ছিল। এখন বিশ্বের বৃহত্তম এই কৃত্রিম বন কার্যকরভাবে হুনশানদাক মরুভূমির বালি দক্ষিণ দিকে যাওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকের কাজ করে।

এখন বেইজিংয়ে বসন্তকালে বালি ছড়ানো দিনের সংখ্যা গত শতাব্দীর ৫০'র দশকের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সাইহানবা বনের জলবায়ুও স্পষ্টত উন্নত হয়েছে। এ বনাঞ্চলে মোট ১৭৫৭ ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদ রয়েছে। কৃত্রিম বন সৃষ্টির পর সাইহানবার অধিবাসীরা বন সম্পদ চিরস্থায়ী ব্যবহার করার ব্যাপারে চিন্তা করা শুরু করেন।

বন খামারের উপপ্রধান চেন চি ছিং বলেন, 'আমাদের মূল নীতি হলো বন প্রতিষ্ঠায় সবসময় প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষাকে সবার ওপরে স্থান দেওয়া। বৈজ্ঞানিক ও সুশৃঙ্খলভাবে উপযুক্ত উন্নয়ন করতে হবে। কেবল স্বার্থের কথা চিন্তা করলে হবে না। সাইহানবার টেকসই উন্নয়ন আর স্থায়ী ব্যবহারযোগ্যতা হচ্ছে প্রথম বিষয়।' ২০১২ সাল থেকে সাইহানবা বনের কাঠ থেকে আয় অতীতের ৯০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ হ্রাস হয়েছে। এর পাশাপাশি তাঁরা সক্রিয়ভাবে বন পর্যটন শিল্প, নতুন চারার লালন আর বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুত উত্পাদনসহ নানা সবুজ শিল্পের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ২০১৩ সালে সাইহানবা বন খামারের ৩০টি স্তর এলাকায় যথাক্রমে পানি, বিদ্যুত, সড়ক আর ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তিন বছর আগে এখানে গরম পানি দিয়ে গোসল করা কঠিন বিষয় ছিল। এখন তা সহজেই সম্ভব। সাইহানবা বন খামারের প্রধান লিউ হাই ইং বলেন, 'কেবল বৃক্ষরোপণ করবো তা নয়, আমরা সঠিক নিয়মে বন রক্ষা করবো, এখানকার অবকাঠামো উন্নয়ন করবো। বনের গুণগত মান উন্নত করবো যাতে সবুজের পাহাড় সবসময় থাকে আর বন স্থায়ী হয়।' (ইয়ু/ মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040