সিডনি অপেরা হাউসে চীনের ঘন্টা সঙ্গীত পরিবেশন
  2017-08-02 09:59:51  cri
সুপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠান 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি'। আর এ অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু ওয়াং ছুই ইয়াং জিনিয়া।

প্রথমে কয়েকটি সাংস্কৃতিক খবর শুনবো।

চীনের ষ্টেট ইনফরমেশন সেন্টার ও ইউনিভার্সিটি ফর ন্যাশনালিটিজ অব চায়না 'এক অঞ্চল এক পথ' জাতীয় সংস্কৃতি 'বিগ ডেটা' কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে গত সোমবার বেইজিংয়ে একটি কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

চুক্তি অনুযায়ী,উভয়পক্ষ যৌথভাবে 'এক অঞ্চল এক পথ' জাতীয় সংস্কৃতি 'বিগ ডেটা' কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে এবং একইসাথে 'এক অঞ্চল এক পথ' নেটওয়ার্ক নির্মাণ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

তাছাড়া, প্রতিষ্ঠান দু'টি থিংক ট্যাংক তৈরি এবং আন্তর্জাতিক বিনিময় ও সহযোগিতা বিনিময় করবে। পাশাপাশি, 'বিগ ডেটা' বিষয়ক বিশেষ দক্ষ জনবল লালন এবং প্রযুক্তির নবায়ন ও গবেষণা কাজ পরিচালনা করবে।

পাকিস্তানে চীনের দূতাবাস গত ২৩ জুলাই 'আন্তর্জাতিক চীনা ভাষা শিক্ষক বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রকল্প'-এ অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে সে দেশ ত্যাগের প্রাক্কালে ৪০ জন শিক্ষককে বিদায় জানান। এই পাক শিক্ষক দলটি বেইজিংয়ে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করবে।

'আন্তর্জাতিক চীনা ভাষা শিক্ষক বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রকল্প' চীন-পাকিস্তান সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি পর্ব হিসেবে, পাকিস্তানে চীনের দূতাবাস, বেইজিং শিক্ষা সমিতি এবং বেইজিংয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র যৌথ ভাবে আয়োজন করছে। প্রশিক্ষণকালে পাকিস্তানের এই শিক্ষকবৃন্দ চীনের রাজধানীতে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা এবং আধুনিক শিক্ষাপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা ছাড়াও, রাজপ্রাসাদ যাদুঘর, স্বর্গীয় মন্দির, গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ ও মহা প্রাচীরসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ও পুরাকীর্তি পরিদর্শন করবে। একই সঙ্গে চীনের লোক সঙ্গীত অনুষ্ঠান উপভোগ এবং কুংফু প্রশিক্ষণে অংশ নিবে।

জানা গেছে, পাকিস্তানে চীনের দূতাবাস এ নিয়ে টানা তিন বছর পাক শিক্ষকদের চীনে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের ১২০জন শিক্ষক ইতোমধ্যেই এ প্রশিক্ষণ প্রকল্পে অংশ নিয়েছে।

পাকিস্তানে চীনা দূতাবাসের অস্থায়ী রাষ্ট্রদূত চাও লি চিয়েন, পাকিস্তানের উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা সমিতির নির্বাহী পরিচালক আরশাদ আলীসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে চাও লি চিয়েন বলেন, চীন-পাকিস্তান মৈত্রী উন্নয়ন বজায় রাখার ব্যাপারে শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ প্রশিক্ষণ প্রকল্প শুধু ভাষা শেখার প্রকল্প নয়, বরং তা চীনের সংস্কৃতি ও চীনা জীবনধারা জানার একটি সুযোগ।

আরশাদ আলী চীন সরকারের উদ্যোগে এ প্রশিক্ষণ প্রকল্পের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর অর্জিত জ্ঞান, চীনের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং তাদের সুন্দর স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা সাথে করে আনার আশা প্রকাশ করেন তিনি ।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, সাংস্কৃতিক খবর পর্ব এখানে শেষ।

এবারে শুনুন সিডনি অপেরা হাউসে চীনের ঘন্টা সঙ্গীত পরিবেশন শিরোনামে একটি সাংস্কৃতিক প্রবন্ধ।

বন্ধুরা, প্রবন্ধটি শুরুর আগে আমি চীনের প্রথাগত যন্ত্র 'ঘন্টা' নিয়ে পরিচয় করিয়ে দিবো।

'ঘন্টা' হলো আঘাতের মাধ্যমে শব্দ সৃষ্টি করা হয় এমন প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। সাধারণত ব্রোঞ্জ দিয়ে এ ঘন্টা তৈরি করা হতো। একটি সাধারণ ঘন্টা থেকে দু'ধরনের শব্দ পাওয়া যায়। কিন্তু ঘন্টা দিয়ে কি যন্ত্রসঙ্গীত সৃষ্টি করা যায়? এটি দিয়ে কীভাবেই বা নিরবিচ্ছিন্ন শব্দ তৈরি করা যেতে পারে? প্রাচীনকালে চীনা মানুষ এটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছিল। তার পর তাঁরা বিভিন্ন ধরনের ঘন্টা তৈরি করে, যাতে আঘাত করলে বিভিন্ন ধরনের বা টোনের শব্দ উত্পন্ন হয়। ঘন্টাগুলোকে একটার পর একটা সাজিয়ে রাখার পর সারিবদ্ধ এই ঘন্টার ধারণা পাওয়া যায়। ঘন্টার আকার অনুযায়ী শব্দের আকারও কম-বেশী হতে লাগলো। ছোট ঘন্টায় ছোট ধ্বনি, মাঝারি ঘন্টায় মাঝারি স্বরের ধ্বনি, বড় ঘন্টায় বড় ধ্বনি। দেখা গেল, সঙ্গীতের স্কোর অনুসারে বিভিন্ন ঘন্টা বাজিয়ে সুন্দর সঙ্গীত সৃষ্টি করা যাচ্ছে।

সাড়ে তিন হাজার বছর আগে চীনের শাং রাজবংশ আমলে ব্যবহৃত 'সারিবদ্ধ ঘন্টা' পাওয়া গেছে। সারিবদ্ধ ঘন্টা ছিল সমাজের উচ্চ শ্রেণীর লোকদের বাদ্যযন্ত্র। শুধুমাত্র রাজদরবারেই এ যন্ত্রের বাজনা শোনা যেত। যুদ্ধ বা রাজকীয় কোন উত্সব অথবা বলিদানের সময় সারিবদ্ধ ঘন্টাগুলো বাজানো হতো। সারিবদ্ধ ঘন্টার শব্দ বেশ পরিষ্কার, মিষ্টি ও তীক্ষ্ণ হয়ে থাকে। এগুলো ছিল রাষ্ট্রীয় সম্পদ। শাং রাজবংশের সারিবদ্ধ ঘন্টা হচ্ছে ৩টি ঘন্টার একটি সেট।

জেং হৌ ই'র সমাধিতে পাওয়া সারিবদ্ধ ঘন্টা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি সেট। এ সেটের ৬৪টি ঘন্টার মোট ওজন ৫টন। সেটটিতে আলাদা ৮টি স্তর রয়েছে, প্রতিটি স্তরের ৩টি লাইনে ঘন্টাগুলো ঝুলানো আছে। ৬৪টি ঘন্টার সবচে ভারীটির ওজন ২০৩.৬ কেজি, উচ্চতা ১.৫ মিটার। ব্রোঞ্জ দিয়ে সুচারুভাবে তৈরি করা হয়েছে এ ঘন্টাগুলো। দীর্ঘদিন ধরে মাটির নিচে থাকার পরও ঘন্টাগুলোর কোন ধরনের ক্ষতি হয়নি। এ ঘন্টাগুলো বিশ্বের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শুধু তাই নয়, এগুলো সঙ্গীত ইতিহাসের অনন্য এক উপাদান হিসেবেও স্বীকৃত।

আচ্ছা, এবার তাহলে শুনুন প্রবন্ধটি।

২৩ জুলাই সন্ধ্যায় চীনের যুদ্ধমান রাষ্ট্রসমূহের যুগের ঘন্টা জাতীয় সঙ্গীত প্রথম বারের মত অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত সিডনি অপেরা হাউসে বাজিয়ে শোনানো হয়েছে। চীনের শিল্পীরা স্থানীয় দু'হাজারেরও বেশী দর্শকের সামনে এক অডিও ও ভিজুয়াল পর্ব পরিবেশন করেন। ঘন্টা সঙ্গীতে চীনের প্রাচীন সঙ্গীতের সংস্কৃতি উপভোগ করেন দর্শকরা।

চীনের হু বেই প্রদেশের পারফর্মিং আর্টস গ্রুপ এবং আওফেং সংস্কৃতি কমিউনিকেশন কোম্পানী লিমিটেডের উদ্যোগে এ পারফর্মেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এ'দিন সন্ধ্যায় মঞ্চে ৬৫টি জেং হৌ ই'র সমাধিতে পাওয়া সারিবদ্ধ ঘন্টা প্রদর্শন করা হয়। চীন থেকে অস্ট্রেলিয়ায় পৌছার পর ৫ টনের এ ঘন্টার সংযোজন ও নামিয়ে রাখতে ৬ ঘন্টা সময় লাগে। এই ঘন্টা সেট দেখার সুযোগ খুবই সীমিত। সে সন্ধ্যার অনুষ্ঠান দর্শকদের তুমুল করতালি কুড়িয়েছে। অনুষ্ঠানে যেসব সঙ্গীত পরিবেশন করা হয় তা হল: 'হে ভিং জি সেং'(শান্তির ভয়েস), জাতীয় ক্লাস ওয়ান সম্পন্নকারী গায়ক ছিন সুং দ্যা'র গাওয়া 'সান সিয়া ছিং'(সান সিয়া'র প্রেম) ও 'উও সিয়াং স্যু হুয়া থিয়েন সাং লাই'(তুষারের মত আকাশ থেকে আসি আমি), জাতীয় ক্লাস ওয়ান বাদ্যযন্ত্রবাদক সিয়াং হং ইয়াং'র বাজানোতে 'তুয়ান ছিয়াও স্যু সি'(তুয়ান ছিয়াও সেতু'র গল্প), জাতীয় ক্লাস ওয়ান সম্পন্নকারী গায়ক মা ইয়া ছিন'র গাওয়া হুবেই প্রদেশের বিখ্যাত সঙ্গীত 'হং হু স্যুই লাং দা লাং'(হং হু নদীর তরঙ্গ), 'বেই সিয়াং মেই ইয়ও ইয়েন লেই' (দুঃখের কোন অশ্রু নেই), 'রেশম পথ' এবং 'আমার দেশ' ইত্যাদি।

এই শিল্পীরা বিশ্বের ২০'টিরও বেশি দেশে পারফর্ম করেছেন। যেমন চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং'র মিশর সফরে তাঁরা লাক্সর মন্দিরের সামনে ঘন্টা সঙ্গীত বাজিয়ে শোনিয়েছেন। তাছাড়া জার্মানীর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের নেতাদের জন্যও তাঁরা পারফর্ম করেন।

প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের মূল্যবান পরামর্শ আশা করছি। আমার ইমেইল ঠিকানা- hawaiicoffee@163.com

চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানে 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।

বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। সঙ্গে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান।

(জিনিয়া/মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040