সুপ্রিম কোর্টের ৫ জন বিচারপতি নিয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেয়। রায় অনুসারে, পাকিস্তানের জাতীয় হিসাব নিরীক্ষা ব্যুরো আনুষ্ঠানিকভাবে শরীফ, তার দুই ছেলে এবং মেয়ে ও জামাইয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে। তদন্তকাজ ৬ সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত যৌথ তদন্তগ্রুপের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাণিজ্য থেকে পাওয়া শরীফের পরিবারের বড় অংকের অর্থের উত্স স্পষ্ট করা হয়নি। লন্ডনে বিলাশবহুল ফ্লাটের মালিকানা নিয়ে শরীফের পুত্র মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
নেওয়াজ শরীফের বয়স ৬৭ বছর এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি ছিল তার তৃতীয় কার্যমেয়াদ। তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি একে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সম্প্রতি তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন,
'মনে রাখবেন, যে-কোনো ঘটনাই ঘটুক, আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগই সত্য নয়। সরকারি অর্থ নয়-ছয় করার অভিযোগও আমার বিরুদ্ধে নেই। তারা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে ঘায়েল করতে চায়।'
রায় ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নেওয়াজ) এক বিবৃতিতে বলেছে, দুর্নীতির সাথে নেওয়াজ শরীফ পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়কে পার্টি সম্মান করে।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নেওয়াজ)-এর সদস্য এবং পাক তথ্যমন্ত্রী মারিয়াম ওরাঙ্গজেইব বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় হতাশাজনক। পাকিস্তানে সংবিধান ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের ধারা ইতোমধ্যেই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন,
'রাজনৈতিক অঙ্গন, জনগণের অন্তর, ও ইতিহাসে নেওয়াজ শরীফ বরাবরই সফল একজন নেতা।' মারিয়াম জানান, নেওয়াজ শরীফ দলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
এদিকে, রায় প্রকাশের পর বিরোধী দলের সমর্থকরা সুপ্রিম কোর্টের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উল্লাস করে। পাকিস্তানের জনমতও এই রায়ের পক্ষে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। 'ডন' পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: সুপ্রিম কোর্ট ২৮ জুলাই শরীফের মামলায় এক দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শরীফ এবং তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির ওপর অভূতপূর্ব তদন্তকাজও চলছে। পাকিস্তানের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত এ রায় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। শরীফের ক্ষমতাচ্যুতি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কোনোভাবেই হুমকির মুখে ঠেলে দেবে না। তবে রাজনৈতিক সংঘাত দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারে।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাজহার আব্বাস বলেন, এই রায় দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি বলেন,
'এই রায়ের তাত্পর্য অনেক। এ রায় গণতন্ত্র সুসংহত করতে পারে, আবার তা গণতন্ত্রকে দুর্বলও করতে পারে। তবে এ রায় পাকিস্তানকে দুর্নীতিমুক্ত করতে সহায়ক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।'
নেওয়াজ শরীফ প্রধানমন্ত্রিত্ব হারালেও, তার দলের একজনই দেশের পরবর্তী প্রধানন্ত্রী হবেন। কারণ, সংসদে তার দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ইতোমধ্যেই নেওয়াজ শরীফ তার ছোট ভাই, পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়নও দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। (লিলি/আলিম)