চীন-যুক্তরাষ্ট্র সার্বিক অর্থনৈতিক সংলাপ হচ্ছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষনেতাদের গত বারের বৈঠকের একটি ফলাফল। চীনা উপ-প্রধানমন্ত্রী ওয়াং ইয়াং ও মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন এবং বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস যৌথভাবে এবারের সংলাপে সভাপতিত্ব করেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু খাং গতকাল (বৃহস্পতিবার) বেইজিংয়ে জানিয়েছেন, সংলাপে দু'পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার 'শত দিনের পরিকল্পনা' ও 'এক বছরের পরিকল্পনা', বিশ্ব অর্থনীতি ও প্রশাসন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি, ফাইনান্সিং ও কৃষি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে এবং ব্যাপক মতৈক্যে পৌঁছেছে।
লু খাং বলেন, এবারের সংলাপ বাস্তব ও গঠনমূলক সংলাপ। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হচ্ছে এ সংলাপ দু'দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার সঠিক নির্দেশনা দিয়েছে। সহযোগিতা ও উপকারিতা হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক আর্থ-বাণিজ্য সম্পর্কের মূল ভিত্তি, সংলাপ ও আলোচনা হচ্ছে মতভেদ নিষ্পত্তির প্রধান পদ্ধতি, গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বিষয়ে নীতিগত আদানপ্রদান হচ্ছে সহযোগিতার মূল উপায়।
এবারের সংলাপে বাণিজ্যিক ঘাটতি কমাতে গঠনমূলক সহযোগিতা চালাতে দু'পক্ষ একমত হয়েছে। দু'দেশের পরিষেবা শিল্পে সহযোগিতা জোরদার করা, পরস্পরে বিনিয়োগ বাড়ানো, আরো উন্মুক্ত, ন্যায়সংগত, সচ্ছল ও সুবিধাজনক বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি করা, উচ্চ প্রযুক্তির বাণিজ্য উন্নয়ন জোরদার করা এবং শিল্প খাতে সহযোগিতার মান উন্নীত করা উচিত।
চীনের উপ-অর্থমন্ত্রী জু কুয়াং ইয়াও বলেন, দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা কমাতে চাইলে চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে হবে। তাছাড়া, চীনের প্রতি বেসামরিক উচ্চ-প্রযুক্তি পণ্যদ্রব্যের রপ্তানির ওপরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক লু ফেং মনে করেন, এ সংলাপের আয়োজন থেকে বোঝা যায়, দু'পক্ষ উভয়ই সংলাপ ও পরামর্শের মাধ্যমে মতভেদ দূর করতে ইচ্ছুক। তিনি বলেন, এবারের সংলাপের মাধ্যমে দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা দিয়েছে। চীন হচ্ছে উদীয়মান বড় দেশ, আর যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে উন্নত বড় দেশ। নতুন পরিস্থিতিতে দু'দেশের মধ্যে নতুন সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। এবারের সার্বিক অর্থনৈতিক সংলাপ আয়োজন করার আগে, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দু'দেশের মধ্যে ৮ দফা কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সংলাপ আয়োজিত হয়। এ ব্যবস্থা বর্তমান দু'দেশের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য খুব সহায়ক হবে।
চীনের সমাজবিজ্ঞান একাডেমির বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক জাং ইয়ু ইয়ান জানান, বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেক অনিশ্চয়তা থাকায় বাণিজ্যিক সংরক্ষণবাদের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে দু'দেশের মধ্যে সার্বিক অর্থনৈতিক সংলাপ শুধু দু'দেশের ভবিষ্যত সহযোগিতার জন্য নয়, সারা বিশ্বের অর্থনীতি উন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, অনিশ্চয়তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের উদ্বেগ কমাতে এ সংলাপ খুব সহায়ক হবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই একসাথে বসে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে চায়, এটাও খুব ইতিবাচক ইঙ্গিত।
সংলাপে দু'পক্ষ সামষ্টিক অর্থনীতির নীতিগত আদানপ্রদান জোরদার, ফাইনান্সিং তত্ত্বাবধান জোরদার ও আর্থিক বাজারের উন্নয়নে বাস্তব সহযোগিতা জোরদার, জি-২০ কাঠামোতে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রশাসন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার এবং বিশ্বের অর্থনীতির টেকসই ভারসাম্য ও সহিষ্ণু উন্নয়নে যৌথ প্রচেষ্টা চালাতে একমত হয়েছে।
(স্বর্ণা/টুটুল/মুক্তা)