সংবাদ পর্যালোচনা প্রসঙ্গ: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আফ্রিকার শান্তি ও নিরাপত্তা সামর্থ্য বাড়ানোসংক্রান্ত উন্মুক্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত
  2017-07-20 16:45:02  cri
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মাসের পালাক্রমিক সভাপতিদেশ চীনের উদ্যোগে গতকাল (বুধবার) আফ্রিকার শান্তি ও নিরাপত্তা সামর্থ্য বাড়ানোসংক্রান্ত উন্মুক্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেহিস, আফ্রিকান ইউনিয়নের শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিনিধি ইসমাইল চেরগুই এবারের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবং ভাষণ দেন।

জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি লিউ চিয়ে ই বলেন, আফ্রিকার শান্তি ও নিরাপত্তা সামর্থ্য বৃদ্ধি আফ্রিকাসহ সারা বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য অনুকূল। তিনি বলেন, বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা আলাদা করা যায় না। আফ্রিকার শান্তি ও নিরাপত্তা সামর্থ্য বাড়ানো আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন স্বার্থের সঙ্গে জড়িত এবং নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেহিস তার ভাষণে প্রথমে চীনকে এ উদ্যোগ নেওয়ায় ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আফ্রিকার ওপর আন্তর্জাতিক সমাজের পূর্বধারণা পরিবর্তন করা উচিত। আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং এর ভিত্তিতে উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা মঞ্চ সৃষ্টি করা উচিত। শান্তি ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে আফ্রিকান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের অভিন্ন উদ্বেগ রয়েছে। সংঘর্ষ অবনতি হওয়ার আগে তাকে নিষ্পত্তি করা উচিত এবং সংঘর্ষ মোকাবিলার সামর্থ্য বাড়ানো উচিত। আফ্রিকার শান্তি ও নিরাপত্তা সামর্থ্য বাড়লে তা হবে আফ্রিকার নিজের স্বয়ংসম্পূর্ণতার ক্ষমতা বাড়ানো এবং তা আন্তর্জাতিক সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তা উভয়ের জন্য অনুকূল।

গত ১৯ এপ্রিল জাতিসংঘ ও আফ্রিকান ইউনিয়ন 'শান্তি ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের সম্পর্ক জোরদারসংক্রান্ত অভিন্ন কাঠামো চুক্তি' স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী, দু'পক্ষ আফ্রিকায় সংঘর্ষ নিবারণ, মোকাবিলা ও নিষ্পত্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করবে।

আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রতিনিধি ইসমাইল তার দেওয়া ভাষণে এবার আফ্রিকাসংক্রান্ত সম্মেলন আয়োজনে কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, আফ্রিকান ইউনিয়ন সব সময় আফ্রিকান জনগণের সাথে এ মহাদেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন বাস্তবায়নে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ মহাদেশে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দীর্ঘকালীন সংঘর্ষ এবং সমাজ প্রশাসনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে সন্ত্রাসবাদ এখন অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। আফ্রিকান বাহিনীর সামর্থ্য ও আর্থিক সমর্থন অভাবের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সমাজ আফ্রিকান দেশ ও আফ্রিকান ইউনিয়নকে যদি আরো বেশি সমর্থন দিতে পারে তাহলে তা এ মহাদেশের জন্য অনেক অনুকূল হবে।

ইসমাইল বলেন, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অব্যাহত সহযোগিতা খুব জরুরি। দু'পক্ষকে পারস্পরিক সাহায্যের মাধ্যমে আফ্রিকার '২০৬৩ এজেন্ডা' এবং জাতিসংঘের '২০৩০ এজেন্ডা' বাস্তবায়নে যৌথ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

চীনা প্রতিনিধি লিউ চিয়ে ই আফ্রিকার শান্তি ও নিরাপত্তার উন্নয়নে চারটি প্রস্তাব দেন। প্রথমত, জাতিসংঘ ও আফ্রিকান ইউনিয়নের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সুসংহত করে সংঘর্ষ নিবারণ ও মোকাবিলা এবং পরের পুনর্গঠনে সহযোগিতা জোরদার করা উচিত। দ্বিতীয়ত, আফ্রিকান ইউনিয়নের স্বাধীন শান্তিপূর্ণ অভিযানে সমর্থন দিয়ে আফ্রিকা মহাদেশের সংকট মোকাবিলার প্রধান পক্ষ এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পূর্ণকরণ শক্তি হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তৃতীয়ত, আফ্রিকার সংঘর্ষ ঘটার মূল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন এবং সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টির পরিবেশ বদলে দেওয়া। চতুর্থত, জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা প্রচেষ্টাকে জোরদার করা।

তিনি আরো বলেন, চীন সব সময় আফ্রিকান দেশগুলোকে নিজের পদ্ধতিতে সমস্যা সমাধানে সমর্থন করে আসছে। জাতিসংঘের আফ্রিকায় শান্তি রক্ষা অভিযানে চীন খুব সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। এখন প্রায় ২৫০০ চীনা শান্তিরক্ষী সৈনিক আফ্রিকায় কাজ করছে। চীন 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রকল্পের কাঠামোতে আফ্রিকান দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা চালিয়ে আফ্রিকা মহাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে ইচ্ছুক।

(স্বর্ণা/টুটুল/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040