সংবাদ পর্যালোচনা প্রসঙ্গ: বেইজিংয়ে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের চারটি মতামত
  2017-07-19 14:55:34  cri
গতকাল (মঙ্গলবার) বেইজিংয়ে সফররত ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। বৈঠককালে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে চীনা প্রেসিডেন্ট চারটি মতামত প্রকাশ করেন। চীন আগের মতো ভবিষ্যতেও ফিলিস্তিন সমস্যায় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে। আব্বাস চীনের সমর্থন ও গঠনমূলক প্রস্তাবের উচ্চ মূল্যায়ন করেন। দু'পক্ষ দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা সার্বিক উন্নয়নে যৌথ প্রচেষ্টা চালাবে বলে একমত হয়েছে।

বৈঠককালে চীনা প্রেসিডেন্ট চীন-ফিলিস্তিন সম্পর্কের উচ্চ মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন, চীনে একটি প্রবাদ আছে, 'পুরনো বন্ধুত্ব যেন খাঁটি সোনার মত, শত বার গলালেও তার রং পরিবর্তন হয় না'। ফিলিস্তিনের জাতীয় প্রতিরোধ আন্দোলনকে গোড়ার দিকে সমর্থনকারী এবং ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র'কে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের মধ্যে চীন অন্যতম। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দু'দেশের জনগণের মধ্যে পাস্পরিক সমঝোতা, আস্থা রয়েছে। এ দীর্ঘ সময় ধরে দু'দেশ পরস্পরকে সমর্থন করে আসছে। দু'দেশ আসল বন্ধু, অংশীদার ও ভাই।

সি চিন পিং বলেন, ফিলিস্তিনের সঙ্গে রাজনৈতিক সমর্থনে অবিচল থেকে সমন্বয় জোরদার করে উচ্চ পর্যায়ের আদানপ্রদান বজায় রেখে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক চীন। ফিলিস্তিনের সঙ্গে 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রকল্পে শিল্প পার্ক নির্মাণ, মানব সম্পদ প্রশিক্ষণ ও সৌর শক্তি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে সহযোগিতা চালাতে ইচ্ছুক চীন।

জবাবে প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন এবার তাঁর চতুর্থ চীন সফর এবং প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে এবার দ্বিতীয় বার বৈঠক। তিনি ফিলিস্তিনে বহু চীনা প্রতিনিধি দলকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। এসব পারস্পরিক সফর দু'দেশের ঐতিহ্যবাহী মৈত্রীকে আরো সুসংহত করে তুলেছে।

ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, 'দ্বি রাষ্ট্র প্রস্তাবের' ভিত্তিতে রাজনৈতিক পদ্ধতিতে যৌথ ও টেকসই নিরাপত্তাবোধে অবিচল থেকে আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে সহযোগিতা করে শান্তি ও নিরাপত্তা বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

চীনা উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাং মিং বৈঠকের পর ফিলিস্তিন নিয়ে বেইজিংয়ের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, চীন 'দ্বি রাষ্ট্র প্রস্তাব' সমর্থন করে এবং ১৯৬৭ সালে নির্ধারিত সীমান্তের ভিত্তিতে পূর্ব-জেরুসালেমকে রাজধানী হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে চীন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২৩৩৪ নম্বর প্রস্তাব মেনে নিয়ে দখলকৃত ভূমিতে ইহুদি বসতি নির্মাণ বন্ধ ও নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে হামলা বন্ধ করে আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানায় চীন। আন্তর্জাতিক সমাজকে আরো ঘনিষ্ঠ সমন্বয় করে রাজনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি ফিলিস্তিন-ইসরাইল সহযোগিতাকে সামনে আগানোর আহ্বানও জানায় চীন। ফিলিস্তিন ও ইসরাইল উভয়ই 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে চীন-ফিলিস্তিন-ইসরাইল তৃপক্ষীয় বৈঠক ব্যবস্থা গঠন করার দাবি জানায় চীন ।

বৈঠকের পর ফিলিস্তিনের উন্নয়নে চীনের সমর্থনের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সম্মান জানানোর জন্য চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং'কে 'ফিলিস্তিন রাষ্ট্রীয় পদক' প্রদান করেন প্রেসিডেন্ট আব্বাস। এ নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি শুধু আমার একার সম্মান নয়, বরং অনেক দিন ধরে ফিলিস্তিন বিষয়ে চীনের ন্যায়সংগত অবস্থানের জন্য স্বীকৃতি। এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর ফিলিস্তিনের গুরুত্বারোপ এবং চীনা জনগণের প্রতি ফিলিস্তিনি জনগণের গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ অনুভূতির প্রতিফলন। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যাই হোক না কেন চীন আগের মত ভবিষ্যতেও ফিলিস্তিনের ন্যায়সংগত প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়াকে সামনে উন্নয়নের পথে চীন অবিচল থাকবে।

একই দিন দু'দেশের নেতাদের উপস্থিতিতে দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

(স্বর্ণা/টুটুল/মুক্তা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040