শুইখৌ গ্রাম উন্নয়ন
  2017-07-22 15:27:57  cri

চীনের চিলিন প্রদেশের থুমেন শহরের ইউয়েছিং থানার শুইখৌ গ্রাম চীন-উত্তর কোরিয়া সীমান্তে অবস্থিত। গ্রামটির আয়তন ৩.৭৮ বর্গকিলোমিটার। গ্রামে ৮১টি পরিবার। লোকসংখ্যা মোট ৩১৩। এর মধ্যে কোরীয় জাতির লোকসংখ্যা ৯৮ শতাংশ। সম্প্রতি গ্রাম কমিশনের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এটি সমৃদ্ধ হয়েছে। ২০১৫ সালের শেষ দিকে এসে গ্রামবাসীদের গড় আয় আগের চেয়ে তিন গুণ বৃদ্ধি পায়। গ্রাম তত্ত্বাবধান কমিশনের পরিচালক মাদাম সুই মি ইউ বলেন, "প্রতিবছর ফুলের চারা কিনে আমরা সড়ক ও পার্কে লাগাই। গ্রামের নেতাদের নেতৃত্বে আমরা একসঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষার কাজ করি। যারাই আমাদের গ্রামে আসেন, তারাই এর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলেন। তাদের কথা শুনলে আমাদের খুব ভালো লাগে।"

আগেই বলেছি, শুইখৌ গ্রাম চীন-উত্তর কোরিয়া সীমান্তে অবস্থিত। গ্রামের কৃষকরা ঐতিহ্যগত পদ্ধতিতে ধানের চাষ করতো। এক সময় গ্রামের বহু মানুষ জীবিকার তাগিদে বাইরে চলে যায়। গ্রামটির রাস্তা-ঘাটও ভালো ছিল না। বছরের অধিকাংশ সময়ই গ্রামবাসীদের বড় একটা অংশ কর্মহীন হয়ে পড়তো। তাদের জীবনমান ছিল অনুন্নত। গ্রামটির কমিউনিস্ট পার্টির কমিশনের সম্পাদক জিন কুয়াং স্যিউ বলেন, "ইয়ানবিয়ান জেলার অধিকাংশ মানুষ কোরীয়। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সন্ধানে যেতো। আবার অনেকেই চীনের উপকূলীয় এলাকায় কাজ করতো। এতে গ্রামে শ্রমশক্তির অভাব প্রকট হয়। জমি আছে, কিন্তু চাষ করার মানুষ নাই। এটি ছিল আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।"

এমনি প্রেক্ষাপটে গ্রাম উন্নয়নে এবং গ্রামবাসীদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৭ সাল থেকে জিন কুয়াং স্যিউ'র নেতৃত্বে বহিরাগতদের কাছে ভূমি বর্গা দেওয়ার সিস্টেম চালু হয়। প্রতি হেক্টর জমি দেওয়া হতে শুরু করে ১৩০০ ইউয়ানের বিনিময়ে। এতে জমির ব্যবহার বাড়ে এবং গ্রামবাসীর আয় বাড়ে।

২০০৮ সালে গ্রামে কৃষক সমবায় সমিতি গঠিত হয়। সমিতির সদস্য ৪৫টি পরিবার। তাঁরা মূলত মরিচ, তরমুজ, বাঙ্গি ইত্যাদি চাষ করেন। ৭০ হেক্টর জমিতে এসব চাষ করা হয়। এরপর গ্রামটিতে একে একে গঠিত হয় চাল চাষী সমবায় সমিতি ও কৃষি যন্ত্রপাতি সমবায় সমিতি। ফলে গ্রামের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়।

তিন বছরের প্রচেষ্টায় ২০১০ সালে গ্রামবাসীদের বছরে মাথাপিছু গড় আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৮২০০ ইউয়ানে। কিন্তু ততোদিনে নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এসব সমস্যার মধ্যে আছে জমির বর্গা নিয়ে বিরোধ, কৃষি ভর্তুকি নিয়ে সমস্যা, জমি বিক্রি করে দেওয়া, ইত্যাদি। এ সম্পর্কে জিন কুয়াং স্যিউ বলেন, "দেশের নিয়ম অনুসারে জমি বিক্রি করা যায় না। অথচ এ সমস্যা সৃষ্টি হলো। আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শেয়ার সুবিধাসম্বলিত পেশাদারি খামার প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিই। এ খামারে সকল গ্রামবাসী অন্তর্ভুক্ত হয়। গ্রামটির কমিউনিস্ট পার্টির কমিশন ও গ্রাম কমিশন সরাসরি খামারটি পরিচালনা করে থাকে।"

২০১০ সালের ডিসেম্বরে গ্রামটির নেতারা ভূমিসম্পদের পুরোপুরি ব্যবহার এবং নতুন কৃষি ও শিল্প উন্নয়নের নতুন ধারণা নিয়ে কাজ শরু করেন। গ্রামের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে একীকরণ করা হয়। এতে পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, ও বিক্রয়ের একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ৭৫টি পরিবারের সদস্যরা এ ব্যবস্থায় অংশ নেন। এ ব্যবস্থার আওতায় জমির আয়তন ১৩৭ হেক্টর। এ ব্যবস্থায় খামারটি জমির জন্য গ্রামবাসীদের বাজারের চেয়ে বেশি অর্থ দেয়। তারা গ্রামবাসীদের সঙ্গে দশ বছর মেয়াদি চুক্তি করে। দশ বছর পর পর জমির মূল্য পুনঃনির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়।

খামার প্রতিষ্ঠার শুরুতে সিদ্ধান্ত হয় যে, নিট মুনাফার ৩০ শতাংশ শেয়ার অনুপাতে গ্রামবাসীরা পাবেন। বাকি ৭০ শতাংশ খামার উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু প্রথম তিন বছর গ্রামবাসীরা মুনাফা না-নিয়ে সেটা খামারে পুনঃবিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সম্পর্কে জিন কুয়াং স্যিউ বলেন, "প্রথম কয়েক বছরে আমরা অনেক সাফল্য পেয়েছি। এ পর্যন্ত আমাদের খামারে ব্যবহৃত কৃষি সরঞ্জামের মূল্য ৩৬ লাখ ইউয়ান। বিগত পাঁচ বছরে খামারটিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। এখন ১৫০ হেক্টর জমিতে যন্ত্রের মাধ্যমে চাষবাস হচ্ছে।"

খামার ব্যবস্থায় শুইখৌবাসী চারটি খাত থেকে আয় করে: জাতীয় কৃষি ভর্তুকি; জমির ভাড়া; খামারে কাজ করা; এবং বছরশেষে প্রাপ্ত লভ্যাংশ। এখন গ্রামবাসীদের আয় নিশ্চিত হয়েছে এবং তাদের জীবন হয়েছে আগের তুলনায় অনেক সমৃদ্ধ।

খামার প্রতিষ্ঠার পর শুইখৌ গ্রামে ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধি, বিশুদ্ধ বায়ু, নিরাপদ খাবার পানি, দূষণমুক্ত পরিবেশ, কৃষিপণ্যের বৈচিত্র্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক কাজ শরু হয়। গ্রামটি ইতোমধ্যেই একটি অর্গানিক চাল উত্পাদন কারখানা নির্মাণ করেছে। শাংহাইয়ের পাওশান এলাকার খাদ্য ও তেল বাণিজ্য কোম্পানি গ্রামটিতে বিনিয়োগ করেছে।

২০১৫ সালে শুইখৌ গ্রামের চাল উত্পাদন কারখানা ৫ লাখ ইউয়ান মূল্যের যন্ত্রপতি কেনে এবং ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করে। তাঁদের উত্পাদিত চাল প্রতিকেজি ১০ ইউয়ান করে, যা স্থানীয় চালের চেয়ে দ্বিগুণ মূল্যের। এ সম্পর্কে জিন কুয়াং স্যিউ বলেন, "এ পর্যন্ত আমরা ১৫ লাখ ইউয়ান বিনিয়োগ করেছি। আমরা দুটি কারখানা নির্মাণ করেছি। এ বছর আরও ১০ লাখ ইউয়ান বিনিয়োগ করবো। এ বছর গ্রামবাসীদের আয় আগের চেয়ে দ্বিগুণ বাড়বে। আমরা অর্থনীতি উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নে চেষ্টা করছি।"

গ্রামবাসীর জন্য চিকিত্সা বীমা, দুর্ঘটনা বীমা, বাড়ি বীমার ব্যবস্থা আছে। প্রবীণ সংস্থা ও নারী সংস্থা গড়ে উঠেছে গ্রামে। বর্তমানে গ্রামটিতে দরিদ্র পরিবার আছে মাত্র ১৫টি এবং খুবই দরিদ্র পরিবার ৩টি। এই দরিদ্র ও অতি দরিদ্র পরিবারগুলোকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে গ্রাম কমিশন মুরগির খামার নির্মাণে সহায়তা দিয়েছে।

শুউখৌ গ্রামের অনেকেই এখন নিজ গ্রামে ফিরে আসতে শুরু করেছে। এ সম্পর্কে গ্রামবাসী কমিশনের নারী কমিটির পরিচালক ছুই শুন চিন বলেন, "আমি শুইখৌ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছি। আমিও বাইরে কাজ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফিরে এসেছি। এখন আমাদের গ্রাম খুবই সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন।"

দশ বছর আগে জিন কুয়াং স্যিউ শুইখৌ গ্রামের কমিউনিস্ট পার্টির কমিশনের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে গ্রামের আরও উন্নয়ন ও গ্রামবাসীর জীবনমান আরও উন্নত করা তার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ তিনি গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করতে চান।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040