স্থানীয় গণমাধ্যম মনে করে এসব কেন্দ্রীয় স্বার্থ জড়িত বিষয়ে ব্রিটেন ও ইইউ'র মধ্যে বড় মতভেদ রয়েছে, তাই আলোচনা সফল হওয়া অনেক কঠিন একটি বিষয়।
স্থানীয় সময় সোমবার সকালে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের সদরদপ্তরে এ আলোচনা শুরু হয়। কর্মসূচি অনুযায়ী, চারদিনব্যাপী দ্বিতীয় দফা আলোচনা আগামী ২০ তারিখ পর্যন্ত চলতে থাকবে। এ বিষয়ে ইইউ'র প্রধান আলোচক মাইকেল বার্নিয়ার ও ব্রিটেনের প্রতিনিধি ডেভিড ডেভিস আলোচনা শুরু হওয়ার আগে একসাথে সাংবাদিকদের কাছে একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়েছেন। বার্নিয়ার বলেন, এবারের আলোচনায় কেন্দ্রীয় স্বার্থ জড়িত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। আমাদের দু'পক্ষের অবস্থান ও উদ্বেগ তুলনা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা নাগরিক অধিকার, আর্থিক পরিশোধ এবং আয়ারল্যান্ডের বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। এসব আলোচনা 'লিসবন চুক্তির' ৫০ ধারা অনুসারে শুরু হবে।
ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার আলোচনা গত ১৯ জুন ব্রাসেলসে শুরু হয়। দু'পক্ষ এ আলোচনা দুই ধাপে আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়। প্রথম ধাপে নাগরিক অধিকার ও আর্থিক পরিশোধ এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড সীমান্ত ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা। প্রথম ধাপে যথার্থ অগ্রগতি অর্জিত হলে ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে। দু'পক্ষ একমত হয়েছে যে প্রতি মাসে এক সপ্তাহে আলোচনা, অন্য সময়ে বিভিন্ন প্রস্তাব ও পরামর্শ নিয়ে মত বিনিময় করা। প্রথম ধাপে তিনটি গ্রুপে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ডেভিড ডেভিসও বলেন, গত মাসে শুরু হওয়া আলোচনা একটি সুষ্ঠু সূচনা করেছে। এখন মূল বিষয় আলোচনার পর্যায়ে এসেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমাদের কাছে আলোচনার অগ্রগতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দু'পক্ষের মধ্যে কি কি মতভেদ আছে, কিভাবে নিষ্পত্তি করা যায় এবং কি কি ঐক্যমিল আছে, তা কিভাবে জোরদার করা যায়, এসবের মাধ্যমে আলোচনার সাফল্য নিশ্চিত করতে হবে।
নাগরিক অধিকার ক্ষেত্রে ইইউ'র আশা হচ্ছে ব্রিটেনে বসবাসকারী ৩২ লাখ ইইউ সদস্য দেশের নাগরিকদের অধিকার আগের মত থাকবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্রিটেনের মতামত হল ইইউ'র সদস্য দেশের নাগরিক হলেও তাদের ব্রিটেনে বসবাসের অনুমতি আছে কিনা তাও দেখতে হবে। যদিও ব্রিটেনের প্রস্তাব নিয়ে ইইউ'র ভিন্ন মত রয়েছে তবুও নিজের প্রস্তাব ন্যায়সংগত বলে মনে করে ব্রিটেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ব্রিটিশ সরকারের উত্থাপিত নাগরিক অধিকার প্রস্তাব ন্যায়সংগত এবং যথার্থ, তা ৩২ লাখ ইইউ নাগরিকদের জন্য একটি সুষ্ঠু প্রস্তাব। তাদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করবো। সবাই সঠিকভাবে এ প্রস্তাব বিবেচনা করবে বলে আমরা আশা করি।
আর্থিক পরিশোধের ব্যাপারেও দু'পক্ষের মতভেদ রয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জাঁ-ক্লদ ইয়ুঙ্কার প্রায় ৬০০০ কোটি অর্থ ইইউ'কে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনসন মনে করেন, ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ব্রিটেনকে এত বেশি অর্থ দিতে হলে তা হবে 'ব্ল্যাকমেইল', যা গ্রহণযোগ্য নয়।
দু'পক্ষের প্রতিনিধিরা জানেন এবারের আলোচনায় এগিয়ে যাওয়া খুব কঠিন কাজ। তারা আগামী বৃহস্পতিবার আলোচনা শেষে বিস্তারিত তথ্য জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যম মনে করে কেন্দ্রীয় স্বার্থ জড়িত বিষয়ে 'ব্রেক থ্রু' অর্জন হওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ।
(স্বর্ণা/টুটুল/মুক্তা)