0717topic
|
আজ চীনের পরিসংখ্যান ব্যুরো চলতি বছরের প্রথমার্ধের অর্থনীতির হাল রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে চীনের জিডিপি'র মোট পরিমাণ ৩৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০০ কোটি ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৯ শতাংশ বেশী।
চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীলতার মধ্যে অগ্রগতি অর্জন করছে বলে মনে করা হয়। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, প্রাথমিক শিল্প বা কৃষি,বন,মত্স্য শিল্পের বৃদ্ধির পরিমাণ ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৭০ কোটি ইউয়ান। এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ৩.৫ শতাংশ। শিল্প ও আবাসন খাতে প্রবৃদ্ধির হার ৬.৪ শতাংশ আর পরিসেবা খাতে প্রবৃদ্ধির হার ৭.৭ শতাংশ।
চীনা নাগনিকদের ভোক্তা মূল্য সূচক বা সিপিআই চলতি বছরের জুন মাস গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৫ শতাংশ বেড়েছে।
উৎপাদন মূল্য সুচক বা পিপিআই তুলনা করলে জুন মাসে চীনের এ সংখ্যা আগের চেয়ে ৫.৫ শতাংশ বেড়েছে,যা গত বছরের একসই সময়ের বৃদ্ধির তুলনায় ০.২ শতাংশ কম।
পুঁজি বিনিয়োগ সূচকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত চীনের স্থায়ী সম্পদ বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮ লাখ ৬০৫০ কোটি ইউয়ান,যা গত বছরের তুলনায় ৮.৬ শতাংশ বেশি।
ভোক্তা ও আয়ের দিকে বিবেচনা করলে চলতি বছরের প্রথমার্ধে সমাজের পণ্যদ্রব্যের বিক্রির পরিমাণ ১৭ লাখ ২৩ হাজার ৬৯০ কোটি ইউয়ান,যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৪ শতাংশ বেশি।
আবাসন খাতে চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের প্রধান ৫০টি শহরের বিক্রির পরিমাণ একটানা ৩ মাস হ্রাস পেয়েছে। জুলাই মাসে চীনের ইজ্যু রিয়েল এস্টেট গবেষণা সংস্থার প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, জুন মাসে ৫০টি শহরের মধ্যে নতুন নির্মিত বাড়িঘরের বিক্রির পরিমাণ গত মাসের চেয়ে ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে,যা একটানা তিন মাসের মতো অব্যাহত আছে। তাদের মধ্যে প্রধান ও বড় শহরে এ হ্রাসের প্রবণতা আরো স্পষ্ট।
ঋণের দিকে দেখলে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, জুন মাসে চীনের রেনমিনপি'র ঋণ ১.৫৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বেড়েছে,তার তুলনায় আমানতের পরিমাণ কিছুটা দুর্বল। ব্রড মানি - এম২'র প্রবৃদ্ধির হার ৯.৪ শতাংশ। টানা দুই মাস এই হার ১০ শতাংশের নিচে বিরাজ করছে।
জুন মাসে বার্ষিক আয় ২ কোটি ইউয়ানেরও বেশি শিল্পের বৃদ্ধির হার ৭.৬ শতাংশ এবং জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত বৃদ্ধির হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৯ শতাংশেরও বেশি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক ক্রেতা ব্যবস্থাপক সুচক বা পিএমআই জুন মাসে ৫১.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে যা গত মাসের তুলনায় ০.৫ শতাংশ বেশি। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসেবা শিল্পের জরিপ কেন্দ্রের সিনিয়ার পরিসংখ্যানবিদ চাও ছিং হো বলেছেন, পিআমআইয়ের দ্রুত বৃদ্ধি থেকে বোঝা যায় চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীল অগ্রগতি অর্জিন করেছে।
চীনের অর্থনীতিতে প্রণোদনায় ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। ব্যক্তিগত শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সমর্থন দেওয়ার জন্য বিদায়ি বছরের জুন মাসে চীনা প্রধানমন্ত্রী চীনের ৫টি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে সার্বিক অর্থ বিভাগ স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে দুই মাসের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে এ বিভাগ গঠিত হয়েছে। তা থেকে বোঝা যায়, চীনের ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কৃষিজাতের অর্থ পুঁজি সংগ্রহসহ বিভিন্ন বিষয় সমাধানে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সার্বিক অর্থ উন্নত করতে চাইলে শুধু আর্থিক সংস্থার প্রয়াস আর সরকারের নীতিমালার সমর্থন দরকার তা নয়,বরং সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পূরণ করতে হবে। ঋণ চলাচলের গতি ও পরিমাণের মধ্য দিয়ে জানা যাবে তা বাস্তব অর্থনীতিতে প্রয়োগ হয়েছে কিনা। বিশেষ করে কৃষিজাত ও ক্ষুদ্র শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দিয়েছে কিনা, অন্য দিকে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকির এড়াতে যথাযথ পরামর্শ দেওয়া উচিত।
চীনের অর্থনীতর উন্নয়নের রিপোর্ট উপস্থাপনের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।
পাশাপাশি, বাংলাদেশ ও চীনের অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আপনার মতামত কী?
বাংলাদেশে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেট কার্যকর হয়েছে। অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত গত ১ জুন জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব করেন।
বাজেটের আকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। এতে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে কর রাজস্ব আদায় লক্ষ্য মাত্রা ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থ বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া কর বহির্ভূত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ২৭ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রী চেয়েছিলেন এই অর্থ বছর থেকেই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করতে যেখানে বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভ্যাটের হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। নানা মহল থেকে সমালচনার পর প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে শেষ পর্যন্ত এই আইন কার্যকর দুই বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কর আহরণে ২০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি তৈরি হবে।
চলতি বাজেটে টাকার অঙ্কে জিডিপির আকার ঠিক করা হয়েছে ২২ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। এতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। সরকারী হিসেবে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
পণ্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে- এমন পূর্বাভাস দিয়েই ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার চেষ্টা থাকছে বাজেটে।
তবে সর্বশেষ যে খবর সেটি অনুযায়ী খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। খাদ্য আমদানিতে সরকারের খরচ বেড়েছে। খাদ্য মজুদ ২ লাখ টনের নীচে নেমে আসায় সরকার জরুরী ভিত্তিতে ৫ লাখ টন চাল আমদানী করছে। তাছারা, প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে।
এসব বিষয় সামনে রেখেই ২৬ জুলাই চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের অর্থাৎজুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় এবারও সতর্ক মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে মূল্যম্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।
তাছাড়া, প্রবৃদ্ধি অর্জনে বেসরকারি খাতে ঋণ জোগান যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে নজর রাখা হবে। এ জন্য বেসরকারি খাতে এবার ঋণ জোগানের প্রাক্কলন বাড়িয়ে ১৭ শতাংশ করা হতে পারে। গত মুদ্রানীতিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
এবার আসি চীন বাংলাদেশ সহযোগিতা সম্পর্ক নিয়ে। বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বেশ পুরানো। চীনা পর্যটক হিয়ুএন সাং এর বাংলায় ভ্রমন কিংবা বাঙ্গালী সাধু অতীশ দিপঙ্করের তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের ইতিহাস সবারই জানা। তাছাড়া, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাথে মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সহরাওারদীর ও অন্যান্য নেতাদের সাথে গভীর যোগাযোগ ছিল।
বর্তমানে দেশ দু' টি একে অপরের কৌশলগত সহযোগী অংশীদার এবং বাংলাদেশ, চীন, ভারত মিয়ানমারকে নিয়ে গঠিত ফোরামের সদস্য।
বাংলাদেশ দক্ষিন এশিয়ায় চীনের তৃতীয় বৃহৎ বানিজ্য অংশীদার।
(সুবর্ণা/মহসিন)