প্রাকৃতিক পরিস্থিতির কারণেই কাতার অধিকাংশ দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য ও খাবার সৌদি আরব ও প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি করতো। এর মধ্যে শাকসব্জি ও দুগ্ধ জাতীয় পণ্য ৯০ শতাংশ। সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞার কারণে কাতার তুরস্ক থেকে আমদানি করা শুরু করে। কিন্তু সার্বিকভাবে এ পরিস্থিতিতে কাতার সতর্ক হয়ে উঠেছে।
নাসের আহমেদ আল-খালাফ নামক কাতারের এক নাগরিক বলেন, বর্তমান সংকট আমাদের সতর্ক করে দিয়েছে। এ অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারছি যে আমাদের নিজের উন্নয়ন এবং নিজের উত্পাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা খুব জরুরি। যাতে ভবিষ্যতে প্রতিবেশী দেশের ওপর খাদ্য'সহ সব পণ্য আমদানির জন্য নির্ভর করতে না হয়।
দোহার উপকণ্ঠ এলাকায় নাসেরের একটি গ্রিন হাউস ফার্ম আছে। কাতারে সারা বছর বৃষ্টিপাত অনেক কম হয় এবং উচ্চ তাপমাত্রা বজায় থাকে। তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রিন হাউস ফার্মে সারা বছর ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি তাপমাত্রা থাকে। শ্রীলংকা থেকে আমদানি করা মাটিতে টমেটো, শসা, মাশরুমসহ বিভিন্ন শাকসব্জির চাষ হয়। নাসের বলেন, আমাদের দেশে ৬০০ বর্গকিলোমিটার এমন গ্রিন হাউস থাকলে, সব্জি ও খাবারের ক্ষেত্রে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠা সম্ভব। এটা কল্পনা নয়, সত্যি হতে পারে। দুই বা তিন বছর পরিশ্রমের পর এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা যাবে।
আমদানির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে নিজেরাই চেষ্টা করা- এটা হচ্ছে নাসেরের মত কাতারের নাগরিকদের বর্তমান চিন্তাধারা।
জার্মানি থেকে কেনা ৪০০০ গাভী সম্প্রতি দোহায় পৌঁছেছে। এসব গাভী পালন করা কাতারের বালাদনা কোম্পানি জানিয়েছে, এসব গাভীর দুধ দিয়ে সারা দেশের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ দুধের চাহিদা পূরণ করা যাবে।
বালাদনার ব্যবস্থাপক জন দোরে জানান, বর্তমানে দুগ্ধজাতীয় খাবারের বাজারে কাতারের স্বদেশীয় পণ্য প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। সংকট সৃষ্টির আগে অধিকাংশ দুগ্ধজাতীয় পণ্য সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানি করা হতো। এখন আমদানি করা হয় তুরস্ক থেকে। আস্তে আস্তে কাতারের স্বদেশীয় দুগ্ধজাতীয় পণ্যের গুণগতমান উন্নত হবার কারণে তা আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
কাতার সরকারও এ স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রচেষ্টায় ব্যাপকভাবে সমর্থন দিয়েছে। সংকট সৃষ্টির পরপরই কাতারের বাজার ও শপিং মলে স্বদেশীয় পণ্যে বিশেষ লেবেল দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এখন স্বদেশীয় পণ্যদ্রব্য কেনা কাতারের অধিকাংশ নাগরিকের প্রধান দায়িত্বের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
'ফুড প্যালেস' কাতারের একটি সুপারমার্কেট। এ সুপারমার্কেটের প্রধান ক্রেতারা বিদেশি। মার্কেটের ব্যবস্থাপক গৌরব সিং ভারতীয় প্রবাসী। তিনিও জানান, সম্প্রতি কাতারে স্বদেশীয় পণ্যদ্রব্যের বিক্রি অনেক বেড়েছে। তিনি জানান, তারা এখন বেশির ভাগ কাতারে উত্পাদিত ময়দা ও মুরগীর মাংস বিক্রি করে থাকে। কারণ অনেক ক্রেতা স্বদেশীয় পণ্যদ্রব্য কিনতে চায়।
এ সুপারমার্কেটের একজন ক্রেতা ভারতীয় প্রবাসী রাহুল কুমার কাতারের স্থানীয় উত্পাদিত পণ্য কিনতে পছন্দ করেন। তিনি বলেন, কাতারের পণ্যের গুণগতমান ভাল। তাই আমি স্থানীয় উত্পাদিত পণ্য কিনতে চাই।
সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে কাতারের জন্য নিজ দেশের উত্পাদিত শিল্পব্যবস্থা উন্নয়ন করা সহজ কাজ নয়। বর্তমানে কাতারের বাজারে অধিকাংশ পণ্যদ্রব্য আমদানিকৃত হলেও এখন নিজ দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য একটি ভাল সুযোগ। অর্থনীতিবিদ আব্দুল্লাহ আল খাতির জানান, কাতারের অর্থনীতি এখন ২০ ও ৩০ বছর আগের মত নয়। আমরা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মূল্যায়ন করে আরো সামনে উন্নয়ন করতে থাকবো। সে অর্থে এবারের সংকট সুযোগও বটে।
(স্বর্ণা/টুটুল/মুক্তা)