সিরিসেনার ঢাকা সফর: উইন-উইন পার্টনারশিপে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা
  2017-07-16 18:16:09  cri
১৩ থেকে ১৫ জুলাই- বাংলাদেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর করে গেলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপ্রধানের এ সফরে দুদেশের মধ্যে ১৪টি সমঝোতাস্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চলতি বছরেই দুদেশে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছে। এ থেকে দুদেশই লাভবান হবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

বৃহস্পতিবার ঢাকা পৌঁছে বাংলাদেশ সফর শুরু করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট। বিমান বন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। সফরের প্রথম দিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সিরিসেনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট। দুই রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে দুদেশের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা ১৩টি সমঝোতাস্মারক ও একটি চুক্তি সই করেন। সমঝোতাস্মারকের মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য-বিনিয়োগ, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, উচ্চশিক্ষা, গণমাধ্যম ও উপকূলীয় জাহাজ চলাচলের মতো বিষয়। আর দুদেশের কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসা ফ্রি যাতায়াতে স্বাক্ষরিত হয়েছে একটি চুক্তি।

হাসিনা-সিরিসেনা বৈঠকের পর এ সব বিষয় তুলে ধরেন পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক। তিনি জানান, চলতি বছরই দুদেশ মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়েছে। বন্ধুপ্রতীম দুটি দেশের মধ্যে এসব সমঝোতাস্মারক ও চুক্তি দুদেশের সম্পর্ক আরো শাক্তিশালী করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সফরের তৃতীয় দিন শনিবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট দুদেশের ব্যবসায়ীদের আয়োজনে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবি করুণানায়েকে বলেন, তার দেশ চলতি বছরেই বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত। শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশের ভিসা সহজ করতেও অনুরোধ জানান করুণানায়েকে।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সফরের শেষ দিনে দুদেশের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সবক্ষেত্রে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার অঙ্গীকার করেছে ঢাকা ও কলম্বো। পারস্পরিক আস্থা ও মর্যাদার ভিত্তিতে দেশদুটি পরস্পরকে উইন উইন পার্টনারশিপে নিয়ে যাবে। এতে দুদেশই লাভবান হবে। দুদেশের মধ্যে ১৩টি সমঝোতাস্মারক ও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় হাসিনা ও সিরিসেনা সন্তোষ প্রকাশ করেন। বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের সুফল পেতে শুল্ক সহযোগিতা, দ্বৈতকর পরিহার এবং দুদেশের মধ্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ বিষয়ে চুক্তি শিগগির চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন দুই নেতা।

যৌথ বিবৃতিতে শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক দক্ষিণ এশিয়া গড়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও দুই নেতা তুলে ধরেছেন। তারা উপআঞ্চলিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রক্রিয়াগুলো গভীরতর করার বিষয়ে একমত হন। সার্ক ও বিমসটেকের আওতায় সফল আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলার বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হন দুই নেতা।

এদিকে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর এবং দুদেশের মধ্যে সমঝোতাস্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন ব্যবসায়ী নেতা ও বিশ্লেষকরা। এতে দুদেশই লাভবান হবে বলে মনে করছেন তারা।

২ কোটি মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ ও প্রসাধনীসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শ্রীলঙ্কা থেকে ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশের রপ্তানি ৩০০ কোটি ডলার। ব্যাবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই'র সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন মনে করেন শ্রীলঙ্কার দ্বৈত করনীতি বাংলাদেশের রপ্তানির পথে বড় বাধা। মুক্তিবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে এ সমস্যা মিটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ-বিসের চেয়ারম্যান ও চীনে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হলে শ্রীলঙ্কাও বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। এতে করে দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সফরে যে বিনিয়োগ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা বাস্তবে রূপ দিতে তৎপর হবেন তারা। সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকে ফলপ্রসু হিসেবেই দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040