চীনে ইসরাইলি দূতাবাসের মুখপাত্র এফ্রাত পেরি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, হুয়াসি গ্রামের যৌথ মালিকানা উন্নয়নের পদ্ধতি ইসরাইলের কালেকটিভ গোষ্ঠী কিব্বুটজ'র সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে। যেমন, হুয়াসি গ্রাম অনুর্বর পাহাড়কে উর্বর করতে ইসরাইল থেকে জলসেচের প্রযুক্তি আমদানি করে। এখন হুয়াসি সবুজ গাছপালা দ্বারা আচ্ছাদিত। তিনি বলেন, "হুয়াসি গ্রাম আমার মনে গভীর দাগ কেটেছে। আমি আসলে কিব্বুটজে বড় হয়েছি। হুয়াসি গ্রামের কালেকটিভ অর্থনীতির সাথে আমাদের অর্থনীতির অনেক মিল রয়েছে। আমরা সবাই একই লক্ষ্যে কাজ করি। আমাদের একই লক্ষ্য। আমরা একসঙ্গে উন্নয়নের সাফল্য উপভোগ করি। কয়েক দশকে কিব্বুটজ পদ্ধতিতে তেমন পরিবর্তন আসেনি।"
আসলে হুয়াসি গ্রামের কালেকটিভ অর্থনীতির কাঠামোও ৫০ বছরে তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি।
হুয়াসি গ্রামের কেন্দ্রে গ্রামবাসীদের বিনোদন ক্ষেত্র ও ৩২৮ মিটার উঁচু হুয়াসি লংসি আন্তর্জাতিক হোটেল অবস্থিত। গত বছর এ এলাকায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন্দ্র নির্মিত হয়। সাংস্কৃতিক ভবনে ইউগা ক্লাস, জিম, ব্যাডমিন্টন হল, বাস্কেটবল হল ও সিনেমা হল রয়েছে। সাংস্কৃতিক ভবনে ২ হাজার মানুষ একসঙ্গে বসতে পারেন। এ হলে বিভিন্ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যদিও সাবেক প্রধান অনেক বছর আগে মারা গেছেন, তবুও গ্রামটিতে তার সৃষ্ট নিয়মকানুন ঠিকই বজায় আছে। গ্রামবাসীরা অতিথিদের সামনে হুয়াসি গ্রামের উন্নয়ন-প্রক্রিয়া তুলে ধরেন, শেয়ার করেন তাদের অভিজ্ঞতা। তুরস্কের দোগুস ইয়াইন গ্রুবু গোষ্ঠীর বৈদেশিক বিষয় ও তথ্য সমন্বয়কারী আহমেত ইয়েসিল্টেপে বলেন, 'এখানে উন্নয়ন প্রক্রিয়া খুবই দ্রুত। হুয়াসি গ্রামের গর্বিত গল্প রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে, গ্রামটি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক নির্মাণের একটি সফল নমুনা।'
এখন হুয়াসি গ্রামের অবস্থা দেখলে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না যে, এখানকার আয়তন আগে ছিল এক বর্গকিলোমিটারেরও কম এবং লোকসংখ্যা ৬শ'র কম। বর্তমান হুয়াসি গ্রামে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু হুয়াসি গ্রামবাসী আগের ঐতিহ্য ভুলে যায়নি। তাঁরা এখনও কঠোর সংগ্রামের চেতনা লালন করে। এ সম্পর্কে আহমেত বলেন, 'যদিও হুয়াসি গ্রাম এখন অনেক ধনি হয়েছে, কিন্তু গ্রামটির নেতারা খুবই সহজ-সরল। তাঁরা কোনো কিছু নিয়েই গর্ব করেন না। তারা কেবল তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে থাকেন।'
গত শতাব্দীর সত্তুরের দশকে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পরিবেশে হুয়াসি গ্রাম সফলভাবে কৃষি থেকে শিল্পে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। সকল গ্রামবাসী মিলে অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জন করে। একবিংশ শতাব্দী থেকে হুয়াসি গ্রামের দ্বিতীয় প্রধান উ সিয়ে এন'র নেতৃত্বে হুয়াসি গ্রামের নতুন দফা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তখন ব্যাংকিং ও সেবাসহ তৃতীয় শিল্পের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। হুয়াসি গ্রামের কমিউনিস্ট পার্টির কমিশনের উপ-পরিচালক মাদাম চৌ লি এ সম্পর্কে বলেন, 'বিগত দশ বছরে হুয়াসি গ্রাম তৃতীয় শিল্পের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। আসলে হুয়াসি গ্রামের সংস্কার প্রক্রিয়া কখনও বন্ধ হয়নি। কৃষি থেকে শিল্পে, দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় শিল্পে পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় শিল্পের মুনাফা আমাদের সকল গোষ্ঠীর মুনাফার ৬৫ শতাংশ। '
নবায়ন ও উদ্ভাবন এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তন হল হুয়াসি গ্রামের সাবেক প্রধান উ রেন পাও ও বর্তমান প্রধান উ সিয়ে এনের অভিন্ন ধারণা। এ ধারণার আলোকেই হুয়াসি গ্রাম সাফল্য লাভ করেছে। আসলে হুয়াসি গ্রাম উন্নয়নের পথ বেশি কঠিন ছিল। তবে সে কঠিন পথ গ্রামবাসী অতিক্রম করেছেন। আধুনিক পরিচালনার ধারণায় হুয়াসি গ্রামের নতুন জীবনীশক্তিও দেখা যাচ্ছে। হুয়াসি গ্রামের ভবিষ্যত্ সম্পর্কে পেরি বলেন, 'কঠিন সময় ও চ্যালেঞ্জ এখনও আছে। কিন্তু সমাধানের পদ্ধতি সমস্যার চেয়ে আরও শক্তিশালী। হুয়াসি গ্রাম নবায়ন ও উদ্ভাবনের পদ্ধতি অবলম্বন করে আরও সুন্দর ভবিষ্যত তৈরি করতে পারে।'
বর্তমান হুয়াসি গ্রামের কর্মকাণ্ড শুধু চীনেই সীমাবদ্ধ নয়। গ্রামটি মোজাম্বিকে খনিজশিল্প উন্নয়ন করছে, জাপানে চাল চাষ করছে, মালয়েশিয়ায় বন্দর নির্মাণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে লেজার চিপ গবেষণা করছে।
পেরির কথা মতো যে-কোনো উন্নয়নের পথে চ্যালেন্ঞ্জ ও সুযোগ থাকে। হুয়াসি'র অভিজ্ঞতা শুধু চীনের মূল্যবান সম্পদ তা নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য মূল্যবান অভিজ্ঞতা।
বন্ধুরা, শুনছিলেন চীনের হুয়াসি গ্রাম নিয়ে একটি প্রতিবেদন।
এবার আপনাদের চিঠিপত্রের উত্তর দেওয়ার পালা।
বাংলাদেশের চুয়াডাংগা জেলার গ্লোবাল সিআরআই রেডিও লিসনার্স ক্লাবের সভাপতি প্রফেসর আশরাফুল ইসলাম ইমেলে একটি প্রশ্ন করেছেন। চীনে মুসলমানদের সংখ্যা কত? এখন আমি প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দি থেকে চীনে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু হয়। চীনের হুই, উইগুর, তাতার, কিরগিজ, কাজাক, উজবেক, তুংসিয়াং, সালা, বোআন প্রভৃতি সংখ্যালঘুজাতির ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন। চীনের অধিকাংশ মুসলমান সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, নিনসিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল আর কানসু, ছিআংহাই, ইউননান প্রভৃতি প্রদেশে বসে করেন। বর্তমানে চীনে ৩০ হাজারেরও বেশী মসজিদ আছে। এইসব মসজিদে ইমামের সংখ্যা ৪০ হাজার। আপনাকে প্রশ্ন করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
বাংলাদেশের বগুড়া জেলার আদর্শ রেডিও শ্রোতা ক্লাবের সভাপতি খন্দকার সাজু আহমেদ ইমেলে লিখেছেন, গত ২৪শে জুন মুক্তার কথা আসরটি শুনলাম। প্রতিবারের মত এবারও ঈদের পূর্বমূহূর্তে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সি আর আই বাংলা বিভাগের শ্রোতাদের ঈদ ভাবনা নিয়ে বিশেষ মোবাইল কনফারেন্স শুনলাম। যেটি সঞ্চালন করে ছিলেন দিদারুল ইকবাল। ঢাকা বেতারের পরিচালক মীর শাহ আলম স্যারের ঈদ ভাবনাসহ শ্রোতাদের ঈদ ভাবনাও শুনলাম। যদিও এবার আমি আমার ঈদ ভাবনা প্রকাশের সুযোগ পাইনি। তাঁতে একটুও আমার মন খারাপ হয় নি। কারণ আমি তো অনেকবার ঈদ উপলক্ষে বিশেষ মোবাইল কনফারেন্স অংশ নিয়েছি। এবার না হয় নতুন কোনো শ্রোতা সুযোগ পেলো। তবে পরবর্তীতে অংশগ্রহণের আশা রাখছি। ধন্যবাদ দিদারুল ইকবাল ভাইকে। ধন্যবাদ মুক্তা আপু সহ সি আর আই বাংলা বিভাগকে।
বন্ধু খন্দকার সাজু আহমেদ, আপনাকে চিঠি লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাই। যদি আমাদের কোন শ্রোতা আমাদের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চান, তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
বাংলাদেশের ঢাকার বিধান চন্দ্র টিকাদার ইমেলে লিখেছেন, নিয়মিত ঢাকা থেকে ও গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ থেকে চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনাল এর বাংলা অনুষ্ঠান শুনছি। ঢাকায় বসে এফএম ব্যান্ডে খুব সুন্দর পরিষ্কার শুনতে পারছি আবার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ থেকেও শর্টওয়েভে খুব ভালো শুনতে পারছি। সিআরআই এর ইংরেজী অনুষ্ঠানও শুনি, নিয়মিত একবার ওয়েবসাইটও দেখে নিচ্ছি। সিআরআই এর সাথে থাকতে পেরে ভালো লাগছে। বর্তমানে সিআরআই থেকে কোন চিঠিপত্র ও কাগজপত্র পাচ্ছি না।
আচ্ছা, বন্ধু বিধান চন্দ্র টিকাদার, এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগে। বাংলাদেশে ওয়েবসাইট অবশ্যই আগের চেয়েও অনেক উন্নত হয়েছে। আশা করি, শ্রোতারা সুযোগ পেলে আমাদেরকে ইমেল পাঠাবেন। আমরা আরো দ্রুত আপনাদের উত্তর দিতে পারবো। ধন্যবাদ।
বাংলাদেশের জামালপুর জেলার নীড় ইউনিটি ডিএক্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এম সবুজ মাহমুদ ইমেলে লিখেছেন, শুরুতেই মধুমাস জ্যৈষ্ঠের মিষ্টি আম-কাঠালের শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। নিয়মিত শুনছি প্রিয় চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। বেশিরভাগ সময় মোবাইল অ্যাপস এর মাধ্যমেই শুনি, তবে বেতারযোগেও মাঝেমাঝে শোনা হয়। কিন্তু আমাদের মফস্বল এলাকায় এফ এম ফ্রিকোয়েন্সিতে অনুষ্ঠান প্রচার হয়না বলে বেতারযোগে ভালোভাবে অনুষ্ঠান শুনতে পারিনা। এটা আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক বিষয়। আরেকটি বিষয়, গত বছর অনুষ্ঠান সূচী হাতে পেতে পেতে আগস্ট মাসে পেয়েছিলাম। তখন ভেবেছিলাম সামনে বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে হয়তো বছরের শুরুতেই পাবো। কিন্তু জুন মাস অতিবাহিত হতে চললেও এখনো অনুষ্ঠান সূচী পাইনি। সত্যিই অবাক হলাম। এমন কেন হয়? আশাকরি দ্রুত আমাদের "নীড় ইউনিটি ডিএক্স ক্লাব" এর জন্য অনুষ্ঠান সূচী রেজিস্ট্রি ডাকে পাঠিয়ে দিবেন। আর হ্যা, বাংলাদেশে আষাঢ়-শ্রাবণ এই দু'মাস বর্ষাকাল। এ সময়ে বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টি হয়। আমি জানতে চাই, চীনে কোন কোন সময়ে বৃষ্টি হয়? পরিশেষে আপনাদের সবার সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকুন নিরন্তর।
আচ্ছা, বন্ধু এম সবুজ মাহমুদ, আপনাকে ইমেল লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমরাও বাংলাদেশে আরো বেশি অঞ্চলে এফ এম চালু করার চেষ্টা করছি। কিন্ত আপনারা অবশ্যই জানেন যে, বিদেশে এফ এম চালু করার পথে অনেক চ্যালেন্ঞ্জ আছে। আপনারা ওয়েবসাইটে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে পারেন।
প্রিয় শ্রোতা, এতোক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আমাদের এ অনুষ্ঠান আপনাদের ভালো লাগে, তাহলে মনে করবো আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আপনাদের জন্যই আমাদের সকল প্রচেষ্টা ও আয়োজন। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং শুনতে থাকুন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। আমাদের সঙ্গে থাকুন, আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন আর আপনার যে-কোনো মতামত বা প্রশ্ন পাঠিয়ে দিন চিঠি, ই-মেইল অথবা ফেসবুকের মাধ্যমে।
আমাদের ই-মেইল ঠিকানা হচ্ছে ben@cri.163.com. এবং আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানা হল caiyue@cri.com.cn। 'মুক্তার কথা' অনুষ্ঠান সম্পর্কিত ইমেইল আমার নিজস্ব ইমেইল ঠিকানায় পাঠালে ভালো হয়। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। আশা করি, আগামী সপ্তাহের একই দিনে, একই সময়ে আবার আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। ততোক্ষণ সবাই ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন। (ছাই/আলিম)