হ্যাল চায়না:৮৩. ছায়াভিনয়
  2017-07-14 15:43:24  cri


বাতি জ্বলছে। সাদা কাপড়ের উপর বাজারের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। কেউ উচ্চকণ্ঠে হাঁকডাক দিয়ে পণ্য বিক্রি করছেন, কেউ খেলাধুলা করছেন, কেউ বা ঢাকঢোল বাজাচ্ছেন। সব মিলিয়ে এক উল্লাসময় হইহই ব্যাপার।

এখন বাতি নিভে যাওয়ার পর আপনি যদি পর্দার আড়ালে উঁকি দেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই অবাক হবেন। দেখবেন, সেখানে শুধু একজন মানুষ বসে আছেন। তার দু'হাতে বিভিন্ন ধরনের ছায়াপুতুল। আর পা দু'টো রাখা আছে ঢাকঢোলের উপর। অবাক হচ্ছেন? হ্যা, উনি একাই এতক্ষণ পর্দার উপর এত কাণ্ড করেছেন! তিনি পুতুল নাচিয়েছেন, ঢাকঢোল বাজিয়েছেন, হাঁকডাক দিয়েছেন! হ্যাঁ, তিনি এতক্ষণ যা করেছেন, সেটাই চীনের ঐতিহ্যবাহী 'ফি ইং' বা 'ছায়াভিনয়'।

পশু'র চামড়া দিয়ে (বিশেষ করে গাধার চামড়া) জটিল প্রক্রিয়ায় পুতুল বানানো হয়। পুতুলে প্রয়োজনমত ছবি আঁকা হয়, রঙ ব্যবহার করা হয়। পুতুলের গায়ে লাগানো হয় একটি সরু কাঠি। এই কাঠি ধরেই পুতুল নাড়ার কাজটি করেন ছায়াভিনয়ের শিল্পী। তার হাতেরসুনিপূণ ছোঁয়ায় ওই নড়াচড়া পর্দায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। একই সময়ে তিনি পুতুলের হয়ে কথা বলেন, পাশাপাশি বাজান বাদ্যযন্ত্র।

ছায়াভিনয় একজন মানুষকে একা অনেক কাজ একসঙ্গে করতে হয়। তাই এ কাজে বহুদিনের চর্চা প্রয়োজন।

চীনে কীভাবে ছায়াভিনয়ের আবির্ভার ঘটল? এর উত্স সম্পর্কে আছে একটি বেদনাদায়ক অথচ সুন্দর গল্প। গল্পটি এমন: দু'হাজার বছর আগে এক সম্রাট তার প্রিয় রাণীর মৃত্যুতে শোকে কাতর হয়ে পড়লেন। তখন তার এক মন্ত্রী কাপড় দিয়ে মৃত রাণীর মূর্তি বানালেন। তারপর সেই মূর্তির উপর পাতলা পর্দার আড়ালে আলো ফেললেন। পর্দায় ভেসে উঠল রাণীর ছবি। সম্রাটের কাছে সে ছবি জীবন্ত মনে হ'ল। তিনি আনন্দিত হলেন। আর এভাবেই সৃষ্টি হ'ল ফি ইং বা ছায়াভিনয়ের।

ছায়াভিনয় সহজ শিল্প নয়। এর জন্য চাই দক্ষ শিল্পী। দুঃখের বিষয়, এ শিল্পে দক্ষ শিল্পীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040