বন্ধুরা, প্রথমেই শুনবেন সংস্কৃতিবিষয়ক খবর।
১. 'এ ড্রিম অব রেড ম্যানশন্স' চীনের বিখ্যাত চারটি সাহিত্যকর্মের একটি। চীনে এই বইটি নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বইটি নিয়ে একটি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। মালয়েশিয়ার বিখ্যাত বইয়ের ক্রেতা ও সাবেক পরিবহনমন্ত্রী ছেন কুয়াং ছাই কেন্দ্রটিতে ৬ হাজার বই দান করেন।
মালয়েশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় মিস্টার ছেন 'এ ড্রিম অব রেড ম্যানশন্স' বইটির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তখন থেকে তিনি এ বই নিয়ে লেখা নানান প্রবন্ধ, আলোচনা ও ম্যাগাজিন সংগ্রহ করেন।
তিনি যে সব বই এ গবেষণা কেন্দ্রে দান করেন তাদের মধ্যে রয়েছে, 'এ ড্রিম অব রেড ম্যানশন্স'-র বিদেশি ভাষার সংস্করণ ও বইটির লেখকের ঐতিহাসিক গবেষণাতথ্য ইত্যাদি। বইটির বিভিন্ন ভাষার সংস্করণের সংখ্যা প্রায় ৭০টিরও বেশি। এতে রয়েছে ইংরেজি, ফরাসি, জার্মানি, জাপানি ও দক্ষিণ কোরিয়ার ভাষা ইত্যাদি। তার দান করা বইয়ের মধ্যে ১৮১২ সালের 'এ ড্রিম অব রেড ম্যানশন্স'-র ইংরেজি ভাষার সংস্করণও রয়েছে।
গবেষণা কেন্দ্রটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মিস্টার ছেন বলেন, গত কয়েক দশকে তিনি এ বই সম্পর্কে আরো অনেক বেশি তথ্য সংগ্রহ করেছেন। বইটি দিন দিন আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তিনি আশা করেন, 'এ ড্রিম অব রেড ম্যানশন্স' বইয়ের গবেষণা কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মালয়েশিয়ার আরো বেশি লোক বইটি সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং গবেষণা কাজে অংশ নেবেন। এর সঙ্গে সঙ্গে তারা চীন ও মালয়েশিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময় এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
জানা গেছে, গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে মালয়েশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা বিভাগে 'এ ড্রিম অব রেড ম্যানশন্স' বইটি পড়ানো হবে। এর ফলে ছাত্রছাত্রীরা আরো ভালোভাবে এ বই সম্পর্কে জানতে পারবে।
২. ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম সাধারণ পরিষদের সম্মেলন ২ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত পোল্যান্ডের প্রাচীন শহর ক্রাকোতে অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সময় ২ জুলাই সন্ধ্যায় ক্রাকোর ওয়ায়েল প্রাসাদে সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা, ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভাসহ বিভিন্ন অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুদা বলেন, ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম সাধারণ পরিষদের সম্মেলন তার দেশে অনুষ্ঠিত হওয়া মানে এটি পোলিশ জনগণ ও তার জন্য বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ।
প্রথম বারের মত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি পোল্যান্ডে এ ধরনের সম্মেলন আয়োজন করে বলে তা দেশটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রেসিডেন্ট দুদার শৈশব কেটেছে ক্রাকো শহরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ওয়ারশ শহরের পুনর্গঠনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। শহরের মূল ঐতিহ্য না থাকলেও পুরাতন ওয়ারশ শহর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি হয়েছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি।
ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, তিনি আশা করেন, সবাই বিভিন্ন দেশের বিশ্ব হেরিটেজ রক্ষা করবে। সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে যৌথভাবে বিশ্বের শান্তি রক্ষা করবে এবং সবার আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যত সৃষ্টি করবে।
ইউনেস্কো, পোল্যান্ডের সংস্কৃতি ও হেরিটেজ বিভাগ, পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পোল্যান্ডের জাতিসংঘবিষয়ক কমিটি, পোল্যান্ডের জাতীয় হেরিটেজ ইনস্টিটিউট এবং ক্রাকো সরকার যৌথভাবে এবারের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম সাধারণ পরিষদের সম্মেলন আয়োজন করে। ১৭০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষক হিসেবে এতে অংশ নেয়।
এবার শুনুন 'মস্কোয় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র' সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ।
বর্তমানে চীন ৩০টিরও বেশি দেশে 'চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র' প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০১২ সালে মস্কোয় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু হয়। গত ৪ বছরে এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বিভিন্ন পরিবেশনা, বক্তৃতা, সেমিনারসহ প্রচুর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আয়োজিত হয়েছে। এর মাধ্যমে চীন-রাশিয়া সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে। দু'দেশের জনগণের মৈত্রী ও সমঝোতা আরো গভীর হয়েছে। বিস্তারিত শুনবেন সিআরআই'র প্রতিবেদনে।
সার্গেই নিয়মিত মস্কোয় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আসা-যাওয়া করেন। আরামদায়ক ডিজিটাল সিনেমা হলে রাশিয়ান সাবটাইটেলের চীনা চলচ্চিত্র উপভোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, "প্রতি বুধবার আমি এখানে আসি। আমার এ অভ্যাস ৫ বছর ধরে। এখানে আমি ছবি ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র দেখি। চীনা সংস্কৃতির প্রতি আমার অনেক আগ্রহ রয়েছে।"
মস্কোয় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে প্রতি বুধবার চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। এদিন চীনা চলচ্চিত্র দেখে রুশ দর্শকরা মুগ্ধ হন। প্রতি সপ্তাহের চলচ্চিত্রের তথ্য বুধবারের আগে রাশিয়ার বৃহত্তম সামাজিক প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত হয়। এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রুশ দর্শকরা টিকিট বুকিং করতে পারে এবং চলচ্চিত্র নিয়ে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে।
মস্কোয় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উপ-পরিচালক লি সি বলেন, গত ৪ বছর ধরে এই কেন্দ্র থেকে রাশিয়ার দর্শকদের কাছে চীনের অবস্থা, সংস্কৃতি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন,
"সার্বিক ও টেকসই চীনা সংস্কৃতি প্রচারের মধ্য দিয়ে এই কেন্দ্র দু'দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় ও শিক্ষার একটি মঞ্চে পরিণত হয়েছে। আমরা আশা করি, এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রুশদের কাছে চীনকে জানানোর এক জানালায় পরিণত হবে।"
চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত মস্কোয় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে চার'শরও বেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। এসব অনুষ্ঠান রুশদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
মস্কোয় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অনেক বিখ্যাত চীনা সাংস্কৃতিক ইভেন্ট আয়োজিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে 'আনন্দময় নববর্ষ', 'চীনা বই পড়া সভা' ইত্যাদি। কেন্দ্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তি চীন ও রাশিয়ার পণ্ডিতদের আমন্ত্রণ করে রুশ জনগণের কাছে চীনা সংস্কৃতির পরিচয় ব্যাখ্যা করেন, সেরা বইয়ের পরিচয় তুলে ধরেন, দু'দেশের সেরা অনুবাদকদের সাহিত্যকর্ম রুশ জনগণের কাছে এনে দেন। এতে চীনের বিখ্যাত লেখক, সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী মো ইয়েনের সাহিত্যকর্ম 'ফেং রু ফেই থুন'-র রুশ ভাষার সংস্করণ মস্কোয় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সমসাময়িক সাহিত্য অনুবাদ পুরস্কার পেয়েছে। কেন্দ্রটি দু'দেশের সাহিত্য ক্ষেত্রের বিনিময় জোরদারে চেষ্টা করছে, সাহিত্যের সৌন্দর্যের মাধ্যমে দু'দেশের পারস্পরিক সমঝোতা ও আস্থা এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সংস্কৃতি প্রচার করার সঙ্গে সঙ্গে মস্কোয় চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র দেশটির জাদুঘরসহ বিভিন্ন স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংস্থার সঙ্গে স্থিতিশীল সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। যা চীন-রাশিয়া সার্বিক সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যাবে।
দু'টি রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে রাষ্ট্র দু'টির জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ অনুভূতি। আর, এ ধরনের অনুভূতির ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক বোঝাপড়া। 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের মাধ্যমে দু'দেশের জনগণের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তা দু'দেশের জন্য তাত্পর্যপূর্ণ, এমনকি সারা বিশ্বের উন্নয়নের জন্যও তাত্পর্যপূর্ণ।
বন্ধুরা, এখন শুনুন আমার সহকর্মী টুটুলের উপস্থাপনায় দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক পর্ব।
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com
চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান। (জিনিয়া/টুটুল)