বন্ধুরা, প্রথমেই শুনুন সংস্কৃতিবিষয়ক দু'টি খবর।
১. সম্প্রতি চীনের হুয়া ছেং প্রকাশনালয় সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির ব্যাহত করার ২৫ বছরের 'হুয়া ছেং সাহিত্য পুরস্কার'র বিতরণ অনুষ্ঠান চলতি বছর আবার চালু হবে। বর্তমানে ষষ্ঠ 'হুয়া ছেং সাহিত্য পুরস্কার'-বিতরণ অনুষ্ঠান-এর প্রাথমিক কাজ চলছে।
হুয়া ছেং প্রকাশনালয়ের উদ্যোগে 'হুয়া ছেং সাহিত্য পুরস্কার' আয়োজিত হয়। ১৯৮০ সাল থেকে একটানা ৫ বছরের মত প্রতি বছর এ পুরস্কারটি আয়োজিত হয়। এ পুরস্কারের প্রধান লক্ষ্য হলো স্থানীয় ও নতুন লেখক-লেখিকাদের প্রভাব বাড়ানো। জানা গেছে, চীনের লু ইয়াও, ওয়াং মেং, লিয়াং সিয়াও সেং, স্যু থং ও মো ইয়েনসহ বিভিন্ন বিখ্যাত লেখক-লেখিকা এ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।
এবার 'হুয়া ছেং সাহিত্য পুরস্কার' আবার চালু হওয়ার পিছনে চীনের কুয়াং তুং প্রদেশের প্রচারমন্ত্রণালয় ও নান ফাং প্রকাশনা এবং মিডিয়া কোং লিমিটেড-এর সমর্থন রয়েছে।
মূলত ২০১৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত হুয়া ছেং ম্যাগাজিনে যাদের প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবার তাদের মধ্যে এ পুরস্কার বিতরণ করা হবে। এতে বিশেষ অবদান পুরস্কার, সেরা লেখক পুরস্কার ও সেরা নতুন লেখক পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার রয়েছে।
২. চীন ও রাশিয়ার মধ্যে সাংস্কৃতিক ও শিল্প বিনিময় জোরদার এবং সাংস্কৃতিক বাণিজ্য এগিয়ে নিতে গত মাসের শেষ দিকে চীনের হেইলংচিয়াং প্রদেশের সাংস্কৃতিক বিভাগের উদ্যোগে প্রথম চীন-রাশিয়া সাংস্কৃতিক দিবস তুং নিং শহরে অনুষ্ঠিত হয়।
দু'দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথি ছাড়াও প্রায় দশ হাজার দর্শক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
এ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো 'ফ্রন্টিয়ার দুর্গের কবজ, চীন-রাশিয়া মৈত্রী'। এ দিবসে উচ্চ পর্যায়ের বিনিময়, ফোরাম, সাংস্কৃতিক বাণিজ্য, বিভিন্ন পরিবেশনা, ক্রীড়া সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ভ্রমণসহ ৭টি পর্বের ১২টি সাংস্কৃতিক ইভেন্ট আয়োজিত হয়।
চীন-রাশিয়া বড় মাপের নাটকের পরিবেশনা, চীন-রাশিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধবিষয়ক সাংস্কৃতিক ফোরাম এবং চীন-রাশিয়া বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাণিজ্য মেলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক ইভেন্টও আয়োজিত হয়। তাছাড়া কার্নিভাল – ইয়াং চীন ও রাশিয়ান বিয়ারবিষয়ক মজার প্রতিযোগিতা ও দু'দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন বেসরকারি পর্যায়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয়।
তুং নিং শহরের পার্টির সম্পাদক সুং জি সুন বলেন, ৬দিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক দিবসে 'এক অঞ্চল, এক পথ' নির্মাণ ও রাশিয়া-ইউরোপ ও এশিয়ার অর্থনৈতিক একীকরণ ধারণাকে কেন্দ্র করে সার্বিক, বহুমুখী চ্যানেল ও উচ্চ পর্যায়ের সাংস্কৃতিক বিনিময় হয়। এই অনুষ্ঠান চীন ও রাশিয়ার জনগণের যোগাযোগ, রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা ও অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমৃদ্ধি এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এবার শুনুন 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে প্রথাগত সংস্কৃতির পরিচয় ও প্রচারবিষয়ক একটি প্রবন্ধ।
চীনের সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমির ইউরোপবিষয়ক গবেষণালয়, চীনের সামাজিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একাডেমির '১৬+১' থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বিনিময় ও সহযোগিতার নেটওয়ার্ক এবং চীনের সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে প্রথাগত সংস্কৃতির পরিচয় ও বাইরে প্রচারবিষয়ক ধারাবাহিক লেকচার ও অন্য অনুষ্ঠান জুন মাসের শেষ দিকে বেইজিংয়ে শুরু হয়।
চেক, হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডসহ ১২টি মধ্য-পূর্ব ইউরোপের ১৭ জন প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা আনন্দের সাথে চীনা থাইজি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করে।
থাইজি চীনের জাতীয় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ একটি শিল্প। এর সঙ্গে চীনের মার্শাল আর্ট, শিল্প ও চীনা চিকিত্সা পদ্ধতি যুক্ত।
হাঙ্গেরির ভূরাজনৈতিকবিষয়ক ফাউন্ডেশনের উচ্চ পর্যায়ের গবেষক হু চিয়েন ছিং বলেন, থাইজি উপভোগ করে তিনি অনেক মজা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, "আমি ও আমার স্ত্রী চীনকে অনেক পছন্দ করি। কিন্তু আগে থাইজি সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা ছিলো না। আমি আশা করি হাঙ্গেরি ফিরে যাওয়ার পর সময় নিয়ে থাইজি চর্চা করতে পারবো।"
থাইজি ছাড়া বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা স্পর্শাতীত কালচারাল হেরিটেজের উত্তরাধিকারী, থাইজি মাস্টার সুং স্যু ও তার শিষ্যের সঙ্গে এক সাথে দর্শকদের কাছে কুংফু প্রদর্শন করেন।
হু ছিং চিয়েন বলেন, "কাজের কারণে আমাদের লম্বা সময় নিয়ে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে হয়। সেজন্য আমরা মেরুদণ্ডে আরাম বোধ করি না। আমার মনে হয় মার্শাল আর্ট মেরুদণ্ড উন্নত করার জন্য অনেক সহায়ক।"
প্রতিনিধিরা চীনা চা শিল্পও উপভোগ করে। চা শিল্প চীনের সম্পদ। ধীরে ধীরে চীনা চা শিল্প পশ্চিমা দেশে প্রবেশ করেছে। হু ছিং চিয়েন বলেন, চীনের চা ও চা শিল্পের প্রতি তার অনেক আগ্রহ আছে। তিনি কফির চেয়ে চা খেতে আরো পছন্দ করেন।
তিনি বলেন, "কফির চেয়ে আমি চা খেতে আরো পছন্দ করি। লাল চায়ের চেয়ে আমি সবুজ চা আরো পছন্দ করি। কিন্তু হাঙ্গেরিতে ভালো গুণগতমানের সবুজ চা খেতে পারি না। হাঙ্গেরির কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটে চীনা চা শিল্প অনুষ্ঠান উপভোগ করেছিলাম। আমি এর আগেও চীনে এসেছি। চা শিল্প যেন রেড ওয়াইন টেস্ট করার মত। চা পানের প্রতিটি পর্যায় যেন ভিন্ন। ধীরে ধীরে উপভোগ করি।"
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মধ্য-এশিয়া ও পূর্ব-দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সফরকালে 'রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল' ও 'একবিংশ শতাব্দীর সামুদ্রিক রেশমপথ', অর্থাত্ 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের কথা উত্থাপন করেন। উদ্যোগটি বিশ্বের উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। হাঙ্গেরির প্রচুর প্রথাগত সংস্কৃতি আছে। গত বছরে শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত অষ্টাদশ শাংহাই আন্তর্জাতিক আর্টস ফেস্টিভালে, অর্থাত্ হাঙ্গেরির সাংস্কৃতিক সপ্তাহে চীনা দর্শকদের কাছে প্রথাগত হাঙ্গেরীয় লোকসঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে চীন ও হাঙ্গেরির প্রথাগত সংস্কৃতি প্রচার নিয়ে হু তার ধারণা শেয়ার করেন।
তিনি বলেন, "আমার মনে হয় হাঙ্গেরীয় সংস্কৃতি চীনে প্রচার করা অনেক কঠিন কাজ। কারণ হাঙ্গেরির বেশী পরিচিত নয়। আমি জানি বেইজিংয়ে একটি 'হাঙ্গেরি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র' আছে। মনে করি এ কেন্দ্রের মাধ্যমে হাঙ্গেরীয় সংস্কৃতি প্রচার করলে ভালো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে। কারণ আমরা যে ধরনের শিল্প প্রচার করতে চাই তা চীনের অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নাও হতে পারে। কিন্তু হাঙ্গেরি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কর্মকর্তারা চীনে থাকেন, আমাদের চেয়ে তাদের আরো বেশি কার্যকর সমঝোতা ও ধারণা আছে। আমি বিশ্বাস করি 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের মাধ্যমে হাঙ্গেরীয় সংস্কৃতি চীনে আসবে এবং এভাবে আরো বড় একটি মঞ্চে প্রবেশ করতে পারবে।"
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com
চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান। (জিনিয়া/টুটুল)