0628china
|
তেং লুং বা লণ্ঠন চীনের ঐতিহ্যবাহী আলোকসজ্জার উপকরণ। এটি আনন্দ
উত্সবের প্রতীকও বটে। ঐতিহ্যবাহী তেং লুং-এর বাইরের আবরণটি একধরনের বিশেষ কাগজ বা রেশম ও তুলায় বোনা হালকা কাপড় দিয়ে তৈরি, যাকে চীনা ভাষায় বলে শিয়ুয়ান জি। ভিতরে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় একটি মোমবাতি। অর্ধস্বচ্ছ কাগজ বা কাপড় ভেদ করে মোমবাতির আলো বাইরে বিচ্ছুরিত হয়।
বিভিন্ন রকমের তেং লুং দেখা যায়। চীনারা তেং লুং-এর বাইরের আবরণের ওপর বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তুলতে পছন্দ করেন; সেখানে তারা আঁকেন সুন্দর ও মাঙ্গলিক ছবি।
প্রাচীনকালে রাজপ্রাসাদের পরিচয় বহন করত এক ধরনের বিশেষ তেং লুং বা লণ্ঠন। রাজপ্রাসাদের লণ্ঠন হ'ত ৬ বা ৮ কোণাবিশিষ্ট। রেশমের তৈরি সেসব লণ্ঠনে আঁকা হতো রঙিন ছবি; নিচে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো ঝালর।
আজকাল বড় গোলাকৃতির লাল লণ্ঠনের প্রচলন সবচে' বেশি। চীনের থিয়ান আন মেন স্কয়ারে অবস্থিত গণ মহাভবনের উপরেও এমন বড় বড় লণ্ঠনঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সাধারণ মানুষ বসন্ত উত্সব ও লণ্ঠন উত্সবের দিনেও এমন লণ্ঠন ঝুলিয়ে দেয় নিজেদের বাড়ির সামনে। লণ্ঠন উত্সবের দিনে তো রীতিমত 'লণ্ঠনসমুদ্র' সৃষ্টি হয়। এদিন যেসব লণ্ঠন ঝুলানো হয়, সেগুলোর মধ্যে'চৌ মা তেং' সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যময়।
'চৌ মা তেং' হচ্ছে ঘূর্ণমান লণ্ঠন। এতে প্রাচীন চীনের অশ্বারোহী সৈনিকদের ছবি আঁকা থাকে। লণ্ঠনটি যখন ঘুরতে থাকে তখন মনে হয় অশ্বারোহী সৈনিকরা ছুটে চলেছে সামনের দিকে। তাই এ লণ্ঠনকে 'চৌ মা তেং' বা 'ছুটন্ত ঘোড়ার লণ্ঠন' বলে ডাকা হয়। সুন্দর ও সৃজনশীল 'চৌ মা তেং' দিয়ে একটি ছোট গল্প বলে ফেলা যায়। লণ্ঠন যখন ঘুরে তখন ছবি'র মধ্যে মানুষগুলোও যেন জীবন্ত হয়ে উঠে। চীনের প্রচলিত ভাষায় 'চৌ মা তেং' শব্দগুচ্ছ দিয়ে দ্রুত পরিবর্তনশীল অবস্থা বর্ণনা করা হয়। এক রাজবংশের পর আরেক রাজবংশের ক্ষমতায় আসাকেও এই শব্দগুচ্ছ দিয়ে বর্ণনা করা হতো।
আজকাল চীনেসব ধরনের বড় উত্সব-আয়োজনে তেং লুং বা লণ্ঠন ব্যবহার করা হয়।উত্সবের রাতে তেং লুং ঝলমল করে।বিভিন্ন আকার ও ধরনের তেং লুং-এর মাধ্যমেআনন্দ ও সুখী জীবন কামনা করা হয়। পৃথিবীর যেখানেই চীনা মানুষ বাস করে, সেখানেই লাল লণ্ঠন বা তেং লুং দেখা যায়।