প্রথমে কয়েকটি সাংস্কৃতিক খবর শুনবো।
আজকের সাংস্কৃতিক খবরে আপনারা 'ব্রিক্স ও চলচ্চিত্র' প্রতিপাদ্যসম্পর্কিত কিছু তথ্য জানতে পারবেন। তাহলে শুরু করা যাক 'ব্রিক্স ও চলচ্চিত্র' প্রতিপাদ্যসম্পর্কিত পর্বটি।
২৪ জুন চীনের ছেং তু শহরে ২০১৭ সালের ব্রিক্স দেশগুলোর চলচ্চিত্র দিবসের একটি থিম ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়। এতে সম্পূর্ণ বিনিময়ের ভিত্তিতে 'ব্রিক্স দেশগুলোর চলচ্চিত্র সহযোগিতার ঐকমত্য'বিষয়ক এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে আগামী পাঁচ বছরে প্রতি বছর একটি করে সহযোগিতামূলক চলচ্চিত্র প্রকাশিত হবে,যাতে ব্রিক্স দেশগুলো সাংস্কৃতিক বিনিময়ে চলচ্চিত্র বিশেষ অবদান রাখতে পারে।
ব্রিক্স দেশগুলোর প্রথম সহযোগিতামূলক চলচ্চিত্র 'সময় কোথায় যায়' ২৩ জুন প্রচারিত হয়। চীন এ চলচ্চিত্রের সহযোগিতাব্যবস্থা পালন করে সংশ্লিষ্ট সহযোগিতা আরো গভীরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করে। চীন এখন থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ব্রিক্স দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করে একটি চলচ্চিত্র প্রচার করবে। তাছাড়া ফোরামে বেইজিং ফিল্ম একাডেমি'র 'ব্রিক্স দেশগুলোর চলচ্চিত্র মহলের প্রতিভাবান ব্যক্তি প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা'ও প্রকাশিত হয়।
পরিকল্পনা অনুসারে আগামী ৫ বছরে ব্রিক্স অন্যান্য সদস্যদেশ ৪০টি বৃত্তির সুযোগ পাবে। এছাড়া স্কলার (পণ্ডিত) বিনিময় প্রোগ্রাম এবং মাস্টার্স পর্যায়ের গবেষণা কাজসহ বিভিন্ন ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে।
ব্রিক্সের ৫টি সদস্যদেশের চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজকসহ বিভিন্ন ব্যক্তি এবারের ফোরামে অংশ নেন। চলচ্চিত্র সম্পদ সংগ্রহ ও উন্নয়ন এবং ইয়াং ট্যালেন্ট ইনোভেশনসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন তারা। তাছাড়া চলচ্চিত্র 'সময় কোথায় যায়'-র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকারসহ বিভিন্ন সদস্য ব্রিক্স চলচ্চিত্র সহযোগিতা গভীর করা নিয়ে মত বিনিময় করেন।
দ্বিতীয় ব্রিক্স চলচ্চিত্র উত্সব ২৩ জুন চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের ছেং তু শহরে উদ্বোধন হয়। চীন, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা- এ ৫টি ব্রিক্স দেশের চলচ্চিত্রব্যক্তিরা চলচ্চিত্রের গুরুত্ব ভাগাভাগি করেন এবং সংস্থাটির সদস্যদেশগুলোর চলচ্চিত্রের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন ।
এবারের উত্সবে প্রতিটি ব্রিক্স সদস্যদেশের জন্য একটি চলচ্চিত্র দিবস প্রতিষ্ঠিত হয়। এর লক্ষ্য হলো আরো ভালভাবে দর্শকদের সামনে ৫টি দেশের চলচ্চিত্র তুলে ধরা।
চীনে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত মারকোস কারামুরু পাইভা ব্রাজিলের চলচ্চিত্র প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে ২৪ জুন অনুষ্ঠিত ব্রাজিলের চলচ্চিত্র দিবসসহ সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তিনি মনে করেন, ব্রাজিলের চলচ্চিত্র দিবসের মাধ্যমে দেশটির চীনা দর্শকদের জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে।
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, চলচ্চিত্র শিল্প ব্রাজিলের সাংস্কৃতিক শিল্প উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০১৬ সালে দেশটির চলচ্চিত্র শিল্পের উপাত্ত গত ৩০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর ব্রাজিলে প্রায় ১৫০টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এ সময় দেশটির ৩ কোটি দর্শক সিনেমা হলে চলচ্চিত্র উপভোগ করে। রাষ্ট্রদূত বলেন,এবার ব্রাজিলের চলচ্চিত্র দিবসে কয়েকটি প্রতিনিধিত্বকারী চলচ্চিত্র দেখতে পারে দর্শকরা। যেমন- 'Nise: o Coracao da Loucura', 'Que Hojas Ela Volta', 'Central do Brasil' ও 'Cidade de Deus'। এসব চলচ্চিত্রে সত্যিকারের ব্রাজিলকে তুলে ধরা হয়েছে। এদের মধ্যে 'Central do Brasil' ও 'Cidade de Deus' বিশ্বের চলচ্চিত্র মহলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
রাষ্ট্রদূত আশা করেন, ব্রাজিলের চলচ্চিত্র দিবসের মাধ্যমে ব্রিক্স সদস্যদেশের পারস্পরিক সমঝোতা গভীর হবে।
এবার শুনুন চীন-জার্মানি যুব পর্যায়ের শিল্পীদের সঙ্গীত সম্বন্ধে একটি প্রবন্ধ।
র্যাডল্ফজেল হলো জার্মানির ব্যাডেন-ওয়েটেমবার্গের একটি ছোট গ্রাম। এর কাছেই রয়েছে দেশটির বৃহত্তম স্বচ্ছ পানির লেক। এ জন্য লেকটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি এ শহরের একটি যুব পর্যায়ের দল চীনের বেইজিং, সি'আন ও শাংহাই সফর করে। তারা এখানে জার্মানির ক্লাসিকাল সঙ্গীত বয়ে আনে। এর সঙ্গে সঙ্গে চীনের পারিবারিক জীবনযাপন উপভোগ করে তারা।
তারা চীনের জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনের পর জার্মানিতে ফিরে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে। বিস্তারিত শুনবেন সিআরআই'র প্রতিবেদনে।
"চীনের বিভিন্ন ক্ষেত্র আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। যেমন- আমি সত্যিই চীনের স্থানীয় নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবন উপভোগ করেছি, তা খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। তাছাড়া চীনা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে এক সাথে বাদ্যযন্ত্র বাজানো আমার মনের ওপর গভীর ছাপ ফেলে। অসাধারণ অনুভূতি। আমাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য থাকলেও বিনিময় অনেক মজার, কারণ সাংস্কৃতিক বিনিময় একটি শিক্ষার প্রক্রিয়া।"
২১ বছর বয়স্ক রাইপেল জার্মানির র্যাডল্ফজেল জাতীয় টিন সঙ্গীতবিদ্যালয়ের অর্কেস্ট্রার নেতা। অর্কেস্ট্রায় তিনি ৫ বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রতি বছর অর্কেস্ট্রার স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক বিনিময় প্রোগ্রামে নাম নিবন্ধন করেন তিনি। এবারের অনুষ্ঠানে তার অংশ নেওয়ার ইচ্ছা ছিলো অনেক বেশি। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
"কারণ এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা। চীন একটি বড় দেশ। আগে স্পেন ও ফ্রান্সে গিয়েছিলাম। কিন্তু এবার নতুন এক সাংস্কৃতিক ভূমিতে গিয়েছি, অন্য এক রকমের অনুভূতি পেয়েছি। যাওয়ার আগে আমার অনেক প্রত্যাশা ছিলো।"
৫ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত রাইপেল জাতীয় টিন সঙ্গীতবিদ্যালয়সহ জার্মানির বিভিন্ন কলেজের ৬৫জন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে চীনের বেইজিং, সি'আন ও শাংহাইয়ের বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে বিনিময় প্রোগ্রামে অংশ নেন। তারা চীনা পরিবারে স্থানীয় জীবন উপভোগ করে। তারা সেখানে চীনা রান্না শিখেছে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে চীনা বিবাহ অনুষ্ঠানে সহায়তা দিয়েছে।
সঙ্গীত বিনিময় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দু'দেশের কিশোর-কিশোরীদের মৈত্রী গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পের আকর্ষণীয় শক্তি ভাগাভাগি করেছে তারা। এতে তাদের আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগমূলক কর্মদক্ষতাও উন্নত হয়েছে। আসলে সঙ্গীত জগতের কোনো সীমানা নেই। তারা পরস্পরের ভাষা না বুঝলেও সঙ্গীতের মাধ্যমে মনোভাব ভাগাভাগি করতে পেরেছে।
এবারের অনুষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তি হু সিন সিন বলেন, আমাদের মনে হয়, সঙ্গীত এক আনন্দের প্রতিপাদ্য। সঙ্গীতের মাধ্যমে বিনিময় করে ছাত্রছাত্রীরা আরো বেশি মজা পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের চীন-জার্মানি যুব-সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রোগ্রাম ৬ বছর ধরে চলছে।
প্রতি বছর এক'শরও বেশি জার্মান কিশোর-কিশোরী সুযোগ পেয়ে চীনে এসে পরিবেশনা করে এবং স্থানীয় চীনা পরিবারের জীবন উপভোগ করতে পারে। প্রতিবার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের অনেক জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। তারা বলে যে, ভবিষ্যতে তারা অবশ্যই আবার চীনে আসবে এবং আরো পূর্ব সংস্কৃতি উপভোগ করবে।
বন্ধুরা, এখন শুনুন আমার সহকর্মী টুটুলের উপস্থাপনায় দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক পর্ব।
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com
চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান। (জিনিয়া/টুটুল)