চীনের স্ট্যান্ডার্ড রেলগাড়ির নামকরণ করা হলো 'ফু সিং'
  2017-06-26 19:51:12  cri

২৬ জুন 'ফু সিং' নামে চীনের স্ট্যান্ডার্ড রেলগাড়ি বেইজিংয়ের দক্ষিণ রেল স্টেশন ও শাংহাইয়ের হোং ছিয়াও রেল স্টেশন থেকে প্রথম রওনা দেয়। এ রেলগাড়িটি হলো চীনের রেল কোম্পানির গবেষণা ও উত্পাদিত চীনের নিজস্ব মেধাস্বত্বের অধিকারী রেলগাড়ি। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এর নামকরণ করা হয়েছে 'ফু সিং'। 'ফু সিং' মানে পুনরুত্থান; এ থেকে চীনের রেলগাড়ির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পরিষেবা দেওয়া ও উন্নত জনসেবার প্রত্যাশা ফুটে উঠেছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে রেলগাড়ির নামকরণ করা এক ধরণের চীনা ঐতিহ্য। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর স্টিমার রেলগাড়ি, অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন রেলগাড়ি, বিদ্যুত চালিত রেলগাড়ি এবং দ্রুতগতির রেলগাড়িসহ নানা রেলগাড়িকে যথাক্রমে 'চিয়ে ফাং', 'তোং ফাং', 'শাও শান', 'হো সিয়ে' নামকরণ করা হয়েছিল। এ নামগুলো থেকে দেশের প্রতি চীনাদের আবেগ ও প্রত্যাশা বুঝা যায়।

এবার 'সিআর৪০০এইএফ' এবং 'সিআর৪০০বিএফ' এ দুই ধরণের রেলগাড়ির নাম দেয়া হয়েছে 'ফু সিং'। চীনের রেল কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী, নতুন ধরনের স্বতন্ত্র দ্রুতগতির রেলগাড়ির নামের প্রথমে 'সিআর' দিয়ে শুরু হয়। 'সিআর' হলো চীনের রেল কোম্পানির ইংরেজি নামের প্রথম দু'টি অক্ষর। নামের মধ্যে সংখ্যা '৪০০' রেলগাড়ির গতি প্রকাশ করে। এর অর্থ, এ ধরণের রেলগাড়ির পরীক্ষামূলক গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে পারে। এর স্থায়ী গতিবেগ ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমিটার। পরবর্তীতে চীনের রেল কোম্পানি পরিবহন বাজারের চাহিদা অনুসারে ধাপে ধাপে সিআর৩০০ আর সিআর২০০ নামের রেলগাড়ি উত্পাদন করবে।

নিরাপত্তা হলো 'ফু সিং' রেলগাড়ির একটি বৈশিষ্ট্য। জানা গেছে, এ রেলগাড়ি চলার সময় সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের যান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। যান্ত্রিক এ ব্যবস্থার নাম 'সঙ্গী ডাক্তার'। পুরো রেলগাড়িতে এমন ২৫০০টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্ট রয়েছে। যা বেয়ারিং এর তাপমাত্রা, শীতল ব্যবস্থা, গতিরোধক যন্ত্রের অবস্থা, বগির পরিবেশসহ বিভিন্ন ব্যবস্থার তাত্ক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে। কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত গতিতে তার সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে গতিবেগ কমিয়ে ফেলা বা রেলগাড়ি বন্ধ করতে পারে 'সঙ্গী ডাক্তার' ব্যবস্থাটি।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, 'ফু সিং' নামক রেলগাড়ির প্রধান কাঠামোগত যন্ত্রাংশের নকশার মেয়াদ ৩০ বছর। এটি ৬ লাখ কিলোমিটার পথ চলতে পারে।

তা ছাড়া, 'ফু সিং' রেলগাড়িতে যাত্রীরা আরামদায়ক অনুভূতি পাবেন। এ রেলগাড়িতে ওয়াইফাই ইন্টারনেট ও ব্যাটারি চার্জের ব্যবস্থা আছে।

বর্তমানে চীনের দ্রুত গতির রেলগাড়ি দ্রুত বিকাশের যুগে প্রবেশ করেছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ চীনের দ্রুতগতির রেলপথের দৈর্ঘ্য ২২ হাজার কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। বিশ্বের দ্রুতগতির রেলপথের মোট দৈর্ঘ্যের ৬০ শতাংশ এককভাবে চীনে রয়েছে। রেলপথ শুধু চীনাদের যাতায়াতের প্রধান পদ্ধতিই নয়, বরং 'মেইড ইন চায়না' বা 'চীনের তৈরি' একটি সুপরিচিত ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। এখন চীনের দ্রুতগতির রেলগাড়ি প্রযুক্তি ও প্রকল্প এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকায় সম্প্রসারিত হয়েছে।

চীনের রেল বিজ্ঞান একাডেমির রেলগাড়ি গবেষণালয়ের গবেষক চাং পো সাংবাদিককে জানান, 'চীনের স্ট্যান্ডার্ড রেলগাড়ি উত্পাদনের ২৫৪টি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ডের মধ্যে প্রায় ৮৪ শতাংশ হলো চীনের মানদণ্ড। আমাদের রেলগাড়ি উত্পাদনের প্লাটফর্ম হলো আমাদের নিজের, ফলে মেরামত করা অনেক সুবিধা। আমরা বিদেশি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি করতে পারি।'

২০১২ সাল থেকে চীনের রেল কোম্পানির নেতৃত্বে চীনের সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠান, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা সংস্থাগুলো একসাথে চীনের স্ট্যান্ডার্ড রেলগাড়ি গবেষণা ও উত্পাদনের চেষ্টা শুরু করে। ২০১৫ সালে তা উত্পাদনের পর চীনের দাশি রেলপথ, চাং শু রেলপথ ও হাদা রেলপথে এর সফল পরীক্ষা চালানো হয়। এরপর চীনের রেল কোম্পানি পরিবহন চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন গতির রেলপথে 'ফু সিং' নামে রেলগাড়ি চালু করবে এবং যাত্রীদের আরো বেশি বিকল্প সেবা দেবে।

(ইয়ু/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040