ঘুম: ১০টি নেতিবাচক লক্ষণ
  2017-06-25 18:34:12  cri

আজকাল অনেকেই বেশি রাত করে ঘুমান এবং সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন। এ বদভ্যাসটি দীর্ঘকাল বজায় থাকলে, শরীর ও মনের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মন্টেফি চিকিত্সাকেন্দ্রের ঘুম বিভাগের মহাপরিচালক ডা. শেলবি ফ্রেডম্যান হ্যারিস ঘুমসম্পর্কিত এমন ১০টি লক্ষণের কথা বলেছেন, যা আমাদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়। এ লক্ষণগুলো ভালো নয়। আজকের 'জীবন যেমন' অনুষ্ঠানে আমরা এ লক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।

লক্ষণ ১: বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে যাওয়া

অনেকেই এই লক্ষণটিকে ইতিবাচকই বলবেন। শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়তে পারাটাতো ভালোই! কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুতন্ত্র রোগ চিকিত্সা বিভাগের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, যারা বিছানায় শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন, তাদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা থাকতে পারে। তারা হয়তো যথেষ্ট ঘুমান না বা ঘুমানোর সুযোগ পান না।

লক্ষণ ২: স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি অস্থিরতা প্রকাশ

ঘুম যথেষ্ট না-হলে, আপনি সহজেই অস্থির হয়ে যাবেন। হঠাত্ করে মিষ্টি খাবার খাইতে চাইবে, শপিংয়ের যেতে আগ্রহী হয়ে উঠবেন, ইত্যাদি। এটি ঘুম যথেষ্ট না-হওয়ার একটা লক্ষণ হতে পারে। ডা. হ্যারিস বলেন, ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের ওপর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে আপনার দৈনন্দিন কাজের গুণগত মান কমে যেতে পারে এবং আপনি কর্মী হিসেবে অদক্ষ প্রমাণিত হতে পারেন।

লক্ষণ ৩: অতিরিক্ত কথা বলা

প্রায়শই দেখা যায়, বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি কথা বলেন। এটা যথেষ্ট ঘুম না-হওয়ার একটা লক্ষণ। ডা. হ্যারিস বলেন, কথা বলা, গঠনমূলক ধারণা পোষণ করা ও নতুন কিছু ভাবা-ইত্যাদি সবই মস্তিষ্কের সাথে জড়িত। ঘুম যথেষ্ট না-হলে, আপনার মস্তিষ্ক ভালভাবে কাজ করতে পারবে না। তখন একই কথা বারবার বলার একটা প্রবণতা আপনার মধ্যে দেখা দিতে পারে।

লক্ষণ ৪: ভুলে যাওয়ার প্রবণতা

আজকাল অনেককিছু ভুলে যান? ঘরের চাবি অফিসে ফেলে চলে আসা, পরিচিত বন্ধুর নাম ভুলে যাওয়া, নতুন বন্ধু বা সহকর্মীর নাম বহুবার শুনেও মনে রাখতে না-পারা, যেখানে-সেখানে জিনিস হারানো-এ সবই নেতিবাচক লক্ষণ। ঘুমের অভাবের সাথে এ প্রবণতার সুস্পষ্ট যোগ থাকতে পারে। ডাক্তার হ্যারিস বলেন, পর্যাপ্ত ঘুম আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ও মেজাজ ফুরফুরে রাখে। ঘুমের অভাব আপনার স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে দেবে এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস করবে।

লক্ষণ ৫: ঘন ঘন ক্ষুধার অনুভূতি হওয়া

আপনি কি ফাস্ট ফুড ও আইসক্রিমসহ অস্বাস্থ্যকর বিভিন্ন খাদ্য খেতে আগ্রহী? তাহলে বুঝতে হবে, আপনার ঘুম কম হচ্ছে। ঘুমের অভাব আপনার শরীরে দু'টি হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। হরমোন দু'টি হচ্ছে: লেপটিন ও অক্সিন। এ দু'টি হরমোন মানুষের ক্ষুধার অনুভূতি বাড়াতে সরাসরি ভূমিকা রাখে।

লক্ষণ ৬: একটি বাক্য অন্তত দুইবার পড়ার অভ্যাস

বই বা ম্যাগাজিন বা খবরের কাগজ পড়ার সময় কি আপনি একই বাক্য অন্তত দু'বার করে পড়েন? তাহলে বুঝতে হবে যে, আপনার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের 'ঘুম' শীর্ষক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়েছে, যথেষ্ট ঘুম না-হলে কোনোকিছুতে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং তাত্ক্ষণিক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সামর্থ্যও কমে যায়।

লক্ষণ ৭: কাজে-কর্মে কম বুদ্ধির পরিচয় দেওয়া

ডা. হ্যারিস বলেন, ঘুমের অভাব আপনাকে অস্থিতশীল করে তুলবে এবং কাজে-কর্মে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে আপনি সক্ষম না-ও হতে পারেন।

লক্ষণ ৮: ঝগড়া করতে পছন্দ করা

জরিপ অনুসারে, যারা যথেষ্ট ঘুমান না বা ঘুমাতে পারেন না, তাদের মধ্যে হঠাত রেগে যাওয়ার বা ঝগড়া করার প্রবণতা বেশি। আপনি যদি ঝগড়াটে হন বা যদি আপনার মধ্যে হঠাত রেগে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, তবে ধরে নিতে পারেন যে আপনার ঘুম যথেষ্ট হচ্ছে না।

লক্ষণ ৯: গাড়ি চালানোর সময় অন্যমনষ্ক হওয়া

অনেকে গাড়ি চালানোর সময় অন্যমনষ্ক হয়ে যান। যেখানে টার্ন নেওয়ার কথা, সেখানে টার্ন নিতে ভুলে যান। ডা হ্যারিস বলেন, এ ভুলে-যাওয়ার সাথে কম ঘুমের সম্পর্ক আছে। রাতে ভালো ঘুম হলে, দিনে গাড়ি চালাতে গিয়ে আপনার এমন সমস্যা হবার কথা নয়।

লক্ষণ ১০: দিনে ঘুম আসা

অনেকে সকালে অফিসে যাওয়ার সময় গাড়িতে ঝিমুতে থাকেন বা ঘুমিয়ে পড়েন। কেউ কেউ সিনেমা দেখতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এ সবই ঘুমের অভাবের লক্ষণ। ডা. হ্যারিস বলেন, রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হলে, দিনের বেলা ঘুমানো বেশ কঠিন ব্যাপার।

হ্যাঁ, রাত জাগা আমাদের শরীর ও মনের জন্য ক্ষতিকর। বেশি রাত জেগে পড়লে আপনি অসুস্থ হতে পারেন। বেশি রাত জাগলে বা রাতে ভালো ঘুম না-হলে আপনার ওপর নানান ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তো, কীভাবে রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো যেতে পারে? এ ক্ষেত্রে দু'টি পরামর্শ দিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।

পরামর্শ ১: ঘুমের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা

বিছানাটা যথেষ্ট বড় হওয়া দরকার। শোবার ঘর হতে হবে শান্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তাপমাত্রা থাকবে ১৫.৬ থেকে ২১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। রুমে রোদ-প্রতিরোধক পর্দা থাকা আবশ্যক। টেলিভিশনসহ ইলেক্ট্রোনিক পণ্য না-রাখাই ভাল।

পরামর্শ ২: ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা

কথায় বলে 'মানুষ অভ্যাসের দাস।' জীবনটাকে রুটিনমাফিক চালান। ঘুমাতে যাওয়ার এবং ঘুম থেকে ওঠার একটা যুক্তিসঙ্গত সময় নির্ধারণ করুন এবং সেটা নিয়মিত অনুসরণ করুন। এ ক্ষেত্রে আপনি যদি নতুন হন, তবে শুরুর দিকে সমস্যা হবে। কিন্তু প্রচেষ্টা চালিয়ে যান, দেখবেন অভ্যাস হয়ে গেছে। প্রতিদিন নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। শরীরচর্চা ঘুমের গুণগত মান বৃদ্ধি করে।

(ওয়াং হাইমান/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040