প্রথমে একটি সাংস্কৃতিক খবর শুনবো।
০১. যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের অভিজাত ব্যবসায়ী, বিশিষ্ট উদ্যোক্তা এবং চীনের ইউয়েইকাং অঞ্চল (কুয়াং চৌ, ফো সান, জাও ছিং, সেন চেন, তুং কুয়ান, হুই চৌ, জু হাই, চুং সান, চিয়াংমেন, হংকং ও ম্যাকাও নিয়ে গঠিত একটি শহর পর্যায়ের গ্রুপ)-র চলচ্চিত্র শিল্পী, বিনিয়োগকারী ও শিল্পপতি কুয়াং চৌয়ে চলচ্চিত্র 'চীন সম্রাজ্ঞী'র প্রস্তুতি ও টেকসই সাংস্কৃতিক শিল্প নিয়ে গভীর আলোচনা করেন।
'চীন সম্রাজ্ঞী' ১৮ শতাব্দীর একটি মার্কিন বাণিজ্যিক জাহাজ। জাহাজটি ১৭৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে যাত্রা শুরু করে চীনের কুয়াং চৌ শহরে পৌঁছায়। কুয়াং চৌয়ে চা, চীনামাটি, রেশম, হাতির দাঁতসহ বিভিন্ন দ্রব্য কেনার পর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যায়। এর মধ্য দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে সবচেয়ে প্রাচীনতম দেশের (চীন-মার্কিন) মধ্যে সরাসরি বাণিজ্য শুরু হয়।
চলচ্চিত্র 'চীন সম্রাজ্ঞী'-র নির্মাণ কাজ চলছে। চলচ্চিত্রটির প্রযোজক, হুয়া জি চিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির চেয়ারম্যান ফাং সেন সেন বলেন, 'চীন সম্রাজ্ঞী' চলচ্চিত্রে একটি সত্যিকারের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। তিনি আশা করেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক মহলের নেতারা যদি 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রতিপাদ্য হিসেবে চলচ্চিত্রটির ওপর গুরুত্বারোপ করে, তাহলে এটি বিশ্ববিখ্যাত একটি চলচ্চিত্র ব্র্যান্ডে পরিণত হবে।
সংলাপের পর 'চীন-মার্কিন সাংস্কৃতিক শিল্প ইউনিয়ন' ক্রিস্টাল বল চালু করে। এ সহযোগিতা হলো ফাং সেন সেন ও কুয়াং তুং টেলিভিশন সাংস্কৃতিক প্রমোশন অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক ছেন স্যুই-র যৌথ উদ্যোগে চালানো এক প্রস্তাব। এর লক্ষ্য হলো চীন-মার্কিন শিল্প তহবিল প্রতিষ্ঠা করা; যাতে আরো বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায়।
০২. এবার শুনুন আসতানা বিশ্বমেলা সম্পর্কিত একটি সাংস্কৃতিক প্রবন্ধ।
চলতি বছর আসতানা বিশ্বমেলা ১০ জুন কাজাখস্তানের রাজধানী আসতানায় শুরু হয়। চীন এ মেলায় অংশগ্রহণ করে। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এবারের মেলায় অংশগ্রহণের প্রথম চুক্তি করে চীন। মেলা প্রাঙ্গণে চীনের স্টল ও অন্যান্য কাজ শেষ হয় ২০ মে। চীনের ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের কর্মকর্তা, চীনা প্রদর্শনীর ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াং হং সম্প্রতি সিআরআইকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে জানান, চীনা প্রদর্শনীকেন্দ্র এবারের বিশ্বমেলায় 'চারটি প্রথম' রেকর্ড সৃষ্টি করে। মেলায় অংশ নেওয়া চুক্তি স্বাক্ষরকারী প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে চীন অন্যতম। প্রথম দেশ হিসেবে প্রদর্শনীকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু করে চীন। সবার আগে প্রদর্শনীকেন্দ্র নির্মাণ শেষ করে চীন। এরপরই পরীক্ষামূলক প্রদর্শন শুরু করে।
এবারের বিশ্বমেলায় চীনা প্রদর্শনীকেন্দ্রের প্রতিপাদ্য হলো, 'ভবিষ্যতের জ্বালানি, সবুজ রেশমপথ।' চীনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়ন বিভাগের বিশ্বমেলাবিষয়ক উপ-পরিচালক ফাং খে জানান, কাজাখস্তান 'এক অঞ্চল, এক পথ' বরাবর দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। এবারের বিশ্বমেলার স্বাগতিক দেশও কাজাখস্তান। তাই চীন এ মেলায় জ্বালানিসম্পদ ও রেশমপথকে যুক্ত করেছে। এতে ভবিষ্যত জ্বালানিসম্পদ নিয়ে চীনের চিন্তা প্রকাশিত হয়েছে। তা ছাড়া, জ্বালানিসম্পদ উন্নয়নে চীনের অবস্থানও ফুটে উঠেছে।
০৩. এবার জার্মানির হামবুর্গে 'পূর্ব ও পশ্চিমা সংস্কৃতির মিশ্রণ-সামুদ্রিক রেশমপথ' প্রদর্শনী শিরোনামে একটি সাংস্কৃতিক প্রবন্ধ শুনবেন।
সামুদ্রিক রেশমপথের ইতিহাসে অনেক প্রতিনিধিত্বমূলক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে। সামুদ্রিক রেশমপথে বাণিজ্যের সমৃদ্ধি স্বচোখে দেখার জন্য ৮ জুন কুয়াং তুং প্রদেশের জাদুঘর ও হামবুর্গ আন্তর্জাতিক মেরিটাইম জাদুঘরের যৌথ উদ্যোগে 'পূর্ব ও পশ্চিমা সংস্কৃতির মিশ্রণ—সামুদ্রিক রেশমপথ' প্রদর্শনী জার্মার্নির হামবুর্গে উদ্বোধন হয়। এতে জার্মান নাগরিকরা আরো ভালোভাবে কাছ থেকে রেশমপথের সংস্কৃতি ও চীন-জার্মান মৈত্রী অনুভব করতে পারেন।
চীন-জার্মান কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪৫তম বার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে 'পূর্ব ও পশ্চিমা সংস্কৃতির মিশ্রণ—সামুদ্রিক রেশপথ' প্রদর্শনী খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক আন্তর্জাতিক বিনিময় প্রদর্শনী। জার্মানিতে চীনের রাষ্ট্রদূত সি মিং দে, জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বোর্ডের উপ-সম্পাদক লিউ সু কুয়াং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত সি মিং দে বলেন, চলতি বছর হচ্ছে চীন-জার্মান কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪৫তম বার্ষিকী। চীন ও জার্মানির পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা দিন দিন উন্নীত হচ্ছে। দু'দেশের সহযোগিতার ফলাফলও অসাধারণ। তিনি বলেন,
'চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে জার্মানির ইতিবাচক সমর্থন রয়েছে। এক সপ্তাহ আগে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং আবার জার্মানি সফর করেন এবং জার্মান চ্যান্সেলার অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে মত বিনিময় করেন। বিশ্বায়ন, মুক্ত বাণিজ্য ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু'দেশের সহযোগিতা জোরদার করবে দু'দেশ'।
এবার প্রদর্শনীতে মোট ১১০টি বৈশিষ্ট্যযুক্ত পুরাকীর্তি প্রদর্শন করা হয়। এতে রয়েছে ১৩ থেকে ১৭ শতাব্দী, অর্থাত্ চীনের নান সুং রাজবংশের শেষ দিক থেকে ছিং রাজবংশ পর্যন্ত- এ পর্যায়ের ইতিহাসে প্রাচীন রেশমপথের উন্নয়ন সমন্ধে বিভিন্ন পুরাকীর্তি।
প্রদর্শনী দেখার পর একজন দর্শক সাংবাদিককে বলেন, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে তিনি আরো স্পষ্টভাবে সামুদ্রিক রেশমপথের ইতিহাস জানতে পারেন। চীনা জনগণের পরিশ্রমী ও বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব তার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। তিনি বলেন,
'আমার নাতি ও নাতনী চীনে গিয়েছিলেন। চীন আমাদের ভালো লাগে। চীনা জনগণ সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ। তারা জাপানিদের চেয়ে ভিন্ন, আমার মনে হয় জাপানি জনগণের সঙ্গে আমার একটু দূরত্ব বজায় থাকে'।
চা সংস্কৃতি প্রদর্শনী এলাকায় প্রাচীনকালে রেশমপথে বিনিময় করা চীনামাটির দ্রব্য প্রদর্শীত হয়, যা খুবই মূল্যবান।
এবার প্রদর্শনীর এক্সিবিশন কিউরেটর জানান, প্রদর্শনীতে দর্শকদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি জানানো ছাড়াও, চীন-জার্মান ভবিষ্যত অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক উন্নয়নও দেখা যায়। তিনি বলেন, 'হামবুর্গ জার্মানির বৃহত্তম বন্দর শহর। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সশিপমেন্ট কেন্দ্রও। চীনের সাংহাই হামবুর্গের বন্ধুত্বপূর্ণ শহর। দু'শহরের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এবারের এ প্রদর্শনী ছাড়াও হামবুর্গসহ অনেক জার্মান শহর চীনের সঙ্গে বাণিজ্য থেকে আরো উপকৃত হবে'।
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদের জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com
চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাইচিয়ান। (জিনিয়া/টুটুল)