সিনইয়াং শহরের হুয়াইবিন জেলা হুয়াই নদীর প্রথম বন্দর। এটি সিনইয়াং শহরের কেন্দ্র থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত জেলা। জেলাটি দক্ষিণ ও উত্তর চীনের সংস্কৃতিসমৃদ্ধ। বিগত কয়েক বছরে জেলায় নতুন কৃষিশিল্প গড়ে উঠেছে। জেলার কৃষিশিল্প দ্রুত উন্নত হচ্ছে।
চীনা (Chinese milk vetch) দুধ ছোলা এক ধরনের চীনা ঔষধ। চীনে এটি 'সুখের ফুল' নামে পরিচিত। প্রতিবছরের এপ্রিলে চীনা দুধ ছোলা প্রস্ফুটিত হয়। এপ্রিল হল জেলাটির কৃষকদের সবচেয়ে ব্যস্ত মাস। চীনা দুধ ছোলা খুবই সুন্দর। সেজন্য এ ধরনের ফুলের চাষের মাধ্যমে পর্যটনশিল্পও উপকৃত হয়।
চীনা দুধ ছোলা'র প্রতিটি অংশই কাজের। চীনা দুধ ছোলার ফুল ও বীজ চীনা ঐতিহ্যবাহী ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো ব্যাপকভাবে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে রফতানিও হয়। এর শিকড়, কান্ড ও পাতা প্রাকৃতিক সার হিসেবে কাজ করে। চীনা দুধ ছোলা প্রতিবছরের সেপ্টেম্বরে বপন করা হয় এবং এপ্রিলে তার ফসল তোলা হয়। এটি চাষ করা সহজ। তাই, কৃষকরা লাভবান হয়।
হুয়াইবিন জেলার আরেকটি বৈশিষ্ট্য এর সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। ২০১০ সালে জেলাটিতে সংস্কৃতিকেন্দ্র নির্মিত হয়। কেন্দ্রে সংস্কৃতি মহাচত্বর, গ্রন্থাগার ও ছোট থিয়েটার রয়েছে। কেন্দ্রটির কাছাকাছি হুয়াইহো পার্কে গড়ে উঠেছে স্থানীয়দের জন্য খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা।
সংস্কৃতিকেন্দ্রের গন্থাগারে বই রয়েছে প্রায় এক লাখ। এখানে অনলাইরনে বই পড়ার সুবিধা আছে, আছে শিশুদের জন্য পাঠকক্ষ। এ ছাড়াও, জেলাটির বিভিন্ন গ্রামে গ্রন্থাগারের শাখা আছে, যেখান থেকে স্থানীয়রা বই ধার নিতে পারেন।
হুয়াইবিন জেলায় এক ধরনের বিশেষ গম উত্পন্ন হয়। তবে এর চাষ সহজ নয়। কেবল হুয়াইবিন জেলার পরিবেশ ও জলবায়ু এ ধরনের গম চাষের উপযোগী।
এ বিশেষ গমের ময়দা দিয়ে কেক, বিস্কুট, ডেজার্ট তৈরি করা যায়। এ ছাড়াও, এ ধরনের গম হচ্ছে চীনা ঐতিহ্যবাহী মদ তৈরি করার প্রধান উপকরণ। সেজন্য চীনের বিভিন্ন বিখ্যাত মদ ও ডেজার্ট প্রতিষ্ঠান হুয়াইবিন জেলায় কারখানা গড়ে তুলেছে। এ বিশেষ গমের চাষ সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলোর দারিদ্র্যবিমোচনে রেখেছে ইতিবাচক ভূমিকা।
হুয়াইবিন জেলার ইনমা বন্দর হুয়াইহো নদীর উজানে প্রথম ও বৃহত্তম বন্দর। হুয়াইহো অববাহিকায় প্রথম বন্দরজেলা হিসেবে হুয়াইবিন জেলার বন্দর-অর্থনীতি দ্রুত উন্নত হচ্ছে। তবে ইনমা বন্দর প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। তাই নতুন বন্দর 'হুয়াইবিন বন্দর' নির্মিত হচ্ছে।
হুয়াইবিন বন্দরের আয়তন প্রায় ৮৫.৭ লাখ বর্গমিটার। বন্দরটির সাথে সড়ক, নৌপথ, ও রেলপথ সংযুক্ত হবে। বন্দরটি ২০১৯ সালে চালু হবে। হুয়াইবিন বন্দরকে কেন্দ্র করে হুয়াইবিন অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণকাজ ২০৩০ সালে সম্পন্ন হবে। এ বন্দরের মাধ্যমে রাশিয়াসহ 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের সাথে চীনের বাণিজ্যিক যোগাযোগ আরও উন্নত হবে।
সিনইয়াং শহরের শাংছেং জেলা চীনের ১০০টি শ্রেষ্ঠ জেলার অন্যতম, যেখানে প্রাণভরে শ্বাস নেওয়া যায়। এ জেলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। জেলাটিতে প্রায় ৩০০ পাহাড় আছে। এর মধ্যে এক হাজার মিটারেরও বেশি উঁচু পাহাড় ১৬টি। জিনকাংথাই পাহাড়ের শৃঙ্গ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫৮৪ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। জেলাটিতে অনেক বৈশিষ্ট্যময় গ্রাম আছে।
লিলুওছেং গ্রাম সেগুলোর একটি। গ্রামটি ২০১৩ সাল থেকে রূপান্তরিত হতে শুরু করে এবং মাত্র দুই বছরের মধ্যে 'জাতীয় পর্যায়ের সুন্দর গ্রাম'-এর মর্যাদা লাভ করে। গ্রামটিতে দৃশ্য সুন্দর, বিভিন্ন ধরনের ফুল আছে। চারটি ঋতুতে বিভিন্ন সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা হয়। সড়কসহ অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে বর্তমানে বহু পর্যটক গ্রামটি ভ্রমণে আসছেন।
মাওচিয়ান নামের এক ধরনের চা শাংছেং জেলার সিহো গ্রামের বিশিষ্টতা। ১০২ বছর আগে সিনইয়াং 'মাওচিয়ান পানামা আন্তর্জাতিক মেলা'য় স্বর্ণপদক লাভ করেছিল। বর্তমানে সিনইয়াং মাওচিয়ান'র তৈরি শিল্প চীনের জাতীয় পর্যায়ের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। এটি সিহো গ্রামবাসীর অহংকার।
বর্তমানে সিহো গ্রামে সমবায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কৃষকরা একসঙ্গে চা রোপন, উত্পাদন ও বিক্রী করেন। সিনইয়াং মাওচিয়ান এখন চীনের একটি বিখ্যাত্ ব্রান্ডে পরিণত হয়েছে।
কুয়াংশান জেলায় ডাউন জ্যাকেট উত্পাদিত হয়। এখানকার উত্পাদিত পণ্য মূলত ই-কমার্সের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় হয়। জানা গেছে, সারা চীনে প্রতি তিনটি জ্যাকেটের মধ্যে একটি কুয়াংশান জেলায় উত্পাদিত হয়। জেলার লোকসংখ্যা ৮ লাখ। এর মধ্যে ২ লাখ মানুষ ডাউন জ্যাকেট উত্পাদন শিল্পে কাজ করেন। ডাউন জ্যাকেট উত্পাদন থেকে আয়ের পরিমাণ জেলাটির মোট জিডিপি'র আট ভাগের এক ভাগ। ডাউন জ্যাকেট উত্পাদন শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। জেলাটিও দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। জেলাটি বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিজস্ব পণ্য চীনের অন্যান্য অঞ্চল ছাড়াও, আর্জেন্টিনা, চিলি, মেক্সিকো, রাশিয়া, কানাডা, নরওয়ে ও অস্ট্রেলিয়াসহ ৫০টি দেশ ও অঞ্চলে রফতানি করে। ২০১৫ সালে কুয়াংশান জেলাকে চীনের প্রথম পর্যায়ের 'ই-কমার্স প্রযুক্তিগত গ্রাম'-এর নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সিনইয়াং শহরের ফিংছিয়াও এলাকার হাওথাং গ্রাম ২০১১ সাল থেকে নতুনভাবে সাজতে শুরু করে। ২০১৩ সালে এটি 'চীনের সুন্দর ও বাসযোগ্য গ্রাম'-এর মর্যাদা লাভ করে। ২০১৭ সালের ছিংমিং উত্সবের সময় মাত্র ২ হাজার লোকসংখ্যার ছোট হাওথাং গ্রামে ৩০ হাজারেরও বেশি পর্যটক এসেছিলেন।
হাওথাং গ্রামটিতে অবকাঠামো উন্নয়নের সময় পরিবেশ সুরক্ষার ওপর নজর রাখা হয়। গ্রামটিতে পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নত করেছে।
সিনইয়াং শহরের ফিংছিয়াও এলাকার সিনচি গ্রাম সিনইয়াংয়ের দশটি শ্রেষ্ঠ সুন্দর গ্রামের একটি। ২০১৪ সালে সুন্দর গ্রাম নির্মাণের ধারায় এখানকার ঘরবাড়িগুলো নতুন করে সাজানো হয়। গ্রামে গ্রন্থাগার, নারীকেন্দ্র, শিশু বিনোদন পার্কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে উঠেছে।